• বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

আইসিজের নির্দেশের পর যা বলল হামাস–ইসরায়েল

প্রকাশ:  ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:১৭
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যা ঠেকানোর পদক্ষেপ নিতে ইসরায়েলের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)। একই সঙ্গে নির্বিচার হামলায় বিধ্বস্ত উপত্যকাটিতে মানবিক পরিস্থিতি উন্নয়নে ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আজ শুক্রবার নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে আইসিজের নির্দেশনার পর একে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। সংগঠনটি বলেছে, ইসরায়েলকে একঘরে করতে এবং গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অপরাধগুলো তুলে ধরতে আইসিজের রায় গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।

আইসিজের আদেশকে স্বাগত জানিয়েছেন ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল-মালিকিও। শুক্রবার তিনি বলেন, ‘আইসিজের বিচারকেরা (গাজার) প্রকৃত চিত্র ও আইনের সঠিক মূল্যায়ন করেছেন। তাঁরা মানবতা এবং আন্তর্জাতিক আইনের পক্ষে রায় দিয়েছেন।

এদিকে আইসিজের আদেশের পর আগের কথাই বলেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তাঁর মতে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ তোলা ‘আপত্তিকর’ একটি বিষয়। নেতানিয়াহু বলেন, ইসরায়েলের নিজেদের রক্ষা করার অধিকার রয়েছে। সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করার যে আহ্বান দক্ষিণ আফ্রিকা জানিয়েছিল, তা প্রত্যাখ্যান করেছে আইসিজে।

তবে আইসিজের আদেশ প্রত্যাখ্যান করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন, ইসরায়েলকে নৈতিকতা শেখানোর কোনো প্রয়োজন নেই আইসিজের।

আইসিজের আদেশের পর আদালতের বাইরে মামলাকারী দেশ দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নালেদি পানদোর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া আদালতের এ নির্দেশ আসলে কোনো কাজে আসবে না। আমি আশা করেছিলাম, আদেশে যুদ্ধ বন্ধের বিষয়টি যুক্ত থাকবে। তারপরও আদালত যেসব নির্দেশ দিয়েছেন, তাতে আমি সন্তুষ্ট।’

এ সময় উপস্থিত এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ইসরায়েল আইসিজের নির্দেশ মানবে বলে মনে করেন কি? জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইসরায়েলের বিষয়ে তিনি কখনোই আশাবাদী ছিলেন না। তবে তাঁর প্রত্যাশা, ইসরায়েলের ‘শক্তিশালী বন্ধুরা’ দেশটিকে নির্দেশগুলো মেনে চলার পরামর্শ দেবে।

জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা অবিলম্বে আইসিজের আদেশের কার্যকর বাস্তবায়ন চায়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এক্স বার্তায় আইসিজের আদেশকে ‘মাইলফলক’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

যা বলা হয়েছে আদেশে গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার অভিযোগ এনে গত মাসের শেষের দিকে আইসিজেতে মামলা করে দক্ষিণ আফ্রিকা। চলতি মাসের শুরুর দিকে দুই দিন মামলার শুনানি হয়। শুনানিতে দক্ষিণ আফ্রিকার আইনজীবীরা গাজায় যুদ্ধ বন্ধে জরুরি পদক্ষেপ নিতে আদালতের প্রতি আহ্বান জানান। অন্যদিকে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে গণহত্যার অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়।

ওই শুনানির পর শুক্রবার অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ পড়ে শোনান আইসিজের প্রেসিডেন্ট জোয়ান ডানেহিউ। রায়ে বলা হয়, গাজায় গণহত্যা বলে বিবেচিত হতে পারে, এমন কোনো কর্মকাণ্ড রোধে সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ নিতে হবে ইসরায়েলকে। একই সঙ্গে দেশটির ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী যেন গণহত্যায় জড়িয়ে না পড়ে, সেটা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।

আদালতের আদেশে গাজায় গণহত্যার জন্য উসকানিমূলক কোনো মন্তব্য প্রকাশে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ইসরায়েলকে। কেউ এ ধরনের মন্তব্য করলে তাঁকে শাস্তির আওতায় আনার নির্দেশও দিয়েছেন আইসিজে। এ ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার গণহত্যা মামলা ব্যবহার করা যায়—গাজায় থাকা এমন প্রমাণ ধ্বংস রোধের বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হবে দেশটিকে।

আইসিজে গাজায় মানবিক সহায়তার প্রবেশ নিশ্চিত করতে ইসরায়েলকে পদক্ষেপ নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, আদেশে নির্দেশনাগুলো পালনে কী ব্যবস্থা নেওয়া হলো, এক মাসের মধ্যে তার প্রতিবেদন আদালতে জমা দিতে হবে ইসরায়েলকে।

গতকালের আদেশে দক্ষিণ আফ্রিকার আবেদন অনুযায়ী গাজায় যুদ্ধবিরতির নির্দেশ না দেওয়া হলেও গণহত্যার মামলাটি চলমান থাকবে বলে জানিয়েছেন আইসিজে। আদেশে বলা হয়েছে, ১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশনের অধীনে ফিলিস্তিনিরা গণহত্যা থেকে সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারী জনগোষ্ঠী।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান নাৎসিদের হাতে ইহুদি নিধনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৪৮ সালে গণহত্যা কনভেনশন প্রণয়ন করা হয়। সেই কনভেনশন অনুযায়ী কোনো জাতিগোষ্ঠী, বর্ণ বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে পুরোপুরি অথবা আংশিকভাবে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার অভিপ্রায়ে ঘটানো কর্মকাণ্ডই গণহত্যা।

আইসিজে গতকাল অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দিলেও এই মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় পেতে কয়েক বছর সময় লাগতে পারে। এই আদালত যে রায় দেন, তার বিরুদ্ধে আপিল করার কোনো সুযোগ নেই। তবে ওই রায় মানতে বাধ্য করার ক্ষমতা নেই আদালতটির। যদিও ইসরায়েল গণহত্যা কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ হওয়ায় আইসিজের আদেশ মানার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

আইসিজের আদেশ ঘোষণার সময় দ্য হেগে আদালতের বাইরে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বিক্ষোভ চলছিল। আদেশ ঘোষণার সময় বিক্ষোভকারীদের কেউ কেউ পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। আজ গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগের ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় উপত্যকাটিতে ১৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে গত ৭ অক্টোবর থেকে সেখানে ২৬ হাজার ৮৩ ফিলিস্তিনি নিহত হলেন। তাঁদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা কমপক্ষে ১০ হাজার।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ঢুকে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এরপর গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। হামাসের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন প্রায় ১ হাজার ৩০০ জন। এ ছাড়া হামাস প্রায় ২৪০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায়।

ইসরায়েলের হামলা ও হুমকির মুখে খান ইউনিস ছেড়ে আরও দক্ষিণে মিসর সীমান্তবর্তী রাফা এলাকায় চলে যাচ্ছেন হাজারো ফিলিস্তিনি। জাতিসংঘের হিসাবে, ইতিমধ্যে এই এলাকায় ১৭ লাখ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। ইউএনআরডব্লিউএর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেছেন, তাঁর মনে হয়েছে, যেন খান ইউনিস থেকে ‘স্রোতের মতো’ মানুষ মিসর সীমান্তের দিকে যাচ্ছেন।

ইসরায়েলি হামলায় বাস্তুচ্যুত হয়ে রাফা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন তামের (৫৫)। তিন মাসের বেশি সময় ধরে চলা দুর্দশার মধ্যেও আইসিজের আদেশ নিয়ে সচেতন তিনি। আইসিজের আদেশের পর তামের বলেন, ‘আদালতের নির্দেশের পরও যদি ইসরায়েল তা না মানে তাহলে কী হবে? তাহলে পুরো বিশ্বই উপহাসের পাত্র হয়ে উঠবে। ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষায় থাকতে হবে, কখন আমাদের মৃত্যুর পালা আসে।’

আন্তর্জাতিক বিচার,আদালত,ফিলিস্তিন,রক্তাক্ত ফিলিস্তিন,গাজা,হামাস,ইসরায়েল
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close