• শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

কক্সবাজারের জেলা জজকে হাইকোর্ট

‘আপনি ভুল করেননি, অপরাধ করেছেন’

প্রকাশ:  ২০ জুলাই ২০২৩, ১৭:৫৯
নিজস্ব প্রতিবেদক

কক্সবাজারের জেলা জজ মোহাম্মদ ইসমাঈলকে উদ্দেশ করে হাইকোর্ট বলেছেন, আপনি একজন সিনিয়র জেলা জজ। দীর্ঘদিন বিচারকাজ করেছেন। আপনি আদালতের আদেশ টেম্পারিং (ঘষামাঝা) করেছেন। এতে আপনার বুক কাঁপল না? টেম্পারিং করে আপনি ভুল করেননি। জেনে বুঝে আপনি ক্রাইম (অপরাধ) করেছেন। একটি অন্যায় ঢাকতে গিয়ে তিনি আরও কয়েকটি অন্যায় করেছেন।

বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) বিচারপতি মো. হাবিবুল গনি ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।

আসামিদের আইনের বিধান না মেনে জামিন দেওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা করতে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজকে গত ২১ জুন তলব করেন হাইকোর্ট। ১৭ জুলাই স্বশরীরে হাইকোর্টে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য বলা হয়। সে অনুযায়ী গত বুধবার জেলা জজ হাজির হন। প্রথম দিনের শুনানিতেও হাইকোর্ট ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সম্মানজনক বিদায় চাইলে এমন কাজ করতে পারতেন না।

মোহাম্মদ ইসমাইলের লিখিত বক্তব্যসহ নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়টি গত বুধবার হলফনামা আকারে হাইকোর্টে দাখিল করেছিলেন তার আইনজীবী। কিন্তু যথাযথ না হওয়ায় তা নতুন করে দাখিলের জন্য সময় চেয়ে তার আইনজীবী হাইকোর্টে আরজি জানান। পরে আদালত শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার দিন রাখেন। সে অনুযায়ী আজ সকালে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে নতুন করে একটি আবেদন হাইকোর্টে দাখিল করেন মোহাম্মদ ইসমাইলের আইনজীবী। এ সময় আগের দিনের মতো আজও হাইকোর্টে হাজির হন মোহাম্মদ ইসমাইল।

শুনানিতে জেলা জজের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, আমরা কনটেস্ট করতে চাই না। আমরা আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইছি। আমরা খুবই অনুতপ্ত। মোহাম্মদ ইসমাইলকে অব্যাহতি দেওয়ার আরজি জানান তিনি।

শুনানির একপর্যায়ে হাইকোর্ট মোহাম্মদ ইসমাইলের দেওয়া আদেশের অংশবিশেষ আইনজীবীদের দেখতে বলেন। হাইকোর্ট বলেন, আদেশে কিছু পরিবর্তন করতে হলে সব পক্ষকে ডেকেই করতে হয়। হাইকোর্টে আসার আগেই তিনি তার আদেশ কেটেছেন।

এ সময় মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ‘আদেশে দুটি শব্দ ভুল হয়েছে। এ জন্য মাফ চাই। দুঃখিত।’

হাইকোর্ট বলেন, ‘আপনি খণ্ডন (আদেশ) করতে চাচ্ছেন? আপনার মনে অনুতাপ দেখি না। আপনি বাধ্য হয়ে বলছেন। অন্তর থেকে আসেনি। অন্তর থেকে আসতে হবে।’ শুনানি চলাকালে আদালতে দাঁড়িয়ে ছিলেন মোহাম্মদ ইসমাইল। একপর্যায়ে তিনি বলেন, তার খারাপ লাগছে। আদালত তাকে বসতে বলেন। পরে তাকে কপালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকতে দেখা যায়।

শুনানির একপর্যায়ে মোহাম্মদ ইসমাইলের অপর আইনজীবী আদালতে সাত দিনের সময়ের আবেদন জানান। আদালত ২৭ জুলাই শুনানির পরবর্তী তারিখ রাখেন। আদালতে আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ বি এম আলতাফ হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।

আইনজীবী সূত্রে জানা যায়, জমির দখল নিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ভয়ভীতি প্রদর্শন ও আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগে মিঠাছড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ ভুট্টোসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে খোদেস্তা বেগম সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ ও আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী দ্রুত বিচার আদালতে নালিশি মামলা করেন। এই মামলায় আসামিরা হাইকোর্টে আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১১ এপ্রিল হাইকোর্ট তাদের ছয় সপ্তাহের মধ্যে কক্সবাজারের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেন। সংশ্লিষ্ট আদালতে গত ২১ মে আসামিরা আত্মসমর্পণ করে জামিন চান। সেদিন চিফ চুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ৯ আসামির জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর বিরুদ্ধে একই দিন আসামিরা কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিন চেয়ে আবেদন করেন। আদালত ৯ আসামির জামিন মঞ্জুর করেন। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের এ আদেশের বিরুদ্ধে খোদেস্তা হাইকোর্টে আবেদন (ফৌজদারি রিভিশন) করেন।

আইনজীবী এ বি এম আলতাফ হোসেন বলেন, ২১ মে দুপুর ১২টার দিকে ৯ আসামি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করেন। এর আগেই চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত আদেশের কপি পাননি উল্লেখ করে সকাল ১০টার দিকে আদেশের বিরুদ্ধে আসামিরা জামিনের জন্য জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হলফনামাসহ আবেদন করেন। এক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জামিন নামঞ্জুরের আদেশসহ অন্য কাগজপত্রের প্রত্যায়িত অনুলিপি বা প্রত্যায়িত অনুলিপির ফটোকপি দাখিল করা হয়নি। আসামির হাজতবাসের মেয়াদসহ সার্বিক বিবেচনায় তাদের জামিন মঞ্জুর করা হয়— আদেশে উল্লেখ করেছেন জেলা জজ। অথচ ৯ আসামি এক মুহূর্তও হাজতে ছিলেন না। শুনানিতে বিষয়গুলো তুলে ধরা হলে জেলা ও দায়রা জজ আসামিদের কীভাবে জামিন দিলেন—এ বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। মামলার যাবতীয় নথি নিয়ে আসতে বলেন আদালত। মামলার কোনো সার্টিফাইড কপি ছাড়াই একই দিনে জেলা ও দায়রা জজ কোন আইনে, কীভাবে জামিন দিয়েছেন, সেই বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেন।

হাইকোর্ট
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close