• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

বর্ষবরণে শ্লীলতাহানি: আট বছরেও শেষ হয়নি বিচার

প্রকাশ:  ১৪ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৫৪
নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ২০১৫ সালের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ঘটেছিলো নারীদের শ্লীলতাহানির ঘটনা। এই পহেলা বৈশাখে তার আট বছর পূর্ণ হচ্ছে। দীর্ঘ সময় পার হলেও শেষ হয়নি মামলার বিচারকাজ।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আট লাঞ্ছনাকারীকে শনাক্ত করা হয়। তাদের ধরিয়ে দিতে এক লাখ টাকা করে পুরস্কারের ঘোষণাও দেন তৎকালীন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক। এ ঘটনায় করা মামলায় সাত আসামিকে খুঁজে না পেয়ে পরের বছর কামাল নামে এক ব্যবসায়ীকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করে মামলার তদন্ত সংস্থা ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

পরের বছরের জুন মাসে আসামি কামালের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন নির্ধারণ করেন আদালত। কিন্তু অভিযোগ গঠনের প্রায় ছয় বছর পরও ৩৪ জন সাক্ষীর মধ্যে সাতজন আদালতে সাক্ষ্য দেন। সাক্ষীদের প্রতি জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরও তারা সাক্ষ্য দিতে আদালতে আসছেন না। সাক্ষীরা আদালতে হাজির না হওয়ায় আলোচিত মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম ঝুলে রয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, আগামী পহেলা বৈশাখের আগে মামলাটি নিষ্পত্তি করা হবে।

বর্তমানে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এ মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম চলছে। সর্বশেষ গত ১৯ মার্চ মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। তবে সেদিন কোনো সাক্ষী আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষ সময়ের আবেদন করলে বিচারক ২৪ এপ্রিল পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য করেন। এ নিয়ে গত ছয় ধার্য তারিখে কোনো সাক্ষী আদালতে হাজির হয়নি। এ মামলায় সাক্ষীর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি থাকলেও সাক্ষীরা আদালতে উপস্থিত হচ্ছেন না।

২০১৫ সালের ওই ঘটনায় সেদিন সন্ধ্যায় শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। নারীদের লাঞ্ছনার প্রত্যক্ষদর্শী ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আটজনকে শনাক্তের পর গণমাধ্যমে ছবি প্রকাশ করে পুলিশ। তাদের ধরিয়ে দিতে লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়।

২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বর এ মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক দীপক কুমার দাস। প্রতিবেদনে আসামি খুঁজে না পাওয়ার কথা বলা হয়। তবে ওই প্রতিবেদন গ্রহণ না করে মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক জয়শ্রী সমাদ্দার।

২০১৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক আব্দুর রাজ্জাক ব্যবসায়ী কামালকে একমাত্র আসামি করে চার্জশিট দাখিল করেন। ২০১৭ সালের ১৯ জুন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।

চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, তদন্তে আট লাঞ্ছনাকারীর মধ্যে একজনকে খুঁজে পাওয়া গেছে। অন্য সাতজনকে খুঁজে না পাওয়ায় তাদের চার্জশিটে নাম অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। তাদের খুঁজে পাওয়া গেলে সম্পূরক চার্জশিট দেওয়া হবে। এ মামলায় সাক্ষী করা হয় ৩৪ জনকে।

ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এর রাষ্ট্রপক্ষের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, মামলাটি ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩-এ বিচারাধীন ছিলো। এরপরে মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৫-এ বদলি হয়ে আসে। পরবর্তীতে এখতিয়ার ভাগ হওয়ায় বর্তমানে এই আদালতে আসে এবং এই আদালতে এখন বিচার চলছে।

তিনি বলেন, মামলায় সাতজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া বাকি সাক্ষীদের সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আদালতে সমন জারি করা হয়েছিলো। সমন জারির পরেও হাজির না হওয়ায় অজামিনযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেওয়া হয়েছে।

আইনজীবী বলেন, আমরা সাক্ষীদের আনার চেষ্টা করছি এবং সাক্ষী হাজিরের মাধ্যমে দ্রুত মামলা নিষ্পতির চেষ্টা করবো।

তিনি বলেন, এ মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে বেশিরভাগ পুলিশ সদস্য। তারা বিভিন্ন জায়গায় বদলি হয়ে গেছেন। তাই সাক্ষীদের খুঁজে পেতে বেগ পেতে হচ্ছে এবং আদালতে সাক্ষী হাজির করার বিষয়ে পুলিশেরও ভূমিকা রয়েছে।

বাদী পক্ষের আইনজীবী আনিসুর রহমান বলেন, মামলার এজাহারে কামালের নাম ছিলো না। পুনর্তদন্তে তার নাম এসেছে। তিনি ডায়াবেটিস রোগী। এ জন্য তিনি ‌সেদিন বের হন হাঁটাহাঁটির উদ্দেশে। সেখানে এ ঘটনা ঘটেছে, তিনি তা জানতেনই না। তিনি সেখান থেকে হেঁটে এসেছেন, সেই ভিডিওর ভিত্তিতে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু, তিনি কাউকে ধরেছেন বা শ্লীলতাহানি করেছেন, এমন কিছু নেই। তিনি অপরাধ সম্পর্কে জানতেন না।

তিনি দাবি করেন, পুলিশ সঠিক আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম

বিচার,বর্ষবরণ,শ্লীলতাহানি,নারী
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close