• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

রাজার যে স্ট্যাটাসে ভিজে যায় চোখ

প্রকাশ:  ১৭ মার্চ ২০১৯, ২০:০৩ | আপডেট : ১৭ মার্চ ২০১৯, ২১:৫৭
নিজস্ব প্রতিবেদক

সাংবাদিক ও ভাওয়াইয়া শিল্পী সফিউল আলম রাজা (৪৮) মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। রোববার সকালে রাজধানীর পল্লবীর বাসায় দরোজা ভেঙ্গে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। রাজার পরিবারের সদস্যদের ধারণা, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।

রাজার জন্ম কুড়িগ্রামের চিলমারীতে। তিনি দৈনিক জনকণ্ঠ, যুগান্তর, প্রিয়ডটকমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে কাজ করেছেন। তবে প্রায় একদশকের চেয়েও বেশি সময় তিনি দৈনিক যুগান্তরে সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দৈনিক যুগান্তরে কর্মী ছাটাই করা হলে রাজা চাকরিচ্যুত হন।

যুগান্তরের চাকরি হারানোর পর থেকে ভালো ছিলেন না রাজা। গণমাধ্যমে কাজ করার ক্ষেত্র সিনিয়রদের জন্য সীমিত হয়ে ওঠায় কোথাও স্থায়ী চাকরি পাচ্ছিলেন না সফিউল আলম রাজা। শেষে চাকরির আশা ছেড়ে দিয়ে মিরপুরের পল্লবী এলাকার কলতান নামের একটি গানের স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এই ভাওয়াইয়া শিল্পী। কিন্তু সেখানেও শিক্ষার্থী পাচ্ছিলেন না খুব একটা। আর্থিক দৈন্যতায় হতাশার মধ্যে ছিলেন তিনি।

ওই গানের স্কুলের একটি কক্ষে রাজা থাকতেন। সেখান থেকেই রোববার তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

গণমাধ্যম কাজ করতে না পারা এবং বকেয়া পাওনা না পেয়ে আর্থিক দৈন্যতার মধ্যে দুনিয়া ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে সফিউল আলম রাজা নিজের বেদনা ও কষ্ট নিয়ে একটি স্যাটাস দিয়েছিলেন।

গত ২ জানুয়ারি তার দেওয়া ‘আপনাদের সব স্বপ্ন পূরণ হোক ; ১ মিনিট আমাদের কথা ভাবুন’ শীর্ষক স্ট্যাটাসটি নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো-

আপনাদের সব স্বপ্ন পূরণ হোক ; ১ মিনিট আমাদের কথা ভাবুন

-সফিউল আলম রাজা

নতুন বছর। অনেকেরই অনেক স্বপ্ন ; কতজনেই কত স্বপ্নের জাল বুনেছেন। কেউ নতুন প্রতিষ্ঠান খুলছেন কিংবা খুলবেন। কেউ এমপি হয়েছেন-মন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। কেউ নতুন বিয়ে করার স্বপ্নে বিভোর। কেউ এই বছরে বিভিন্ন দেশে ঘুরবেন বউ-স্বামী অথবা গার্লফ্রেন্ড বা বয়ফ্রেন্ড নিয়ে। কেউ এ বছর সাংবাদিক নেতা হবেন-ফলে সারাবছর মোবাইলে এসএমএস দেবেন, টিভির পর্দা কাঁপাবেন। লেজুড়বৃত্তি করে কেউ গান বাঁধবেন ; তা দিয়ে দেশ ফাটাবেন, নিজে নিজেই তৃপ্তির ঢেকুর তুলবেন।

আহা! কত্ত স্বপ্ন। প্রযুক্তির সুবাদে সবার স্বপ্নগুলো দেখার ও পড়ার সুযোগ হলো আমার। পড়তে পড়তে নিজের চোখ দুটো অজান্তেই ভিজে গেছে। সৃষ্টিশীল স্বপ্নের চেয়ে আত্মকেন্দ্রিক স্বপ্নে একাকার ফেসবুক ওয়াল। তবু ভাবি স্বপ্ন দেখুক ওরা। সুখে আছে ওরা, সুখে থাকুক।

আর আমরা যারা আছি, তারা মার খাওয়া- পোড় খাওয়া মানুষ। আমাদের স্বপ্ন থাকতে নেই, স্বপ্ন দেখতে নেই। আজ ২/১ টি কথা বলতেই চাই। আমার সাংবাদিকতার বয়স ২৫ বছর হলো। সংগীতশিল্পী হিসেবেও দীর্ঘ সময় বেতার টিভি চ্যানেলে গান করছি। সততার সাথে জীবন পরিচালনা করেছি। দেশের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ভাওয়াইয়া নিয়ে কাজ করছি।

অনেকেই আমার রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চেয়েছেন ; জেনেছেনও। তবুও সুযোগ বুঝে ল্যাং মেরেছেন। আমি প্রতিবাদ করিনি করবোনা। এতোটুকু বলতে চাই ঐতিহাসিক চিলমারি বন্দরের আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি - মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা আমার জ্যেঠা শামসুল হক বিএসসি। আমার বড় ভাই রায়হানুল হক মোফা বীর মুক্তিযোদ্ধা৷ দুজনেই আজ বেঁচে নেই। পরিবারের সবাই ভোট দেই নৌকায়।

নিজেদের এই পরিচয় কোনোদিন ব্যবহার করিনি, আজও করতে চাইনা। শুধু দু:খের জায়গাটা হলো-যখন দেশে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি, যখন দেশে সংস্কৃতিবাব্ধব সরকার-তখন আমরা যারা সৃষ্টিশীল মানুষ তারা ল্যাং খাচ্ছি কেনো? কথায় কথায় আমরা কেনো বেকার হয়ে পড়ছি। অথচ স্বাধীনতা বিরোধীরা দিব্বি নামধারী মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিদের সাথে ব্যাবসা বানিজ্য, চাকুরি প্রেম ভালোবাসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

বন্ধুরা, কিছু মনে করবেন না প্লিজ। আপনারা যখন নতুন বছরের নতুন দিনে স্বপ্ন নিয়ে বিভোর তখন আমি ১ জানুয়ারি থেকে অর্থাৎ নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে বেকার হয়ে পড়েছি। আমার চোখের সামনে অনিশ্চিত ভবিষ্যত। এই অবস্থায় আমার সৃষ্টিশীল কাজের যেমন ক্ষতি হবে, তেমনি আগামীর পথ চলাও কঠিন হয়ে পড়বে।

প্রিয় সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, আমি সর্বশেষ জাকারিয়া স্বপন ভাইয়ের প্রিয়.কম এর চিফ রিপোর্টার ছিলাম। তিনি হঠাৎ বললেন -আমরা যারা নাকি বেশি বেতন পাই, তাদের বেতন দিতে পারবেন না। তাই বিনা বাক্যে চাকুরি ছেড়ে দিলাম। নতুন বছরের আগে বেকার হয়ে গেলাম। এর প্রায় চার বছর আগে যুগান্ত রের চাকুরি আমি নিজেই ছেড়ে দিয়েছিলাম। সেখানকার পাওনা আজো পাইনি। আমি দৈনিক যুগান্তর মালিকের কাছে ২৩ লাখ টাকা পাবো। আপনারা যারা মারদাঙ্গা নেতা আছেন তারা কি আমার যুগান্তরের পাওনা টাকাটা তুলে দেয়ার ব্যবস্থা করবেন প্লিজ। আমি এই দেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এই দাবিটি করতেই পারি।

আমি একজন ক্ষুদ্র সাংবাদিক ও শিল্পী হিসেবে বেশি কিছু চাই নাই। সততার সাথে সুস্থ ভাবে বাঁচতে চাই। আমার মতো অসংখ্য মানুষ নানা সমস্যা নিয়ে নীরবে কাতরাচ্ছে। এদের পাশে দাঁড়ান।

নতুন বছরে আপনাদের সব স্বপ্ন পূরন হোক-আর আমার মতো পোড় খাওয়া মানুষদের কথা একটু মানে এক মিনিট ভাবুন - তাতেই হবে। এটাই চাওয়া।

এনই/

যুগান্তর,রাজা,সফিউল আলম রাজা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close