• রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

সনদ সত্যায়ন ঘিরে দালালচক্র

প্রকাশ:  ২৩ এপ্রিল ২০২৩, ১২:১৯
নিউজ ডেস্ক

পড়াশোনা বা চাকরি নিয়ে বিদেশে যেতে বেশ কিছু সনদ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে সত্যায়ন করাতে হয়। অফিস খোলার দিনগুলোতে বিনা মূল্যে এসব সনদ সত্যায়ন করার ব্যবস্থাও রেখেছে সরকার। তারপরও অল্প সময়ে এমনকি অফিস সময়ের বাইরে সনদ সত্যায়ন করিয়ে দিতে একটি দালাল চক্র গড়ে উঠেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং আইন মন্ত্রণালয় থেকে সবচেয়ে বেশি সনদ সত্যায়ন করাতে হয়। সেজন্য এসব মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কাউন্টারে নির্দিষ্ট সময়ে কাগজপত্র জমা দিয়ে স্লিপ সংগ্রহ করতে হয়। অফিস শুরুর পর থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কাগজপত্র জমা নেয়া হয় এবং দুপুর থেকে অফিস শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত সেগুলো ফেরত দেয়া হয়।

কর্মকর্তারা বলছেন, বিদেশে পড়াশোনা বা চাকরির জন্য শিক্ষাগত সনদ, নিকাহ সনদ, জন্ম সনদসহ আরও কয়েক ধরনের সনদ সত্যায়নের প্রয়োজন হয়। মন্ত্রণালয়ে সবার প্রবেশের অনুমতি না থাকায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের গেইটে এসব সনদ জমা নেয়া হয়। একদিনে যত সনদ জমা নেয়া হয়, সেদিনই তা সত্যায়ন করে ফেরত দেয়া হয়। সনদ সত্যায়ন করতে টাকা লাগে না।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, প্রেসক্লাবের উত্তর পাশে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দক্ষিণে পরিবহন পুল ভবনে আইন মন্ত্রণালয় এবং সচিবালয়ের ভেতরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন ধরনের সনদ সত্যায়ন করা হয়। এই তিন দপ্তরে সত্যায়নকে ঘিরে প্রেসক্লাবের বিপরীতে ফটোকপির দোকানগুলোতে দাললারা ওৎ পেতে থাকেন। কেউ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাউন্টারে সনদ জমা দিতে না পারলে তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সনদ সত্যায়নের ব্যবস্থা করেন তারা। অনেক সময় একইদিনে এই তিনটি সরকারি দপ্তর থেকে সনদ সত্যায়ন করিয়ে দেয়ার কন্ট্রাকও নেন কেউ কেউ।

শফিকুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী জানান, বৃত্তি নিয়ে তিনি বিদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। এরপর খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, তাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বেশ কিছু সনদপত্র সত্যায়ন করাতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সনদ সত্যায়ন করে সেগুলো হাতে পাওয়ার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়ার সময় শেষ হয়ে যায়। ফলে একজন দালালকে ধরে দেড় হাজার টাকা দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একদিনেই সব সনদ সত্যায়ন করিয়ে নেন তিনি। তার ভাষ্য, ‘দালাল ধরে কাজটি না করাতে পারলে আরও একদিন আমাকে ঢাকায় থাকতে হতো। একদিন ঢাকায় থাকা-খাওয়ার জন্য যত টাকা খরচ হতো তার থেকে অনেক কম টাকায় একজনকে দিয়ে কাজটি করিয়ে নিতে পেরেছি। এ ছাড়া সনদগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানোর জন্য ‍খুব বেশি সময়ও হাতে ছিল না।’

সনদ সত্যায়নের সঙ্গে জড়িত এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘অনেকেই বিপদে পড়ে আমাদের কাছে আসেন, আমরা সাধ্যমতো তাদের সহায়তা করি। সনদ সত্যায়ন করাতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যাওয়া ছাড়াও কর্মকর্তাদের অনুরোধ করে কাজগুলো করাতে হয়। এতে অনেক সময় এবং খরচ লাগে বলেই আমরা যার কাছ থেকে যেমন পারি তেমন টাকা নিই। টাকা না নিলে আমরা চলব কীভাবে?’

অফিস সময়ের পরেও কীভাবে সত্যায়ন করান—এমন প্রশ্নের জবাবে মাসুম নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘যারা সই করেন তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। আমরা সত্যায়ন করিয়ে দিতে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে যে টাকা নিই সেখান থেকে কিছু টাকা তাদেরও দিই।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভ্যর্থনা কক্ষে সকাল ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সত্যায়নের জন্য সনদ জমা নিয়ে স্লিপ দেয়া হয়। আর দুপুর ৩টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সত্যায়িত সনদ ফেরত দেয়া হয়। সত্যায়ন ঘিরে দালালচক্র গড়ে ওঠায় এ বিষয়ে সেবাপ্রার্থীদের সতর্ক করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এক বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রণালয় বলছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার সেবা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেয়া হয়। তাই এই সেবা পেতে আর্থিক লেনদেন করে প্রতারিত হবেন না।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কনস্যুলার সেবা পেতে কী কী কাগজপত্র সঙ্গে আনতে হবে, তা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে (সিটিজেন চার্টার) দেখার অনুরোধ করা হয়েছে। পরররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, বিদেশি আম-মোক্তারনামা (পাওয়ার অব অ্যাটর্নি) ছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সব সেবা সাধারণত একদিনেই দেয়া হয়। বিদেশে আম-মোক্তারনামা সর্বোচ্চ পাঁচ দিনের মধ্যে দেয়া হয়। তাই দ্রুত সেবার নামে আর্থিক লেনদেন করে প্রতারিত হবেন না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কনস্যুলার সেবা পেতে আর্থিক লেনদেনের ঘটনা প্রমাণসহ জানাতে একটি মোবাইল নম্বর ও ই-মেইল আইডিও দেয়া হয়েছে।

সনদ সত্যায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা কারো কাছ থেকে টাকা নিয়ে সত্যায়ন করি—এই অভিযোগ ঠিক নয়। অনেক সময় অনেকের হাতে সময় থাকে না, তখন তাদের অনুরোধে কাউন্টারে সনদ জমা না দিয়ে হাতে হাতে নিয়ে এলেও সত্যায়ন করে দেয়া হয়। এ ছাড়া পরিচিত অনেকেই তাদের স্বজনদের সনদ হাতে হাতে সত্যায়ন করিয়ে নেন।’

সনদ,দালাল
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close