• শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

আরও কমবে লোডশেডিং

প্রকাশ:  ২৪ জুন ২০২৩, ১৩:২৯
নিউজ ডেস্ক

লোডশেডিং পরিস্থিতির উন্নতির মধ্যে আরও স্বস্তির খবর। শুক্রবার ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা নিয়ে একটি জাহাজ পটুয়াখালীর পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিজস্ব জেটিতে ভিড়েছে। ফলে রোববার থেকে চালু হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রা। যার ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ আরও বাড়বে। উন্নতি হবে লোডশেডিং পরিস্থিতির।

কয়লার অভাবে পায়রার ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম একটি ইউনিট গত ২৫ মে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর গত ২ জুন ৬৬০ মেগাওয়াটের দ্বিতীয় ইউনিটও বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় দেশজুড়ে চলছিল তীব্র লোডশেডিং। পায়রায় উৎপাদন কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে লোডশেডিং পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়।

পায়রায় কয়লার জোগানে সরকারের উদ্যোগের পর আট লাখ টন কয়লার লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) বা ব্যাংক ঋণপত্র খুলেছে সরবরাহকারী চীনা প্রতিষ্ঠান সিএমসি। এরই অংশ হিসেবে গতকাল এল প্রথম জাহাজ।

পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি ও চীনের সরকারি প্রতিষ্ঠান সিএমসির সমান মালিকানাধীন। কেন্দ্রটি পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ-চীন পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) নামে একটি কোম্পানি গঠন করা হয়েছে।

বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এম খোরশেদুল ইসলাম বলেন, কয়লা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সিএমসি আট লাখ টন কয়লার এলসি দিয়েছে। আজ (শুক্রবার) প্রথম জাহাজটি এসেছে। পর্যায়ক্রমে আট লাখ টন আসবে। কাল রোববার থেকে কেন্দ্রটি চালু হতে পারে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পায়রা পর্যন্ত আসতে কয়লার দাম পড়ছে টনপ্রতি ১১০ ডলার। এতে বিদ্যুতের উৎপাদন ইউনিটপ্রতি নেমে এসেছে গড়ে পাঁচ টাকার মতো।

কেন্দ্রটির প্রতিটি ইউনিটে এক দিনে ছয় হাজার টন কয়লার প্রয়োজন হয়। দুটি ইউনিটে ১২ হাজার টন কয়লার প্রয়োজন হয়। এ হিসাবে আট লাখ টন কয়লা দিয়ে একটানা ৬৬ দিন চলবে কেন্দ্রটি।

সিএমসি ছয় মাসের বাকিতে কয়লা সরবরাহ করে পায়রাকে। ছয় মাস পর গিয়ে বিসিপিসিএল সিএমসিকে কয়লার অর্থ পরিশোধ করে। গত মার্চ মাসে সিএমসির কয়লা সরবরাহের ছয় মাস বকেয়া টাকা শোধের নির্দিষ্ট সময় শেষ হয়। তবে ওই সময় অর্থ দেয়া হয়নি সিএমসিকে। এরপর আরও তিন মাস বাকিতে সব মিলিয়ে নয় মাস বাকিতে কয়লা দেয় সিএমসি। এতে গত মে মাস পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির মোট পাওনার পরিমাণ দাঁড়ায় ৪২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থ পরিশোধ না করায় চীনের মুদ্রা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশে কয়লা সরবরাহের ওপর সিএমসিকে নিষেধাজ্ঞা দেয়। মজুত কয়লা ফুরিয়ে গেলে পায়রা বন্ধ হয়ে যায়। এতে সারা দেশে লোডশেডিং পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটে।

এ পরিস্থিতিতে সিএমসিকে বকেয়া ৪২৯ মিলিয়ন ডলার থেকে ১৩১ মিলিয়ন ডলারের জোগান দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। আংশিক কয়লার অর্থ পরিশোধের পরই ব্যাংকে এলসি খোলে সিএমসি। গতকাল জাহাজে কয়লাও উত্তোলন শুরু হয়েছে। তবে কম দামে কয়লার সুযোগ নিতে পারছে না পায়রা। কারণ সিএমসির বকেয়া ২৯৮ মিলিয়ন ডলার শোধ করলে তারা ছয় মাসের কয়লার এলসি এখনই খুলে রাখতে পারত। বকেয়া অর্থ পুরোটা পরিশোধ না করায় সিএমসি মাত্র দুই মাসের কয়লার এলসি করেছে।

পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট উৎপাদন শুরু করে ২০২০ সালের ১০ জানুয়ারি এবং দ্বিতীয় ইউনিট শুরু করে একই বছরের ২৬ আগস্ট। পায়রার একই স্থানে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে।

লোডশেডিং পরিস্থিতির উন্নতি হবে

জুনের প্রথম সপ্তাহের শেষ দিকে তীব্র লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে দেশ। সারা দেশে তীব্র দাবদাহ বয়ে যাওয়ার কারণে এ সময় চাহিদা বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৫০০ মেগাওয়াটের বেশি। এ সময় ২ হাজার ৫০০ মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং ছিল। খোদ ঢাকায় অন্তত ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং পড়ে।

পরিস্থিতি উন্নতিতে দ্রুত মনোযোগ দেয় সরকার। এর মধ্যে আদানি ও এস আলমের পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ নেয়া শুরু করে বিদ্যুৎ বিভাগ। পাশাপাশি ফার্নেস তেলভিত্তিক কেন্দ্র থেকে পাঁচ হাজার মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ নেয় সরকার। এমনকি ডিজেলভিত্তিক কেন্দ্র থেকে এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জরুরি পরিস্থিতির জন্য তৈরি রাখা হয়।

এসব পদক্ষেপের পাশাপাশি বৃষ্টি নামায় দাবদাহের প্রকোপ কমতে থাকে। ফলে বিদ্যুতের চাহিদাও কমে যায়, এতে লোডশেডও অনেকটাই কমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

গত বৃহস্পতিবার দেশে লোডশেডিং ছিল প্রায় ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। আর গতকাল শুক্রবার লোডশেড গিয়ে দাঁড়ায় ৪০০ মেগাওয়াটে।

সরকার গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্র থেকে ৬ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পরিকল্পনা নিয়ে তার বড় অংশই বাস্তবায়ন করে।

এর পরই রয়েছে ফার্নেস তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে পাঁচ হাজার মেগাওয়াট। ভারতের ঝাড়খন্ডের আদানি থেকে ৯০০ মেগাওয়াট, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট, চট্টগ্রামের বাঁশখালীর এস আলম থেকে ৫০০ মেগাওয়াট, বরগুনার আমতলী বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৩০০ মেগাওয়াট ও রামপাল থেকে ৩০০ মেগাওয়াট। এই কেন্দ্রগুলো সবই কয়লাভিত্তিক, এ থেকে আসবে ৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে পায়রা ২৫ জুন থেকে চালু হওয়ার কথা রয়েছে, আর এস আলমের কেন্দ্রটি আগামী ১৭ জুন থেকে চালু হতে পারে। এ ছাড়া সৌরবিদ্যুৎ থেকে আসবে ৪০০ মেগাওয়াট ও জলবিদ্যুৎ থেকে ৫০ মেগাওয়াট। সব মিলিয়ে ১৫ হাজার ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুনির্দিষ্ট ক্ষমতা তৈরি করেছে সরকার।

তারা বলছেন, এ ছাড়া এক হাজার মেগাওয়াটের ডিজেলভিত্তিক কেন্দ্র উৎপাদনের জন্য তৈরি রাখা হয়েছে। যদি পরিস্থিতির অবনতি হয় এই এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ডিজেল থেকে আসবে। যদি বিশেষ প্রয়োজন না পড়ে, তাহলে ডিজেল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে না সরকার। চলতি গ্রীষ্মে বিদ্যুতের বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে এভাবেই রক্ষা পেতে চায় সরকার।

যদি তীব্র দাবদাহ শুরু হয় দেশে, তাহলে বিদ্যুতের চাহিদা পিক আওয়ার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ১৭ হাজার মেগাওয়াট। অবশ্য সরকারের দাবি সে সময় চাহিদা থাকে ১৬ হাজার মেগাওয়াট। আর এই ১৬ হাজার মেগাওয়াটের পুরোটা যাতে উৎপাদন করতে পারে, সে জন্য জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করেছে সরকার।

এ পরিস্থিতিতে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ফের চালু হলে লোডশেড অনেকটাই কমে যাওয়ার কথা।

লোডশেডিং
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close