• শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

৬ মাস আগে হয়েছিল জঙ্গি ছিনতাই পরিকল্পনা

প্রকাশ:  ০৮ এপ্রিল ২০২৩, ১৬:১২
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর পুরান ঢাকায় আদালত প্রাঙ্গণ থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় দুইজনকে গ্রেফতারের পর চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

তারা জানিয়েছে, ছয় মাস আগে জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেওয়ার বিষয়টি পরিকল্পনা হয়েছিল।‌‌‌‌ আর এতে সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ফাতেমা তাসনীম শিখা নামে এক নারী জঙ্গিকে। গাজীপুর কারাগার থেকে সিএমএম কোর্টে হাজিরার সময় এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়। গ্রেফতারকৃত শিখা ছিনিয়ে নেওয়া জঙ্গি আবু সিদ্দীক সোহেলের স্ত্রী।‌‌ জেলখানার ভেতরে ও বাইরে এই শিখাই মূল সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। বিভিন্ন জায়গায় যেসব মিটিং হয়েছিল সেসবেরও মূখ্য ভূমিকা পালন করেন তিনি। তিনি কারাগারে থাকা জঙ্গি সায়মনের বোন। যিনি ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি।

শিখা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আনসার আল ইসলামের সঙ্গে নিয়োজিত ছিলেন।

শুক্রবার (৭ এপ্রিল) রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলার সাইনবোর্ড এলাকা থেকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের দুই নারী জঙ্গি ফাতেমা তাসনীম ওরফে শিখা (৩১) ও হুসনা আক্তার ওরফে হুসনাকে (২২) গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে বলে দাবি করেছেন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট- সিটিটিসি'র প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।

শনিবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান‌।

মো. আসাদুজ্জামান জানান, ফাতেমা তাসনীম শিখা ২০১৪ সালে এমআইএসটি থেকে প্রথম শ্রেণিতে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেন। একপর্যায়ে তার ভাই মোজ্জাম্মেল হোসেন ওরফে সাইমনের মাধ্যমে সে আনসার আল ইসলামের আদর্শে দীক্ষিত হন এবং পরে সায়মনের মাধ্যমে আবু সিদ্দীক সোহেলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। উল্লেখ্য, সোহেল আনসার আল ইসলামের সামরিক (আসকারি) শাখার সদস্য ছিলেন। সোহেলের সঙ্গে বিয়ের পর থেকে সে আরও গভীরভাবে সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। ২০১৭ সালে মুক্তমনা ব্লগার অভিজিৎ রায়, দিপন ও নীলাদ্রি নিলয় হত্যা মামলার আসামী হিসেবে আবু সিদ্দিক সোহেল গ্রেফতার হয়। গ্রেফতারের পর থেকে বিভিন্ন এনক্রিপ্টেড অ্যাপসের মাধ্যমে গ্রেফতারকৃত শিখা কারাবন্দী সোহলসহ সংগঠনের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রেখে সংগঠনের কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণ শুরু করে।

তিনি দাবি করেন, জঙ্গি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা সম্পর্কে গ্রেফতারকৃতরা সিটিটিসিকে জানিয়েছে- নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের পরিকল্পনা ও নির্দেশনা মোতাবেক গত ২০ নভেম্বর আদালতের কার্যক্রম শেষে পুলিশের ওপর আক্রমণ করে জঙ্গি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করা হয়। ফাতেমা তাসনীম ওরফে শিখা এই কার্যক্রমে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে। পরিচয় গোপন করে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্যরা জঙ্গি ছিনতাইয়ের পুরো পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও সমন্বয় করার উদ্দেশ্যে ঢাকা এবং এর পাশের জেলায় একাধিক আনসার হাউস ভাড়া নেয়। সেখানে আনসার আল ইসলামের শীর্ষ এবং সামরিক শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আয়মান এবং শিখাসহ অজ্ঞাতনামা আনসার আল ইসলাম সদস্যদের নিয়ে নিয়মিত মিটিং করতেন।

জঙ্গি ছিনতাই ঘটনার প্রায় ৬ মাস আগে থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করা হয়। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার হতে সিজেএম কোর্টে হাজিরা দেওয়ার সময় এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয় এবং পরিকল্পনার সমন্বয়ক হিসেবে শিখাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ঘটনার দিন সে সিএমএম কোর্ট এলাকায় এসে পৌঁছে কৌশলে তার বাবার কাছ থেকে বিছিন্ন হয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনায় নেতৃত্ব দেওয়া মশিউর রহমান ওরফে আয়মানসহ আনসার আল ইসলামের সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুরো পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।

গত ২০ নভেম্বর নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য হাজতী মইনুল হাসান শামিম ওরফে সিফাত ওরফে সামির ওরফে ইমরান (২৪), আবু সিদ্দিক সোহেল (৩৪), আরাফাত রহমান (২৪) এবং আব্দুস সবুরদের সিএমএম কোর্টের হাজতখানায় নিয়ে যাওয়ার সময় সিএমএম কোর্টের মূল ফটকের সামনে পৌঁছামাত্র নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের অজ্ঞাতনামা সদস্যরা তাদের ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য কর্তব্যরত পুলিশের ওপর হামলা করেন। একপর্যায়ে আসামী মইনুল হাসান শামিম ওরফে সিফাত (২৪) এবং আসামী মো. আবু সিদ্দিক সোহেলকে (৩৪) ছিনিয়ে নিয়ে মোটরসাইকেল যোগে পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় পরে মামলা হলে সাবেক রেলমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

জঙ্গি
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close