• শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

নেদারল্যান্ডসের আদালতে পাকিস্তানি ক্রিকেটারের বিচার শুরু

প্রকাশ:  ৩০ আগস্ট ২০২৩, ০১:৪৭ | আপডেট : ৩১ আগস্ট ২০২৩, ০১:৪৭
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

ইসলাম-বিরোধী এক ডাচ রাজনীতিবিদকে হত্যা করতে উসকানি দেওয়ার অভিযোগে নেদারল্যান্ডসের একটি আদালতে পাকিস্তান জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার খালিদ লতিফের বিচার শুরু হয়েছে৷

ইউরোপের দেশ নেদারল্যান্ডসের সাথে পাকিস্তানের আসামি হস্তান্তরের কোনো চুক্তি নেই৷ তাই লতিফকে নেদারল্যান্ডসে নেয়া সম্ভব হয়নি৷ তার অনুপস্থিতিতেই মঙ্গলবার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়৷

আইনজীবীরা জানান, নেদারল্যান্ডসের রাজনীতিবিদ গির্ট উইল্ডার্স ইসলাম ধর্মের নবি মোহাম্মদ (সা.)-এর কার্টুন আঁকার প্রতিযোগিতা আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছিলেন৷ ইসলাম ধর্মে নবির ছবি আঁকা নিষিদ্ধ৷ বেশিরভাগ মুসলমান এমন কার্যক্রমকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে গর্হিত বলে মনে করে৷

প্রতিযোগিতা আয়োজনের ঘোষণার পর নানা জায়গা থেকে হুমকি আসতে থাকলে আয়োজন থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেন গির্ট উইল্ডার্স৷

এদিকে কার্টুন আঁকার প্রতিযোগিতা আয়োজনের ঘোষণা দেওয়ার পর ২০১৮ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক ভিডিওতে গির্ট উইল্ডার্সকে হত্যা করার আহ্বান জানান পাকিস্তানী ক্রিকেটার খালিদ লতিফ৷ সেইসাথে এই রাজনীতিবিদের মাথার দাম ২১ হাজার ডলার ঘোষণা করেন লতিফ৷

পিউ রিসার্চের ২০১৫ সালের এক জরিপ অনুযায়ী ইউরোপে সাড়ে ৭৪ শতাংশ জনগোষ্ঠী খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী৷ তারপর থাকা সবচেয়ে বেশি জনগোষ্ঠী ১৮ দশমিক ৮ শতাংশের কোনো ধর্ম নেই৷ তৃতীয় অবস্থানে থাকা মুসলিমরা প্রায় ছয় শতাংশ। এছাড়াও ইহুদি, হিন্দু, বৌদ্ধ ও অন্যান্য ধর্মের জনগোষ্ঠী এক শতাংশের কম করে৷

পিউ রিসার্চের ২০১৮ সালের জরিপ অনুযায়ী, পশ্চিম ইউরোপের অনেক দেশেই অর্ধেকের বেশি মানুষ ধর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন৷ তবে বেছে নিতে হলে কোনটি বেছে নেবেন- এমন প্রশ্নে জার্মানির ৭১ শতাংশ ও ফ্রান্সের ৬৪ শতাংশ খ্রিস্ট ধর্মের কথা বলেছেন৷ আরেক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০৫০ সাল নাগাদ এই অঞ্চলে খিস্টান ৬৫ শতাংশ, ‘ধর্মহীন’ ২৩ দশমিক তিন শতাংশ ও মুসলিমদের হার হবে ১০ দশমিক দুই শতাংশ৷ বাকিদের হার অনেকটা অপরিবর্তিতই থাকবে৷

পিউ রিসার্চের ২০১৮ সালের জরিপ অনুযায়ী,পশ্চিম ইউরোপের বেশিরভাগ মানুষ সরকারি নীতি থেকে ধর্মকে দূরে রাখার পক্ষপাতী৷ সুইডেনে ৯০ শতাংশ, বেলজিয়ামে ৭২ শতাংশ মানুষই এমনটা মনে করেন৷ অন্যদিকে সুইজারল্যান্ডের ৪৫ ভাগ আর যুক্তরাজ্যের ৩৮ ভাগ মনে করেন সরকারের নীতিতে ধর্মকে সমর্থন দেয়া উচিত৷ ফ্রান্স, জার্মানিসহ ইইউভুক্ত বেশিরভাগ দেশে অসাম্প্রদায়িকতা এবং নাগরিকদের স্বাধীনভাবে ধর্ম পালনের সাংবিধানিক স্বীকৃতি আছে৷

পিউ রিসার্চের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ধর্ম পালনে সরকারের হয়রানিতে মধ্যপ্রাচ্য-উত্তর আফ্রিকার পরই রয়েছে ইউরোপ৷ এই অঞ্চলে ৯৮ শতাংশ দেশে ধর্মীয় গোষ্ঠীর উপর এবং ৯১ শতাংশ দেশে উপাসনায় হস্তক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে৷ বিভিন্ন আইনের কারণে ধর্মবিধি পালনে মানুষ সমস্যায় পড়েন৷ যেমন, স্লোভেনিয়ায় অচেতন ছাড়া প্রাণী হত্যা নিষিদ্ধ করায় মুসলিম ও ইহুদিরদের হালাল ও কোশার বিধি মানা কঠিন হয়ে পড়ে৷

অনেক দেশেই জনসমক্ষে বা কর্মক্ষেত্রে ধর্মীয় পোশাকে নিষেধাজ্ঞা আছে৷ যেমন, অস্ট্রিয়ায় জনসমক্ষে মুখমণ্ডল আবৃত রাখা এবং স্কুলে ১০ বছরের কম বয়সিদের স্কার্ফ পরা নিষেধ৷ ফ্রান্সে জনসেবা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের স্কার্ফ, টুপি, পাগড়ি বা ক্রস পরিধান নিষিদ্ধ৷ ২০১৫ সালে জার্মানির আদালত বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের স্কার্ফ পরা নিষিদ্ধ করলেও তা বাস্তবায়ন রাজ্যগুলোর উপর ছেড়ে দিয়েছে৷

২০১৯ সালে ইউরোপে ১৭টি দেশে ধর্মীয় গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ক্ষমতা প্রয়োগ করেছে সরকার, আগের বছর এমন দেশের সংখ্যা ছিল ১৯৷ এক্ষেত্রে সবার উপরে ছিল রাশিয়া৷ গত বছরের নভেম্বরে ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ধর্মীয় উগ্রবাদের অভিযোগে ২০১৭ সাল থেকে ৪৩টি মসজিদ বন্ধ করেছে ফ্রান্স৷ কোভিড-১৯-এর বিধিনিষেধের কারণে ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে দেশটির ক্যাথলিক চার্চ কর্তৃপক্ষ৷

সাম্প্রতিক বছরে ইউরোপের দেশে দেশে উগ্রবাদের বহিঃপ্রকাশ দেখা গেছে৷ ২০২০ সালে ফ্রান্সে জঙ্গিবাদ সমর্থক এক মুসলিম তরুণ এক কলেজ শিক্ষককে হত্যা করেন৷ তার আগে টিউনিসিয়ার এক অভিবাসী চার্চের ভিতরে তিন খ্রিস্টানকে হত্যা করেন৷ ২০১৯ সালে জার্মানিতে সিনাগগে হামলায় মারা যান দুইজন৷ সম্প্রতি সুইডেনে উগ্র ডানপন্থি দলের নেতা রাসমুস পালুদান সুইডেনে পবিত্র কোরানের কপি পোড়ানোর ঘোষণা দিলে ক্ষুব্ধ হন দেশটির মুসলিমরা৷

উগ্রতা আর সাম্প্রদায়িকতার বাইরে ইউরোপে সম্প্রীতির অনেক উদাহরণ আছে৷ ইহুদি এবং মুসলমানদের একত্রিত করতে জার্মানির মারবুর্গ শহরে একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করেছেন দুই সম্প্রদায়ের মানুষ৷ বার্লিনে মুসলমান, খ্রিস্টান ও ইহুদিদের এক ছাদের নীচে প্রার্থনার জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে ‘হাউস অব ওয়ান’৷ সম্প্রতি জার্মানির বুন্ডেসলিগার ম্যাচ চলার সময় এক ফুটবলারের ইফতারের জন্য কিছুক্ষণ খেলা বন্ধ রাখা হয় - যা আগে কখনও হয়নি৷

আদালতে উপস্থিত গির্ট উইল্ডার্স বলেন, ‘‘হিংস্রভাবে মানুষ হত্যা করাই তার (লতিফ) লক্ষ্য ছিল না, বরং, একজন ডাচ প্রতিনিধিকে তিনি চুপ করিয়ে দিতে চেয়েছিলেন৷’’

আদালতে লতিফের ১২ বছরের সাজার আবেদন করেছেন আইনজীবীরা৷

কার্টুন প্রতিযোগিতা থামাতে কাউকে হত্যা করেতে বলা এবং প্রতিযোগিতার আয়োজককে হত্যার জন্য অর্থমূল্য ঘোষণা করার অপরাধের কঠোর সাজা হওয়া উচিত বলে মনে করেন তারা৷

এ সময় ক্রিকেটার লতিফ বা তার পক্ষ থেকে কোনো প্রতিনিধি আদালতে উপস্থিত ছিলেন না৷

আগামী ১১ সেপ্টেম্বর মামালার রায় ঘোষণা হতে পারে৷

উল্লেখ্য ২০০৮ সালে পাকিস্তান জাতীয় দলে ডাক পান ডান হাতি এই ক্রিকেটার৷ পরিসংখ্যান বলছে, জাতীয় দলের হয়ে তিনি মোট ৫ ওয়ানডে এবং ১৩ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে অংশ নেন৷ এরপর ২০১৭ সালে স্পট ফিক্সিংয়ের দায়ে পাঁচ বছরের জন্য ক্রিকেটে নিষিদ্ধ হন তিনি৷ সম্প্রতি তার এই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হয়েছে৷ বর্তমানে তিনি করাচির একটি ক্লাবের হয়ে ক্রিকেট খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন৷

ব্লাস্ফেমি,ক্রিকেটার
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close