• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

গাজার যুদ্ধ কি লেবাননেও ছড়াবে?

প্রকাশ:  ০৫ জানুয়ারি ২০২৪, ১৮:১০
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

লেবাননের রাজধানী বৈরুতে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর উপ-প্রধান সালেহ আল-আরৌরিকে হত্যার ঘটনায় গাজার যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। যুদ্ধ পুরো মধ্যপ্রাচ্যে বড় আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

হামাস নেতার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার কথা বলেছেন লেবাননের শক্তিশালী মিলিশিয়া গোষ্ঠীর নেতা।

বৈরুতের ৫৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি বলছেন, “লেবাননের রাজধানীতে নিরাপত্তা বিষয়টিই আপেক্ষিক। এই সপ্তাহে যে আক্রমণ হয়েছে, তার আগে থেকেই ইসরায়েলের বিমান মাথার ওপর ঘোরাফেরা করেছে। মঙ্গলবারের আক্রমণ অনেক জোরালো মনে হয়েছে, কারণ, সেটা আবাসিক এলাকায় হয়েছে।”

এই ব্যক্তি যে ঘটনার কথা বলছেন, সেটি একটি ড্রোন আক্রমণ। যার ফলে হামাসের শীর্ষস্থানীয় নেতা সালেহ আল-আরৌরি মারা গেছেন। ইসরায়েল এখনো সরাসরি এই আক্রমণের দায় স্বীকার করেনি। তারা বলেছে, “হামাস নেতারা যেখানেই থাকুক না কেন, তাদের মারা হবে।”

৩০ বছর বয়সী বৈরুতের আরেক শিক্ষক বলছেন, “এই মুহূর্তে আমরা নিরাপদ আছি। কিন্তু পরের মুহূর্তে যে বোমা পড়বে না, তার কোনো গ্যারান্টি নেই।”

বৈরুতের যে বাসিন্দাদের সঙ্গে ডয়চে ভেলে কথা বলেছে, তারা কেউই চান না, হামাসের মিত্র লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াক। নিরাপত্তার স্বার্থে তারা সকলেই নিজের নাম গোপন রেখেছেন। তাদের বক্তব্য, তারা আঞ্চলিক যুদ্ধের পক্ষে নন।

বৈরুতে ৪৫ বছর বয়সী এক খুচরা ব্যবসায়ী বলেন, “হিজবুল্লাহ ডেটারেন্ট হিসাবে কাজ করে। যার ফলে ইসরায়েল লেবাননে ঢুকতে পারে না। হিজবুল্লাহ আমাদের সুরক্ষা দিতে পারে। তবে কেউই যুদ্ধ চায় না। আমি চাই হিজবুল্লাহ আরও সতর্ক থাকুক।”

হিজবুল্লাহ নেতার বক্তব্য

হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহের ভাষণের দিকে সকলের নজর পড়েছে। বুধবার তিনি জানিয়েছিলেন, ইসরায়েল একটা ভয়ঙ্কর ও বিপজ্জনক অপরাধ করেছে।

নাসরাল্লাহের মন্তব্যের ব্যাখ্যা করা কঠিন। হিজবুল্লাহ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন এমন পর্যবেক্ষকরা বলছেন, “আগের ভাষণের তুলনায় তার কথার ভঙ্গি ছিল খুবই আগ্রাসী।”

আবার লেবাননের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদাল্লাহ হাবিব মনে করেন, “হিজবুল্লাহ এখনই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবে না। আমরা আশা করতে পারি, হিজবুল্লাহ নিজেদের কোনো বড় যুদ্ধে জড়াবে না। এর পেছনে প্রচুর কারণ হয়েছে। লেবাননে কেউই এখন যুদ্ধ চাইছে না।”

২০০৬ সালে ইসরায়েলের সেনা ও হিজবুল্লাহ ৩৪ দিন ধরে লড়েছিল। প্রচুর ইসরায়েলি সেনাকে হিজবুল্লাহ অপহরণ করেছিল। লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যূত হয়েছিলেন। এক হাজার মানুষ মারা যান। লেবাননের পরিকাঠামো খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের মধ্যে দিয়ে লড়াই শেষ হয়।

২০০৬-এর পর থেকে হিজবুল্লাহ তাদের অস্ত্রভাণ্ডার বহুগুণ বাড়িয়েছে। তারা অত্যাধুনিক অস্ত্র জোগাড় করেছে।

মার্কিন থিংক ট্যাংক ব্রুকিংস ইনস্টিটিউটের পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ জেফরি ফেল্টম্যান বলেছেন, “হিজবুল্লাহর কাছে এক লাখ ৫০ হাজার রকেট আছে। এ জন্যই ইসরায়েল ইরানের ওপর সরাসরি আক্রমণ করতে পারে না। ইরান আক্রান্ত হলে বড় ধরনের প্রত্যাঘাত করার ক্ষমতা তাদের আছে।”

হিজবুল্লাহর ‘রেড লাইন’

২০০৬ সালের পর থেকে লেবাননের উত্তর সীমান্তে মাঝেমধ্যে রকেট আক্রমণ হয়। কারণ দুই পক্ষই “টিট ফর ট্যাট” নীতিতে চলছে।

বেশ কয়েক মাস আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু হামাস নেতা আল-আরৌরিকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন। হমাসকে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মানি, ইসরায়েল জঙ্গি সংগঠন বলে ঘোষণা করেছে।

এর প্রতিক্রিয়ায় হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ বলেছিলেন, “এই ধরনের হত্যাকে রেড লাইন হিসেবেই দেখা হবে।” সীমান্তের একশ কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে হামাসের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত আবাসিক এলাকায় যেভাবে আল-আরৌরিকে মারা হয়েছে, তাতে ওই রেড লাইন অতিক্রম করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

যুক্তরাজ্যের কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আমাল সাদ বলেছেন, “সম্প্রতি যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে ডেটারেন্স সংক্রান্ত ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে।”

তিনি মনে করেন, “সেই ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করতে হিজবুল্লাহকে দ্রুত কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে। তারা ইসরায়েলকে খুব বেশি জায়গা দিতে পারবে না। কারণ, ইতিমধ্যেই ইসরায়েল ঘোষণা করেছে, তারা হামাস নেতাদের যেখানে সম্ভব মারবে।”

যদিও ইসরায়েল বলেছে, কাতার বা তুরস্কে গিয়েও তারা এই কাজ করতে পারে, তবে এটা হবে বলে মনে হয় না। কাতার পণবন্দিদের মুক্ত করার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। আর তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক আর খারাপ হোক, তা ইসরায়েল চাইবে না। তারা খুব সম্ভবত লেবাননেই এই কাজ করতে চাইবে।

আমাল সাদ বলেছেন, “হিজবুল্লাহ খুব ভালো করে জানে, তারা যদি প্রত্যাঘাত না করে, তাহলে ইসরায়েল লেবাননে আরেকটি “ফিলিস্তিনি টার্গেটে” আঘাত করবে। দ্বিতীয়ত, তারা এটাও মনে করতে পারে, হিজবুল্লাহ দুর্বল হয়ে গেছে। হিজবুল্লাহকে খুব সতর্ক হয়ে এমনভবে আক্রমণ করতে হবে, যার ফলে ইসরায়েল যেন খুব বেশি বিব্রত না হয় এবং আরো বেশি করে প্রত্যাঘাত করে।”

লেবাননের সংবাদপত্রের সম্পাদক অ্যান্টনি সামরানি সম্পাদকীয় নিবন্ধে লিখেছেন, “গত ৮ অক্টোবরের পর থেকে হিজবুল্লাহ এ রকম অবস্থায় আর পড়েনি। তারা কিছু না করলে ইসরায়েল আরও বেশি করে আক্রমণ করতে পারে। আর তারা যদি খুব জোরালো প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে।

ইসরায়েল,যুদ্ধ,ফিলিস্তিন,লেবানন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close