• রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

রাজউকের ১৬ কর্মচারী ‘কোটিপতি’, মাঠে দুদক

প্রকাশ:  ০৭ মে ২০২৩, ১৩:২০
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কোটিপতি ১৬ কর্মচারীর সম্পদের খোঁজে মাঠে নেমেছে দুদক। সম্প্রতি তাদের সম্পদের বিস্তারিত তুলে ধরে কমিশনে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়েছে। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে কয়েকজন অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক টিম।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তথ্যমতে, রাজউকের স্বল্প বেতনের কয়েকজন কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যে গঠিত টিমের প্রধান করা হয়েছে উপপরিচালক ইয়াছির আরাফাতকে। অন্য সদস্যরা হলেন উপপরিচালক জেসমিন আক্তার ও মো. তানজিব হাসিব সরকার। দুদকের টিম অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলবি নোটিশ পাঠায়।

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে অফিস সহকারী জাফর সাদিক, উত্তরা জোনের তত্ত্বাবধায়ক এম এ বায়েজিদ খান, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর আবদুল মোমিন, নকশাকার এমদাদ আলী, সার্ভেয়ার মাসুম বিল্লাহ, সুপারভাইজার খালেদ মোশাররফ তালুকদার রুবেল, বেঞ্চ সহকারী বাসার শরীফ, নিম্নমান সহকারী ইউসুফ মিয়া, অফিস সহকারী বেলাল হোসেন চৌধুরী, নকশাকার শহীদুল্লাহ বাবু, কনিষ্ঠ হিসাব সহকারী মোহাম্মদ হাসান, নকশাকার শেখ ফরিদ ও রেকর্ডকিপার মো. ফিরোজকে।

অনুসন্ধান টিমের এক কর্মকর্তা বলেন, রাজউকের কয়েকজন কর্মচারীর অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান চলছে। এর অংশ হিসেবে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এখনই এর বেশি কিছু জানাতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।

দুদকের টেবিলে থাকা অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, বিএনপিকে অর্থায়নের অভিযোগে গত ১৯ জানুয়ারি রাজউকের অফিস সহকারী জাফর সাদিককে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি রাজধানীর আফতাবনগরের ডি-ব্লকের ৫ নম্বর রোডে ২৯ নম্বর প্লটে সাড়ে ৩ কাঠা জমিতে নূর আহমেদ ভিলা নামে আটতলা এবং ৩৩ শান্তিনগরে একটি ফ্ল্যাট থাকার কথা স্বীকার করেন। চাকরির পাশাপাশি রাজউকের প্লট বেচাকেনার মধ্যস্থতা ও ঘুষের টাকায় এসব সম্পদ গড়েছেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানান।

১১ বছর ধরে রাজউকের উত্তরা জোনের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করছেন এম এ বায়েজিদ খান। উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের ১৬ নম্বর সড়কের তিন কাঠার ৫ নম্বর প্লটে ছয়তলা বাড়ি আছে তার। এর বর্তমান বাজারমূল্য অন্তত ১০ কোটি টাকা। এ ছাড়া উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের ২০ ও ২২ নম্বর প্লট দুটির মালিক তিনি। একেকটি প্লটের দাম প্রায় ৬ কোটি টাকা। এই দুই প্লট এক করে ৯ তলা ভবন নির্মাণকাজ চলছে। প্রতি তলায় হবে চারটি ফ্ল্যাট। ভবন নির্মাণে আনুমানিক খরচ ১২ কোটি টাকা।

রাজউকের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর আবদুল মোমিনের মাসিক বেতন ২৮ হাজার টাকা। মুগদার দক্ষিণ মান্ডার ৭১ নম্বর ওয়ার্ডের ৭ নম্বর প্লটে প্রায় ৫ কাঠা জমিতে সাততলা বাড়ি আছে তার। এর বর্তমান মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। এ ছাড়া মতিঝিলে কবি জসীমউদ্দীন রোডে দুটি ফ্ল্যাট আছে। নকশী কাঁথার মাঠ নামে ৯ তলা ভবনের ১ হাজার ৭২৫ বর্গফুটের বি-৬ ফ্ল্যাটের বাজারমূল্য ২ কোটি টাকা। এ বাসায় থাকেন মোমিন। সাভারের ভাদাইল পুরোনো ইপিজেড সংলগ্ন হোসেন প্লাজার পাশে দুই বিঘা জমি কিনে টিনশেড তুলে পোশাককর্মীদের ভাড়া দিয়েছেন। এর বাজারদর অন্তত ৫ কোটি টাকা। পূর্বাচলে স্ত্রীর নামে একটি প্লট আছে।

পদোন্নতি পেয়ে এমদাদ আলী সম্প্রতি রেখাকার থেকে নকশাকার হয়েছেন। ২৪ হাজার টাকা বেতনের চাকুরে হলেও তার বাড্ডা পুনর্বাসন প্রকল্পে পাঁচ কাঠা জমিতে ছয়তলা বাড়ি আছে। এ ছাড়া ডেমরায় এমদাদ আলীর আরও দুটি সাত কাঠার প্লট আছে।

ইমারত পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামানের চাকরির বয়স প্রায় ৪ বছর। তিনি সম্প্রতি দক্ষিণ পীরেরবাগে আমতলা টাওয়ারের ২ কোটি টাকায় ১ হাজার ৬৩০ বর্গফুটের ই-৬ নম্বর ফ্ল্যাটটি কিনেছেন। এ ছাড়া জি প্রিমিও ব্র্যান্ডের গাড়িও (ঢাকা মেট্রো-গ ৩৬-৩৩০৪) কিনেছেন।

সার্ভেয়ার মাসুম বিল্লাহর উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের ৬ নম্বর রোডের ২৪ নম্বর প্লটে সাততলা বাড়ি রয়েছে। বাড়িটির বর্তমান বাজারমূল্য অন্তত ১০ কোটি টাকা।

সুপারভাইজার খালেদ মোশাররফ তালুকদার রুবেলের রয়েছে বগুড়ার শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে ৭ কাঠা জমিতে পাঁচতলা বিলাসবহুল বাড়ি। ঢাকার মাদারটেকে নিজের ফ্ল্যাট, করোলা ফিল্ডার গাড়ি। সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে মার্কেট রয়েছে।

রাজউক শ্রমিক লীগের সভাপতি বেঞ্চ সহকারী বাশার শরীফকে নথি গায়েব করার অভিযোগে গত ২৫ আগস্ট চাকরিচ্যুত করা হয়। ঢাকার মানিকনগর পুকুরপাড়ে তার ২ হাজার ৬০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, আধুনিক টয়োটা নোয়া গাড়ি (নম্বর ঢাকা মেট্রো-ছ ১৯-০৪১৪) রয়েছে। ঢাকায় বাড়ি করেননি রাজউকের নিম্নমান সহকারী কাম-মুদ্রাক্ষরিক ইউসুফ মিয়া। তবে গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের মিঠানগর ইউনিয়নের মলিহাস গ্রামে করেছেন তিনতলা বাড়ি। করেছেন শখানেক গরুর দুটি খামার। ৬৬, শান্তিনগর হোল্ডিংয়ের সি-৫ নম্বরে আলিশান ফ্ল্যাট আছে অফিস সহকারী বেলাল হোসেন চৌধুরীর। মিরপুরের পীরেরবাগে একটি বাড়ি রয়েছে নকশাকার শহীদউল্লাহ বাবুর। রয়েছে একটি গাড়িও। কনিষ্ঠ হিসাব সহকারী মোহাম্মদ হাসানের বাড্ডায় একটি ছয়তলা বাড়ি ও আফতাবনগরে প্লট রয়েছে। রেকর্ডকিপার মো. ফিরোজের উত্তরা মডেল টাউনের ১২ নম্বর সেক্টরে ছয়তলা বাড়ি রয়েছে। আফতাবনগরে ৫ কোটি টাকা বাজারমূল্যের ছয়তলা বাড়ি আছে কনিষ্ঠ হিসাব সহকারী মোহাম্মদ হাসানের।

দুদক
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close