• সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

স্বজনদের বিরুদ্ধে ৩৫০ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ, যা বললেন দীপু মনি

প্রকাশ:  ২৭ জানুয়ারি ২০২২, ১৭:৩৩
নিজস্ব প্রতিবেদক

চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণের নামে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির স্বজনদের বিরুদ্ধে সাড়ে তিনশো কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ভূমি অধিগ্রহণের আগেই সেখানকার সাড়ে ৬২ একর জমি মৌজা দরের চেয়ে ২০ গুণ বেশি দাম দেখিয়ে দলিল করে নিয়েছেন তারা। ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক প্রতিবেদনে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ অভিযোগ করেছেন, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির নিকটাত্মীয় ও ঘণিষ্ঠ লোকজনের কারণে সরকারের ৩ শ’ ৫৯ কোটি ১৬ লাখ ৬১ হাজার ৭৮২ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রস্তাবিত জমির সামগ্রিক বিষয় পর্যালোচনা করে ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক প্রতিবেদনে জেলা প্রশাসক উল্লেখ করেন, চাঁদপুর সদর উপজেলার ১১৫ নম্বর লক্ষ্মীপুর সাব রেজিস্টার অফিসের নির্ধারিত বাজার মূল্য অনুযায়ী নাল, বাড়ি/বাগান, পুকুর/ডোবা ও ভিটি শ্রেণির মূল্য পর্যায়ক্রমে ১৩ হাজার ৮০২, ২৩ হাজার ৯৬৬, ৩৮ হাজার ৯৫৬ এবং ৩৩ হাজার ২৯৪ ধরে প্রকল্প প্রাক্কলন দাঁড়ায় ১ শ’ ৯৩ কোটি ৯০ লাখ ৬৫ হাজার ৫০৭ টাকা। কিন্তু দেখা যায়, সর্বশেষ নির্ধারিত মৌজা মূল্যের তুলনায় অধিগ্রহণের নিমিত্ত সংগৃহীত দরপত্র চরম অস্বাভাবিক।

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানিয়েছে, ২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর খসড়া আইন পাস হয় চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের। এর পরের বছর ৯ সেপ্টেম্বর সংসদে বিল পাস হয় বিশ্ববিদ্যালয়টির। এ নিয়ে গেজেট প্রকাশ হয় সেবছর, অর্থাৎ ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শিক্ষামন্ত্রীর জ্ঞাতসারে তার বড় ভাই জাওয়াদুর রহিম ওয়াদুদ ২০২০ সালের জুন-জুলাই মাসের বিভিন্ন তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রস্তাবিত এলাকার কয়েকটি মৌজায় জমি ৯৯ শতাংশ জমি কেনেন। একই বছরের ২১ জুলাই থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক একর ৬১ শতাংশ জমি কেনেন ডা: দীপু মনির মামাতো ভাই মো: জাহিদুল ইসলাম। শিক্ষামন্ত্রীর একান্তজন সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যানও তিনি, সে বছর একই এলাকায় জমি কেনেন এক একর। এছাড়া শিক্ষামন্ত্রীর একান্তজন লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম খান নিজের নামে এবং তার মেয়ে পিংকী ও ছেলে শাহীন খানের নামে কয়েক একর জমি কেনেন সে বছরের ৮ জুন থেকে ১৪ জুলাই এর মধ্যে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের খসড়া আইন পাস হওয়ার কয়েক মাস পরেই পরিকল্পিতভাবে ওই এলাকার বিভিন্ন মৌজার নিজেদের নামে-বেনামে জমি কেনেন শিক্ষামন্ত্রীর আত্মীয়-স্বজন। ভূমি অধিগ্রহণের দরপত্র আহ্বান করা হলে সেই জমিই দেখানো হয় বাজার মূল্যের ২০ গুণ বেশি দামে।

গুরুতর এই অভিযোগ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার বড় ভাই (জে আর ওয়াদুদ টিপু) একজন চিকিৎসক। বেশ কিছুদিন ধরে তিনি অল্প অল্প করে জমি কিনেছিলেন, হাসপাতাল ও বৃদ্ধাশ্রম করার জন্য। যখন ওই জমিটা আমরা চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চাঁবিপ্রবি) জন্য পছন্দ করি, অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরুর পর আমার ভাই তার জমি বিক্রি/হস্তান্তর করেছেন। এর বাইরে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চাঁবিপ্রবি) জন্য যে জমি চিহ্নিত আছে, সেখানে আমার বা আমার পরিবারের কারও কোনো জমি নেই। গত ১৩ বছরে আমার নির্বাচনী এলাকায় অনেক অবকাঠামো হয়েছে, হচ্ছে। আজ পর্যন্ত অধিগ্রহণকৃত জায়গায় আমার বা আমার পরিবারের কারও এক ছটাক জমিও ছিল না। বাস্তবিক অর্থে চাঁদপুরে আমার কোনো জমিই নেই।’

যাদের জমি আছে বলে নাম এসেছে- জাহিদুল ইসলাম রোমান ও সেলিম খান; তারা রাজনৈতিক ও আত্মীয়তার কারণে ঘনিষ্ঠ স্বীকার করে ডা. দীপু মনি বলেন, ‘ওখানে আমার পরিবার বলতে আমার একমাত্র ভাই। তবে জাহিদুল ইসলাম রোমান আমার জ্ঞাতি হিসেবে আত্মীয়। জাহিদুল ইসলাম রোমানের নানা এবং আমার দাদা, তারাও ডিস্টেন্ট (দূর সম্পর্কীয়) কাজিন। সেই অর্থে তিনি আমার ভাই। তার থেকে অনেক বড় সম্পর্ক হলো—রাজনৈতিকভাবে আমরা ঘনিষ্ঠ। আমার রাজনৈতিক পরিবার অনেক বড়। চাঁদপুরে আমার রাজনৈতিক পরিবারের মানুষের সংখ্যা লাখেরও বেশি। সেলিম খান অধিগ্রহণকৃত এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনিসহ প্রতিটি ইউনিয়ন চেয়ারম্যানই আমার ঘনিষ্ঠ, এটাই স্বাভাবিক এবং এটাই হওয়া উচিত।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘যখনই অধিগ্রহণ হয়, সেখানে জমি কেনার একটা প্রবণতা থাকে। কিংবা যাদের জমি আছে, স্থাপনা বানিয়ে ফেলে। এই অনুশীলন বাংলাদেশের সর্বত্র আছে। আমার ওখানেও (চাঁদপুর) সেটা ঘটে থাকতে পারে। সেটা আমি জানি না। কে আমার সঙ্গে রাজনীতি করেন বা করেন না, কে জমি কিনেছেন? ওটা আমার দেখার বিষয় নয়। ওটা দেখার সময়ও নেই আমার। রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠ বা আত্মীয়-অনাত্মীয় কেউ জমি কিনলেও আমার কিছু বলার নেই।’

চাঁদপুরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণে কারসাজির মাধ্যমে জমির উচ্চমূল্য নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

পূর্বপশ্চিম-এনই

চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,দীপু মনি
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close