• রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

ইবাদত বন্দেগিতে পালিত হচ্ছে পবিত্র শবে কদর

প্রকাশ:  ২৮ এপ্রিল ২০২২, ২০:৪৭
নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশজুড়ে নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত ও জিকির-আসগারের মধ্য দিয়ে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে পালিত হচ্ছে মহিমান্বিত রজনী পবিত্র লাইলাতুল কদর। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা দেশ ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনায় মহান আল্লাহর দরবারে বিশেষ মোনাজাতও করছেন।

বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) দিনগত রাতে ধর্মপ্রাণ মুসল্লীরা পালন করছে পবিত্র শবে কদর বা লাইলাতুল কদর। সন্ধ্যার পর থেকেই দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পবিত্র এই রজনী উপলক্ষে বিশেষ ইবাদতের মাধ্যমে রাতটি পালন শুরু করে।

মাহে রমজানের এ রাতেই মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর পবিত্র কোরআন নাজিল হয়। তাই এ রাত সমগ্র মুসলিম উম্মাহর কাছে এক পুণ্যময় ও মহিমান্বিত রাত হিসেবে বিবেচিত। ইসলাম ধর্মে এ রাতের ইবাদতকে বিশেষ তাৎপর্যময় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

‘শবে কদর’ হলো একটি ফারসি শব্দ। যার অর্থ মর্যাদার রাত বা ভাগ্যরজনী। রমজান মাসের শেষ ১০ দিনের যে কোনও বেজোড় রাতে হতে পারে শবে কদর। এ রাতকে বিশেষ মর্যাদা দিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে শবে কদর সন্ধান করো।’ (মুসলিম)।

কদরের রাতে মানবজাতির ভাগ্য পুনর্নির্ধারণ করা হয়। তাই লাইলাতুল কদরের রাতটি মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে অনেক ফজিলতপূর্ণ ও বরকতময়। পবিত্র কোরআনে এ রাতকে হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ রাত ঘোষণা করেছেন মহান আল্লাহ। এই রাতকে কেন্দ্র করে ‘কদর’ নামে একটি সুরাও নাজিল হয়।

মহান আল্লাহ তায়ালা লাইলাতুল কদরের রাতকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন। হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও এ রাতের ইবাদত উত্তম। এই রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষিত হয়। পবিত্র এই রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আল্লাহর নৈকট্য ও রহমত লাভের আশায় ইবাদত বন্দেগি করে থাকেন।।

অবশ্য ২০ রমজানের পর যেকোনো বিজোড় রাতে কদর হতে পারে। তবে ২৬ রমজানের দিবাগত রাতেই লাইলাতুল কদর আসে বলে আলেমদের অভিমত। এ রাতে মানবজাতির ভাগ্য পুনর্নির্ধারণ করা হয়। তাই মুসলমানদের কাছে এই রাত অত্যন্ত পূণ্যময় ও মহাসম্মানিত। এ রাতে সূর্যাস্তের পর থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত ঊর্ধ্বগত থেকে পৃথিবীর বুকে এত বেশি কল্যাণ ও বরকত অবতীর্ণ হয়, যা ভূপৃষ্ঠে সংকুলান হয় না।

কদরের আরেক অর্থ তাকদির ও আদেশ। এ রাতে পরবর্তী এক বছরের অবধারিত তাকদির ফেরেশতাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এতে প্রত্যেক মানুষের হায়াত, রিজিক, ইত্যাদির পরিমাণ নির্দিষ্ট ফেরেশতাকে লিখে দেওয়া হয়।

মহিমান্বিত এ রাত সর্ম্পকে হাদিস শরীফে অসংখ্য ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে। এমনকি কোরআন শরীফে সুরা কদর নামে স্বতন্ত্র একটি পূর্ণ সুরা নাজিল হয়েছে। এই সুরাতেই শবে কদরের রাত্রিকে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম বলে বর্ণিত হয়েছে। পূর্ববর্তী নবী এবং তাদের উম্মতগণ দীর্ঘায়ু লাভ করার কারণে বহু বছর আল্লাহর ইবাদত করার সুযোগ পেতেন। সাহাবায় কেরামগণের এ আক্ষেপের প্রেক্ষিতে চিন্তা দূর করার জন্য সুরাটি নাজিল হয়।

আল্লাহ কোরআনে ঘোষণা করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আর কদরের রাত সম্বন্ধে তুমি কি জানো? কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাতে ফেরেশতারা ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি, বিরাজ করে উষার আবির্ভাব পর্যন্ত।’ (সূরা আল- কদর, আয়াত ১-৫)।

পবিত্র রমজান মাসে লাইলাতুল কদরে পবিত্র আল কোরআন নাজিল হয়েছিল। তাই মহান আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আজ দিনগত রাতে মসজিদসহ বাসাবাড়িতে এবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন। এ রাতে মুসলমানরা নফল নামাজ আদায়, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আসকার, দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও আখেরি মোনাজাত করবেন।

পবিত্র লাইলাতুল কদর উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণীতে পবিত্র লাইলাতুল কদর উপলক্ষে দেশবাসীসহ বিশ্বের সকল মুসলমানকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়েছেন।

পবিত্র শবে কদর উপলক্ষে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ উপলক্ষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে রাতব্যাপী ওয়াজ মাহফিল, ধর্মীয় বয়ান ও আখেরি মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে।

পূর্বপশ্চিম/ এনই

পবিত্র লাইলাতুল কদর,শবে কদর
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close