দিল্লিতে সাংবাদিকদের ঘরে অভিযান পরিচালনা
![](/assets/news_photos/2023/10/03/1696336131-9a7d78aa030675f7171b5768756e522418-36-32--image-1696337331.jpg)
ভারতের সংবাদ পোর্টাল নিউজক্লিকের কয়েকজন সাংবাদিকের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে দিল্লি পুলিশ। এতে করে প্রাথমিকভাবে দুজন সাংবাদিককে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
সম্পর্কিত খবর
পোর্টালটিতে সরকারের বিভিন্ন নীতি এবং কাজকর্ম নিয়ে নিয়মিত প্রশ্ন তোলা হয় ও ওখানে যারা নিয়মিত লেখেন, তাদের একটা বড় অংশই বিজেপি সরকারের সমালোচক বলে পরিচিত। আগস্ট মাসে নিউ ইয়র্ক টাইমস এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে লিখেছিল, অন্য আরো অনেক গণমাধ্যমের সাথে ‘নিউজক্লিক’-তে চীনা অর্থায়ন হয় ঘুরপথে।
তার পরই ভারত সরকার বিষয়টি নিয়ে সরব হয়ে ওঠে ।
দিল্লি পুলিশের একটি সূত্র উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, তাদের স্পেশাল সেল একটি নতুন মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে।
আবার ভারতীয় টিভি চ্যানেল এনডিটিভি বলছে, নিউ ইয়র্ক টাইমসের ওই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পর ১৭ অগাস্ট সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দায়ের করেছিল পুলিশ। মঙ্গলবারের সেই মামলার সূত্রেই তল্লাশি অভিযান চালানো হয়ে থাকে।
কিছুদিন আগে এই নিউজ পোর্টালের বিরুদ্ধে অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত শাখা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি ও আয়কর বিভাগ পৃথক মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছিল। সেই মামলার তদন্তে নিউজক্লিকের দপ্তরে তল্লাশিও হয়েছিল।সেই মামলায় গ্রেপ্তারির বিরুদ্ধে দিল্লি হাইকোর্টের নির্দেশ রয়েছে।
সকাল থেকে শুরু অভিযান সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, ৩০টিরও বেশি জায়গায় তল্লাশি অভিযান চলছে।
ভারতীয় গণমাধ্যমের পরিচিত মুখ অভিসার শর্মা মঙ্গলবার সকালে এক্সে জানিয়েছেন দিল্লি পুলিশ তার বাড়িতে পৌঁছেছে এবং তার ফোন এবং ল্যাপটপ নিয়ে যাচ্ছে।
এরপর আরেক সাংবাদিক ভাষা সিং এক্সে লেখেন, ‘এই ফোন থেকে শেষ টুইট। দিল্লি পুলিশ আমার ফোন বাজেয়াপ্ত করছে।’
নিউজক্লিকের সম্পাদক প্রবীর পুরকায়স্থকে তার বাড়ি থেকে দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানাচ্ছে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম।
সংস্থাটির সাংবাদিক ছাড়াও এমন বেশ কয়েকজনের বাড়িতেও তল্লাশি চলছে, যারা নিউজক্লিকের কর্মী নন, কিন্তু নিয়মিত প্রবন্ধ লিখে থাকেন সেখানে।
নিয়মিত প্রবন্ধকার, যাদের বাড়িতে তল্লাশি হচ্ছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন সমাজকর্মী তিস্তা সিতলওয়াড এবং বিশিষ্ট সাংবাদিক পরঞ্জয় গুহ ঠাকুরতা, ইতিহাসবিদ সুহেল হাসমি। মিজ সিতলওয়াডকে তার মুম্বাইয়ের বাড়িতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে আরেকটি সংবাদ পোর্টাল দ্য ওয়্যার।
অত্যন্ত উদ্বেগজনক : প্রেস ক্লাব অব ইণ্ডিয়া
নিউজক্লিকের সাংবাদিক এবং লেখকদের বাড়িতে অভিযান সম্পর্কে সংস্থাটির কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি। কিন্তু নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে তাদের সংস্থায় চীনা অর্থায়নের অভিযোগ ওঠার পরে সম্পাদক প্রবীর পুরকায়স্থ ইণ্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছিলেন, ‘এগুলো নতুন কোনো অভিযোগ নয়। আগেও এই অভিযোগ উঠেছে। আমরা সঠিক জায়গায়, অর্থাৎ আদালতেই জবাব দেব। কারণ বিষয়টি বিচারাধীন।’
মঙ্গলবারের অভিযান নিয়ে প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়া বলেছে, ‘নিউজক্লিকের সাথে যুক্ত সাংবাদিক এবং লেখকদের বাড়িতে অভিযান অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমরা বিষয়টির দিকে নজর রাখছি ও পরবর্তী সময়ে বিস্তারিত মন্তব্য করা হবে।’
তারা একটি হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করেছে, ‘ডিফেণ্ড মিডিয়া ফ্রিডম’।
নিউজক্লিকের সাংবাদিকদের এই অভিযানের সমালোচনা করে বিবৃতি দিয়েছে নারী সাংবাদিকদের সংগঠন নেটওয়ার্ক অব উইমেন ইন মিডিয়া, ইন্ডিয়া। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নিউজক্লিক জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এবং বিজ্ঞানী, ভাষ্যকার এবং কলামিস্টদের বাড়িতে দিল্লি পুলিশের অভিযানের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে এনডব্লিউএমআই।
সংবাদ পোর্টালের সাংবাদিকদের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান নিয়ে সরগরম রাজনৈতিক মহলও। বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোটের পক্ষ থেকে বিজেপি সরকারের গণমাধ্যমের ওপরে সাম্প্রতিক আক্রমণের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা বলেছে, ‘আমরা গণমাধ্যম এবং সংবিধানে বর্ণিত মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে থাকছি। গত ৯ বছরে বিজেপি সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে তদন্ত সংস্থাগুলোকে দিয়ে গণমাধ্যমকে দমন এবং হয়রানি করেছে। উদাহরণস্বরূপ, বিবিসি, নিউজলন্ড্রি, দৈনিক ভাস্কর, ভারত সংবাদ, কাশ্মীরওয়ালা ও দ্য ওয়্যারের মতো সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
জোটের পক্ষ থেকে বিবৃতি দেওয়া ছাড়াও পৃথকভাবে কংগ্রেসসহ বিরোধী দলীয় নেতা-নেত্রীরা নিউজক্লিকের সাংবাদিকদের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন।
ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর উড়িষ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমার কোন জবাবদিহি করার দরকার নেই। যদি কেউ অন্যায় করে থাকেন তাহলে তদন্ত সংস্থাগুলো তাদের কাজ করবে। এই রকম তো কোথাও লেখা নেই যে আপনার কাছে যদি অবৈধভাবে অর্থ এসে থাকে, কোনো আপত্তিকর কিছু যদি থাকে তাহলেও তদন্ত সংস্থাগুলো কিছু করতে পারবে না!’
নিউ ইয়র্ক টাইমসের রিপোর্ট এই বছর অগাস্ট মাসের পাঁচ তারিখে নিউ ইয়র্ক টাইমস একটি দীর্ঘ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেটি আপডেট করা হয়েছে ১০ তারিখ। সেখানে লেখা হয়, চীনের পক্ষে প্রচারণা চালানোর জন্য বিপুল অর্থ খরচ করা হয় বিভিন্ন মাধ্যমে। এগুলোর মধ্যে যেমন রয়েছে বিক্ষোভ-আন্দোলনকে অর্থনৈতিকভাবে সহায়তা দেওয়া, তেমনই রয়েছে গণমাধ্যমে অর্থায়ন।
তারা লিখেছে, ‘এর মধ্যমণি হলেন একজন ক্যারিশ্মাটিক মার্কিন মিলিয়নিয়ার, নেভিল রয় সিংঘম।’
সিংঘম আদতে শ্রীলঙ্কান বংশোদ্ভূত, তবে তার বাবার সময় থেকেই তারা যুক্তরাষ্ট্রনিবাসী। সিংঘম সাংহাইয়ে তার দপ্তর থেকে কাজ করেন বলে লিখেছে নিউ ইয়র্ক টাইমস। তার বাবা আর্চিবল্ড সিংঘম একজন পরিচিত বামপন্থী বুদ্ধিজীবী।
তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং জাল সংস্থাগুলোর মাধ্যমে সিংঘম চীনা সরকারের মিডিয়া ব্যবস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে থাকেন এবং বিশ্বব্যাপী তাদের প্রচার ব্যবস্থার অর্থায়ন করেন।
নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, ‘ম্যাসাচুসেটসের একটি থিংকট্যাংক থেকে ম্যানহাটানের একটি সভাক্ষেত্র, দক্ষিণ আফ্রিকার একটি রাজনৈতিক দল থেকে ভারত আর ব্রাজিলে সংবাদ সংস্থায় সিংঘমের সংস্থাগুলোর মাধ্যমে কিভাবে কোটি কোটি মার্কিন ডলার দেওয়া হয়েছে তা খুঁজে বের করা গেছে।