• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

লেবাননেই কেন আশ্রয় নেন ফিলিস্তিনি নেতা ও উদ্বাস্তুরা?

প্রকাশ:  ১৪ জানুয়ারি ২০২৪, ২৩:৩০
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

সম্প্রতি লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ইসরায়েলের ড্রোন হামলায় নিহত হামাসের উপপ্রধান সালেহ আল-আরোরিকে সমাহিত করা হয় লেবাননের রাজধানী বৈরুতের শাতিলা শরণার্থী শিবিরে। তার শেষকৃত্যে যোগ দিয়েছিলেন হাজারো ফিলিস্তিনি।

এই সময়টাতে বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপশহর দাহিয়ে তাদের কার্যালয়ে বিস্ফোরণে সাতজন নিহতের কথা জানায় হামাস। তাদের মধ্যে সালেহ আল-আরোরিও ছিলেন।

২০১৫ সাল থেকে লেবাননে ছিলেন এই হামাস নেতা। দেশটিতে আশ্রয় নেওয়া কয়েক হাজার ফিলিস্তিনিদের মধ্যে একজন তিনি।

লেবাননে ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। দেশটিতে ১২টি শিবিরে প্রায় তিন লাখ ফিলিস্তিনি বসবাস করেন।

১৯৪৮ সালের নাকবায় ইসরায়েল সৃষ্টি হলে প্যালেস্টাইন থেকে ৭ লাখ ৫ হাজার ফিলিস্তিনি বহিষ্কৃত হন। সেই সময় থেকে তিরোধের নেতা এবং শরণার্থীরা ইসরায়েলি আক্রমণ থেকে বাঁচতে লেবাননে আশ্রয় নেওয়া শুরু করেন।

লেবানন এ শরণার্থীদের আতিথেয়তা দিলেও সেখানে তারা এক ধরনের বৈষম্যের সম্মুখীন। ফিলিস্তিনি সম্প্রদায় ও তাদের নেতারা ক্রমাগত ইসরায়েলি আক্রমণের হুমকির মধ্যে বসবাস করছে। ফিলিস্তিনি শিবিরের নিয়ন্ত্রণ যাদের হাতে

১৯৬৯ সাল থেকে লেবাননের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর ক্যাম্পে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বেশ কয়েকটি সশস্ত্র ফিলিস্তিনি দল সেখানে নিরাপত্তা দেয়।

মাঝে মাঝে, এই সশস্ত্র রক্ষীরা সাধারণ আশ্রিতদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। এছাড়া, নানা কারণে প্রায়ই নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে তারা।

শরণার্থী শিবিরগুলো ফিলিস্তিনি সশস্ত্র দলের কর্মী নিয়োগেরও অন্যতম সূতিকাগার। ডিসেম্বরের শুরুতে শিবিরে থাকা সামর্থ্যবানদের দলে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানায় হামাস। উদ্বাস্তুর সংখ্যা

লেবাননে অবস্থানরত ফিলিস্তিনির সংখ্যা জানা কঠিন। ২০১৭ সালে লেবাননের আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী, আশ্রয় শিবিরে ১ লাখ ৭০ হাজার শরণার্থী রয়েছে। আর জাতিসংঘের সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, সেই সংখ্যা ২ লাখ ৭০ হাজারের এর বেশি।

আবার লেবাননে জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্মবিষয়ক সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) তথ্য অনুযায়ী সেখানে প্রায় ৪ লাখ ৭৫ হাজার নিবন্ধিত ফিলিস্তিনি রয়েছেন। কেমন পরিস্থিতি সেখানে?

লেবাননে অবস্থানরত ফিলিস্তিনিরা খুব আরামে থাকেন তেমন নয়। ঠাসাঠাসি করে বসবাস, দারিদ্র্য, কাজের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন সেখানকার বাস্তবতা।

চাকরি বা সামাজিক পরিষেবা পেতে যেসব পরিচয়পত্র প্রয়োজন, বেশিরভাগ ফিলিস্তিনি তা পান না। তাদের দৈনন্দিন জীবনের অনেক প্রয়োজনীয় পণ্য পেতে ইউএনআরডব্লিউএ-এর ওপর নির্ভর করতে হয়। ক্যাম্পের বয়স

ইসরায়েল সৃষ্টির পর ১৯৪৮ সালে প্রথম উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ফিলিস্তিনি লেবাননে আসে।

১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পরে আরও শরণার্থী এলে সেখানে ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। ফলে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের আরও বিস্তৃত অংশ দখল করে। আশ্রয় শিবির কি সশস্ত্র গোষ্ঠীর ঘাঁটি?

১৯৬০ এর দশকের শেষের দিকে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও) বিভিন্ন ফ্রন্টে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই করছিল। মূলত, এটি জর্ডান থেকে পরিচালিত হয়েছিল, যেখানে প্রায় দুই মিলিয়ন শরণার্থী নিবন্ধিত হয়েছিল।

১৯৬৮ ও ১৯৬৯ সালে লেবাননের সামরিক বাহিনী ও ভারি সশস্ত্র ফিলিস্তিনি মিলিশিয়াদের মধ্যে ধারাবাহিক সংঘর্ষের পর, লেবাননের সামরিক বাহিনী কায়রো চুক্তি নামে পরিচিত একটি চুক্তিতে সই করে।

চুক্তিটি ফিলিস্তিনিদের শিবিরের প্রশাসনের ওপর স্বায়ত্তশাসনের পাশাপাশি লেবানন থেকে সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার অধিকার দেয়।

চুক্তিটি সই হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই, পিএলওকে জর্ডান থেকে বহিষ্কার করা হয়। কারণ তারা সে সময় সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে সাহায্য করেছিল।

১৯৭০ এর দশকে, পিএলও এর নেতারা ও লেবাননে অবস্থিত তার দলগুলো বারবার ইসরায়েলিদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিল। তাদের হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। প্রভাব কতটা গভীরে?

১৯৮২ সালে, লেবাননের গৃহযুদ্ধে অংশগ্রহণের পর সংগঠনটিকে লেবানন থেকে তিউনিসিয়ায় বহিষ্কার করা হয়।

লেবানন থেকে চলে যাওয়ার আগে পিএলও দক্ষিণ লেবাননের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে শরণার্থী শিবিরে অসন্তোষ তৈরি করেছিল। যার অন্যতম কারণ ছিল সেখানে নিজস্ব পুলিশ বাহিনী প্রতিষ্ঠা।

বিভিন্ন গোষ্ঠী এখনও ক্যাম্পে নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতিযোগিতা করে। লেবাননে তাদের রাজনৈতিক ও সামরিক উপস্থিতি রয়েছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর উপপ্রধান সালেহ আল-আরোরির বয়স ৫৭ বছর। তিনি হামাসের সামিরক শাখা কাসেম ব্রিগেডের প্রতিষ্ঠাতা কমান্ডার ছিলেন। ১৯৮৭ সালে তিনি হামাসে যোগ দিয়ে ইসলামি ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। পশ্চিম তীরে গোষ্ঠীটির সামরিক উপস্থিতি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন তিনি।

২০১১ সালে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর একজন কর্পোরালকে ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে এক হাজার ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়। ওই চুক্তিতে সংশ্লিষ্টতা ছিল আল-আরোরির। ইরান ও লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর সঙ্গে তার নিবিড় যোগাযোগ ছিল।

ইসরায়েল,যুদ্ধ,ফিলিস্তিন,লেবানন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close