• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

গম-ভুট্টার উৎপাদন বাড়াতে পুনঃঅর্থায়ন স্কিম

প্রকাশ:  ২৫ আগস্ট ২০২২, ১৮:৩৬ | আপডেট : ২৫ আগস্ট ২০২২, ১৯:০৭
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ ব্যাংক নিজস্ব তহবিল থেকে গম ও ভুট্টার উৎপাদন বাড়াতে ১ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই স্কিম থেকে কৃষকদের ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে। পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠনের সঙ্গে পরিচালনা নীতিমালার বিষয়েও সার্কুলারে বলা হয়েছে।

সার্কুলারে বলা হয়েছে, দেশে গম ও ভুট্টার পর্যাপ্ত চাহিদা থাকা সত্বেও এসব শস্য উৎপাদনের পরিমাণ যথেষ্ট নয়। এ কারণে খাদ্যদ্রব্যাদির সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য প্রতি বছর গম ও ভুট্টা আমদানি করতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশে গম ও ভুট্টার উৎপাদন বাড়াতে ১ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

স্কিমের নাম: গম ও ভুট্টা উৎপাদন বৃদ্ধিকল্পে বিশেষ পুনঃঅর্থায়ন স্কিম।

স্কিমের মেয়াদ: ৩০ জুন, ২০২৫ পর্যন্ত। প্রয়োজনে স্কিমের মেয়াদ বৃদ্ধি করা যাবে।

ঋণ চুক্তি সম্পাদন ও তহবিল বরাদ্দ: পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় ঋণ সুবিধাপ্রাপ্তির লক্ষ্যে কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালার আওতাভুক্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইচ্ছুক ব্যাংকগুলোকে কৃষি ঋণ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রধান কার্যালয়, ঢাকার সাথে একটি অংশগ্রহণ চুক্তি সম্পাদন করতে হবে।

অংশগ্রহণ চুক্তি সম্পাদনকারী ব্যাংকগুলোর অর্থবছরভিত্তিক চাহিদার ভিত্তিতে উক্ত ব্যাংকগুলোর অনুকূলে তহবিল বরাদ্দ করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনের নিরিখে বরাদ্দের পরিমাণ পুনঃনির্ধারণ করতে পারবে।

কৃষক পর্যায়ে ঋণ বিতরণের পর পেশকৃত পুনঃঅর্থায়ন দাবি পর্যালোচনাপূর্বক পর্যায়ক্রমে বরাদ্দকৃত তহবিলের সমপরিমাণ পুনঃঅর্থায়ন করা হবে।

কৃষক পর্যায়ে ঋণ বিতরণ: এ স্কিমের আওতায় অংশগ্রহণকারী ব্যাংকগুলোকে নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সরাসরি কৃষক পর্যায়ে ঋণ বিতরণ নিশ্চিত করতে হবে। গম ও ভুট্টা চাষের উপযোগী অঞ্চলগুলোতে এ স্কিমের আওতায় ঋণ বিতরণে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালায় উল্লেখ করা গম ও ভুট্টা চাষে ঋণ নিয়মাচার অনুযায়ী ব্যাংকগুলো কৃষকদের অনুকূলে ঋণ বিতরণ করতে পারবে।

২০২২-২০২৩ অর্থবছরের কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালার ৬.১৯.৬ অনুচ্ছেদে সংজ্ঞায়িত ভূমিহীন কৃষক (যাদের জমির পরিমাণ ০.৪৯৪ একরের কম), ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক (যাদের জমির পরিমাণ ০.৪৯৪ একর থেকে ২.৪৭ একর) এবং বর্গাচাষিদেরকে এ স্কিমের আওতায় এককভাবে জামানতবিহীন (শুধু ফসল দায়বন্ধনের বিপরীতে) সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করা যাবে। আলোচিত কৃষক ব্যতিত অন্যান্য কৃষকের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাইপূর্বক ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণের পরিমাণ নির্ধারণপূর্বক এ স্কিমের আওতায় বিতরণ করতে পারবে।

এ স্কিমের আওতায় গৃহীত ঋণ দ্বারা কোনোভাবেই পুরাতন ঋণ সমন্বয় করা যাবে না। সিআইবি রিপোর্ট অনুযায়ী কোনো কৃষক/গ্রাহক খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হলে এ স্কিমের আওতায় ঋণ প্রাপ্তির জন্য যোগ্য বিবেচিত হবে না।

সুদ/মুনাফা হার: এ স্কিমের আওতায় অংশগ্রহণকারী ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নির্ধারিত ০.৫০ শতাংশ সুদ/মুনাফা হারে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা পাবে। কৃষক পর্যায়ে সুদ/মুনাফা হার হবে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ (সরল হারে)। এই সুদ/মুনাফা হার সব গ্রাহকের ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য হবে।

ঋণের মেয়াদ: কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা অনুযায়ী ফসল উৎপাদনের পঞ্জিকা ও ঋণ পরিশোধ সূচিতে উল্লিখিত গম ও ভুট্টা চাষের উৎপাদন পঞ্জিকা ও পরিশোধ সূচি অনুযায়ী কৃষক পর্যায়ে বিতরণকৃত ঋণের মেয়াদ নির্ধারিত হবে। অংশগ্রহণকারী ব্যাংকসমূহ পুনঃঅর্থায়ন গ্রহণের তারিখ থেকে অনধিক ৮ মাসের মধ্যে আসল এবং সুদ/মুনাফা (বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত ০.৫০ শতাংশ সুদ/মুনাফা হারে) পরিশোধ করবে।

পুনঃঅর্থায়নের আবেদন পদ্ধতি: কৃষক পর্যায়ে ঋণ বিতরণ শুরুর পর অংশগ্রহণকারী ব্যাংকগুলোকে মাসিক ভিত্তিতে পুনঃঅর্থায়নের অর্থপ্রাপ্তির জন্য আবেদন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কৃষক পর্যায়ে ঋণ বিতরণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পুনঃঅর্থায়ন প্রাপ্তির লক্ষ্যে নিম্নোক্ত প্রয়োজনীয় তথ্য/কাগজপত্রসহ পরিচালক, কৃষি ঋণ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রধান কার্যালয়ে পুনঃঅর্থায়নের জন্য আবেদন করবে।

পরিশোধ পদ্ধতি: ব্যাংকের অনুকূলে ছাড়কৃত অর্থের নির্ধারিত মেয়াদ পূর্তির মধ্যেই সুদ/মুনাফাসহ গৃহীত আসলের সমুদয় অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংককে পরিশোধ করতে হবে। কৃষক পর্যায়ে বিতরণকৃত ঋণ আদায়ের সকল দায়-দায়িত্ব ঋণ বিতরণকারী ব্যাংকের ওপর ন্যস্ত থাকবে। কৃষক পর্যায়ে ঋণ আদায়ের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাওনাকে সম্পর্কিত করা যাবে না। ঋণের বকেয়া নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে পরিশোধ না হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে রক্ষিত সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের চলতি হিসাব বিকলন করে তা আদায়/সমন্বয় করা হবে। স্কিমের আওতায় প্রদত্ত ঋণের অর্থ বা এর কোন অংশের সদ্ব্যবহার হয়নি বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে প্রতীয়মান হলে এবং বিতরণকৃত ঋণের বিপরীতে ৪ শতাংশের অধিক সুদ/মুনাফা আদায় করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংক সে পরিমাণ অর্থের ওপর নির্ধারিত হারের অতিরিক্ত ২ শতাংশ হারে সুদ/মুনাফা ধার্য করে এককালীন আদায় করবে।

ঋণ বিতরণের উদ্দেশ্যে প্রচার ও কৃষক নির্বাচন: পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় গম ও ভুট্টা চাষের জন্য ৪ শতাংশ সুদ/মুনাফা হারে কৃষক পর্যায়ে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম সম্পর্কিত তথ্যাদি উল্লেখ করে ব্যাংকের বাইরে সহজে দৃষ্টিগোচর হয় এমন স্থানে ব্যানার স্থাপন করতে হবে। এ স্কিমের আওতায় কৃষকদেরকে ঋণ গ্রহণে উৎসাহিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট ফসল চাষের মৌসুম শুরু হওয়ার পূর্বেই সংশ্লিষ্ট শাখার মাধ্যমে বিশেষ ক্যাম্পেইন পরিচালনা করতে হবে। প্রকৃত কৃষক চিহ্নিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের সহায়তা নেওয়া যাবে।

স্কিমের আওতায় চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য সম্ভাব্য ঋণের চাহিদা উল্লেখপূর্বক এ বিভাগের সাথে অংশগ্রহণ চুক্তি সম্পাদন করার লক্ষ্যে সার্কুলার জারির পরবর্তী ১০ কর্মদিবসের মধ্যে এ বিভাগে আবেদন করার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এআই

বাংলাদেশ ব্যাংক,পুনঃঅর্থায়ন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close