• বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

৮ ভোট বাতিল করে যেভাবে মেয়র নির্বাচনে জিতল বিজেপি

প্রকাশ:  ৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:৩৯
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

আম আদমি পার্টি (আপ) ও কংগ্রেসের আটটি ভোট বাতিল করে চণ্ডীগড় পৌরসভার মেয়র নির্বাচন জিতল বিজেপি। আজ মঙ্গলবার গণনা শেষে দেখা গেল, মোট ৩৬টি ভোটের মধ্যে বিজেপির মেয়র প্রার্থী মনোজ সোনকার পেয়েছেন ১৬টি, কংগ্রেস-সমর্থিত আপ প্রার্থী কুলদীপ কুমার পেয়েছেন ১২টি।

ভোটের ফল ঘোষিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন আপ ও কংগ্রেস কাউন্সিলররা। তাঁরা হাইকোর্টের শরণাপন্ন হয়েছেন। মামলাটি কাল বুধবারই যাতে শোনা হয়, সেই আরজি জানিয়েছেন পাঞ্জাবের কৌঁসুলি গুরমিন্দর সিং।

বিজেপি প্রার্থীকে মেয়র পদে বিজয়ী ঘোষণার পরপরই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আপ নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল বিজেপির বিরুদ্ধে অসততার অভিযোগ আনেন। ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে হিন্দিতে তিনি লেখেন, ‘দিনদুপুরে ডাকাতি করা হলো। চণ্ডীগড়ের মেয়র পদে নির্বাচনে যেভাবে বেইমানি করা হয়েছে, তা খুবই চিন্তার বিষয়। একটা মেয়র পদ পাওয়ার জন্য এই লোকজন যদি এতটা নিচে নামতে পারেন, তাহলে দেশের ভোট জিততে তাঁরা কোথায় নামবেন, ভাবলেই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হচ্ছি।’

ফল ঘোষণার পর কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরা এক্স হ্যান্ডেলে সংক্ষিপ্ত মন্তব্যে বলেন, ‘চণ্ডীগড়ে গণতন্ত্রকে হত্যার জন্য বিজেপি ৩০ জানুয়ারির দিনটি (গান্ধী হত্যা) বেছে নেবে, এতে আশ্চর্যের কিছু নেই।’

ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রায় থাকা কংগ্রেসের সাংগঠনিক সম্পাদক কে সি বেনুগোপালও বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা করায়ত্ত করার এ এক নির্লজ্জ প্রচেষ্টা। বিরোধী ভোট বাতিল করে নির্বাচনে জিতে বিজেপি দেখাল, এটাই ওদের চরিত্র।’

বেনুগোপাল লেখেন, ‘প্রথমে ওরা ভোট পিছিয়ে দিল। তারপর ভোট চুরি করার প্রক্রিয়া দেখাল। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি গণতন্ত্রের কী হাল করবে, এটা তারই প্রমাণ। যাঁরা ভাবছেন ২০২৪ সালে জেতার পর ওরা গণতন্ত্র অব্যাহত রাখবে, এটা তাঁদের জন্য হুঁশিয়ারি।’

মেয়র ও দুই ডেপুটি মেয়রের নির্বাচন ঘিরে জাতীয় রাজনীতিতে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছিল। কারণ, এই প্রথম এই ভোটে বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার দুই শরিক কংগ্রেস ও আপ জোটবদ্ধ হয়েছিল। ভোট গ্রহণের দিন ছিল ১৮ জানুয়ারি। কিন্তু বিজেপির কাউন্সিলরদের গোলমালে তা স্থগিত হয়ে যায়। নির্বাচনের পরবর্তী দিন ধার্য হয় ৬ ফেব্রুয়ারি। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কংগ্রেস ও আপ পাঞ্জাব-হরিয়ানা হাইকোর্টে যায়। হাইকোর্ট ৩০ জানুয়ারি ভোট করতে নির্দেশ দেন।

চণ্ডীগড়ের মোট কাউন্সিলর ৩৫ জন। ওই কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত লোকসভা সদস্যও ভোটার। তাঁকে নিয়ে মোট ভোটার ৩৬। চণ্ডীগড়ের বিজেপির সংসদ সদস্য কিরণ খের প্রথম ভোট দেন। তারপর একে একে অন্যরা। আপের মোট কাউন্সিলরের সংখ্যা ১২, কংগ্রেসের ৮। সেই হিসাবে ইন্ডিয়া জোটের জয়ের সম্ভাবনা ছিল প্রশ্নের অতীত। কিন্তু গণনায় দেখা যায়, আপ ও কংগ্রেসের মোট আটটি ভোট বাতিল হয়েছে। বিজেপি প্রার্থী সোনকর ১৬ ভোট পেয়ে জয়ী, আপ-কংগ্রেসের সম্মিলিত সংগ্রহ ১২ ভোট।

প্রিসাইডিং কর্মকর্তা অনিল মাসিহ্ ফল ঘোষণার পরই কক্ষ ছেড়ে চলে যান। কংগ্রেসের নেতা পবন বনসলের অভিযোগ, এরপরই বিজেপি কাউন্সিলররা ব্যালট পেপারগুলো ছিঁড়ে ফেলেন। পবন ছিলেন নির্বাচন তদারকির দায়িত্বে। তাঁর অভিযোগ, আপ ও কংগ্রেসের এজেন্টদের ব্যালট পেপার দেখতেও দেওয়া হয়নি।

চণ্ডীগড় পৌরসভার মেয়র পদের ভোটে চিরকাল সংবাদমাধ্যম উপস্থিত থেকেছে। এই প্রথম ভোটকক্ষে গণমাধ্যমকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। গণমাধ্যমকে ভোট দেখাতে একটি ভিডিও স্ক্রিন টাঙানো হয়েছিল। তা-ও ছিল আবার শব্দহীন। ৭০০ পুলিশ কর্মী মোতায়েন করা হয়েছিল অবাঞ্ছিত ঘটনা এড়াতে।

আপের পক্ষ থেকে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, প্রিসাইডিং কর্মকর্তা একের পর এক ব্যালট পেপারে কিছু লিখছেন। আপ-কংগ্রেসের অভিযোগ, বৈধ ব্যালট পেপারে টিকচিহ্ন দিয়ে তিনি তা অবৈধ করে দিচ্ছেন, যাতে সেগুলো বাতিল করা যায়।

আপ নেতা ও রাজ্যসভার সদস্য রাঘব চাড্ডা প্রিসাইডিং কর্মকর্তা অনিল মাসিহ্‌র বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার দাবি জানিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলন ডেকে তিনি বলেছেন, চণ্ডীগড়ে যা হলো, তা দেশদ্রোহ ছাড়া অন্য কিছু নয়।

নির্বাচিত নতুন মেয়রের দায়িত্ব দুই ডেপুটি মেয়রের নির্বাচন করানো। মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন আপের প্রার্থী কুলদীপ কুমার। দুই ডেপুটি মেয়র পদপ্রার্থী কংগ্রেস। আপাতত সবকিছু নির্ভর করছে হাইকোর্টের ওপর।

ভারত,মেয়র,বিজেপি,নির্বাচন,কংগ্রেস
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close