• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

ছাত্রলীগ কি আদর্শিক সংকটে পড়েছে?

প্রকাশ:  ২০ আগস্ট ২০২৩, ০৬:০০
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

মানবতাবিরোধী অপরাধে সাজা পাওয়া জামায়াতের কোনো নেতার জন্য এই প্রথম গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।

রাজনীতির ময়দানে যাকে সমর্থনের বিরল প্রকাশ্য প্রদর্শন বলে অভিহিত করা হচ্ছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের অন্য নেতাদের ফাঁসিতে ঝোলানো হলেও প্রধান বিরোধী দল বিএনপি তাতে নীরব ছিল।

একইভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাঈদীকা প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ হিসেবে বর্ণনা করে তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কিছু নেতা-কর্মীও।

জামায়াত নেতার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করায় অন্তত ৫০ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, “সাম্প্রতিক ঘটনা ছাত্রলীগের আদর্শিক সংকট দেখাচ্ছে না। যারা যুদ্ধাপরাধীর প্রতি সহানুভূতিশীল তাদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স দেখিয়েছি।”

তিনি বলেন, “ছাত্রলীগ ‘অনুপ্রবেশকারীদের’ বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযানের পরিকল্পনা করছে।”

ছাত্রলীগ সভাপতি আরও বলেন, “আমরা অস্বীকার করতে পারি না, জামায়াত ধর্মের নামে একটি প্রজন্মকে মগজ ধোলাই করেছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ছিল। শুধু আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগই জামায়াত ও তাদের অপপ্রচারকে চ্যালেঞ্জ করেছিল।”

শুক্রবার পর্যন্ত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে জামালপুরে ১৮, চট্টগ্রামে ১৬, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৯, পাবনায় ৭, নরসিংদীতে ৬, সাতক্ষীরায় ৩ ও গোপালগঞ্জে ৬ জন বহিষ্কৃত হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে সংগঠনের নীতি ও আদর্শবিরোধী কাজ করার অভিযোগ এনে নিজ নিজ জেলা ছাত্রলীগ সাময়িক বহিষ্কার করেছে। একই সঙ্গে স্থায়ী বহিষ্কারের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে।

সাময়িক বরখাস্ত হওয়া নেতাদের কেউ কেউ উপজেলা ও তৃণমূল কমিটির সদস্যও।

পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ছাত্রলীগের একাধিক সাবেক নেতা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ছাত্র সংগঠনটি আদর্শিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।

তারা বলছেন, আওয়ামী লীগের উপকমিটির কিছু নেতা-কর্মীও সাঈদীর জন্য শোক জানিয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই ছাত্রলীগের নেতা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা এই প্রতিবেদককে বলেন, “বহুদিন ধরেই জামায়াতের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সদস্যরা আওয়ামী লীগের ছাত্র শাখায় বিভিন্ন পদে আসীন হচ্ছেন বলে গুঞ্জন উঠেছিল। দশক। ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় ছাত্রশিবিরের নেতারা দল পরিবর্তন করে ক্ষমতায় থাকা দল থেকে কিছু সুবিধা পেতে শুরু করে।”

তিনি বলেন, “এই গুঞ্জনের অন্যতম প্রমাণ সাঈদীর জন্য শোক বার্তা।”

ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা ভবিষ্যতে এই ধরনের আরেকটি “বিশ্রী পরিস্থিতি” এড়াতে কর্মীদের অতীত ইতিহাস যাচাইয়ের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

একজন নেতা বলেন, “যদি এরকম আরেকটি ঘটনা ঘটে, তাহলে তা আওয়ামী লীগের সুনাম নষ্ট করবে, কারণ দলটি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের অঙ্গীকার নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে।”

আরেক নেতা বলেন, “কমিটিতে পদ পাওয়ার জন্য দলীয় আদর্শের প্রতি নিবেদন দেখানোর চেয়ে ‘বড় ভাই’কে সন্তুষ্ট করাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।”

শুক্রবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাত্র সংগঠনের “অনুপ্রবেশকারীদের” চিহ্নিত করে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দেন।

তিনি বলেন, “অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করা উচিত। তাদের ছাত্রলীগে থাকার কোনো অধিকার নেই। তাদের দলীয় পদ যাই হোক না কেন, অনুপ্রবেশকারী এখনও একজন অনুপ্রবেশকারী। তাদের অবশ্যই চিহ্নিত করা উচিত, এটি আপনার পবিত্র দায়িত্ব।”

২০১০ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর থেকে ৮৩ জন যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে ৩৪টি মামলার রায় দিয়েছে।

২০১৮ সালের আগস্ট পর্যন্ত অভিযুক্তদের মধ্যে, ৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত।

সাঈদী,ছাত্রলীগ
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close