• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

যৌন হয়রানির অভিযোগ

ইটিভি’র প্রধান প্রতিবেদক দুই দিনের রিমান্ডে

প্রকাশ:  ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৮:৩৪ | আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৮:৪৪
নিজস্ব প্রতিবেদক

নারী সহকর্মীর প্রতি যৌন নিপীড়নমূলক আচরণের অভিযোগে গ্রেফতার একুশে টেলিভিশনের প্রধান প্রতিবেদক এম এম সেকেন্দারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত।

সোমবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা মহানগর হাকিম সত্যব্রত সিকদারের আদালতে শুনানি শেষে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

সম্পর্কিত খবর

    রোববার (০৩ ফেব্রুয়ারি) রাত আড়াইটার দিকে র‍্যাব-২ এর একটি দল সেকান্দারকে তার বনশ্রীর বাসা থেকে গ্রেফতার করে। এরপর সোমবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে তাকে হাতিরঝিল থানায় সোপর্দ করা হয়। তার বিরুদ্ধে হাতিরঝিল থানায় নারী নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী নারী।

    সোমবার হাতিরঝিল থানা পুলিশ ফাঁড়ির (উপ-পরিদর্শক) তদন্ত কর্মকর্তা মবিন আহমেদ মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্ত এম এম সেকান্দারকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী প্রশান্ত কর্মকার ও তুহিন হাওলাদার রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন।

    শুনানিতে অভিযুক্ত ব্যক্তির আইনজীবীরা বলেন, ‘মামলার এজাহারের বক্তব্যের সঙ্গে ঘটনার কোনও মিল নেই। এ আসামির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ নেই। তাকে রিমান্ডে নেওয়ার কোনও যুক্তি নেই। অভিযুক্ত জামিন পেলে পলাতক হবেন না।’

    অপরদিকে আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) জাহিদুর রহমান জামিন নামঞ্জুর করে তাকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে দুই দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন।

    বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু মোহাম্মদ ফজলুল করীম।

    তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় ভুক্তভোগী নারী মামলাটি করেছেন। মামলা নম্বর ৩। মামলায় সেকান্দার আলীকেই আসামি করা হয়েছে। তাকে আদালতে পাঠানো হয়। মামলায় ওই তরুণী যৌন হয়রানি ও উত্যক্তের অভিযোগ এনেছেন। আদালত তার রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

    মামলা করার আগে এই নারী সাংবাদিক ইটিভি কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। ২৮ জানুয়ারি চ্যানেলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর ‘এমএম সেকান্দার কর্তৃক নারী সহকর্মীকে যৌন হয়রানি’ শিরোনামে তিন পৃষ্ঠার লিখিত অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন। তাতে হয়ারনির পুরো ঘটনা তিনি ব্যাখ্যা করেছেন।

    ওই নারীর অভিযোগ, তাকে দীর্ঘদিন ধরে সেকান্দার যৌন হয়রানি করে আসছেন। বিষয়টি নিয়ে কয়েকবার টেলিভিশনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে কথা বলতে গেলেও তিনি তাদের কাছে পাত্তা পাননি।

    ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে রিপোর্টিং কোর্স করার সময় সেকান্দারের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেখানে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করতেন তিনি। তার মাধ্যমেই ইটিভিতে চাকরি পান। চাকরি পাওয়ার পর থেকেই সেকান্দার তাকে বিভিন্ন সময় যৌন হয়রানি করেছেন। কোনও কারণ ছাড়াই তাকে অনেক রাত পর্যন্ত অফিসে বসিয়ে রাখতেন। এরপর সেকান্দার তার নিজের গাড়িতে করে তাকে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে গাড়িতেও যৌন হয়রানি করতেন। এই কাজে চ্যানেলটির আরও কয়েকজন সেকান্দারকে সহায়তা করতো।

    ইটিভি’র বার্তা সম্পাদক দেবাশীষ রায় বলেন, আমাদের ভুক্তভোগী সহকর্মী লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর আমরা বিষয়টি শুনছি। আমরা চাই এর সুষ্ঠু তদন্ত হোক। কর্মক্ষেত্রে এ ধরনের হয়রানি মানা যায় না। আমাদের নারী সহকর্মী সাহস করে প্রতিকার চেয়েছেন। আমরা তার সঙ্গে আছি। আমরাও চাই বিচার।

    চ্যানেলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আলী শিকাদার বলেন, আমি অভিযোগটা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই বিষয়টি তদন্ত করতে অফিসে একটি কমিটি করে দিয়েছি। নারী সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি তাকে আইনি প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। কারণ ঘটনাটি ভয়াবহ। আমরা সেটি আঁচ করতে পেরেছি। এটা ফৌজদারি অপরাধ। এরপর তিনি মামলা করেছেন। পাশাপাশি সেকান্দারকে শোকজ করা হয়েছে। আমরা ওই নারী সহকর্মীকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার কথা জানিয়েছি। তার জন্য যা যা করার দরকার আমরা করবো।

    সেকান্দার আটক থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এ বিষয়ে এম এম সেকেন্দারের স্ত্রী নিলুফার ইয়াসমীন বলেন, বনশ্রীর বাসায় রাত দেড়টার দিকে র‍্যাবের পরিচয়ে কয়েকজন লোক এসে সেকান্দারকে ধরে নিয়ে যায়। আমার স্বামী এমন কিছু করতে পারে না এটা আমার বিশ্বাস। তাকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হচ্ছে।

    পিবিডি/আরিফ

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close