• সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ৬ বছর, প্রত্যাবাসন অনিশ্চয়তায় বাড়ছে ঝুঁকি

প্রকাশ:  ২৫ আগস্ট ২০২৩, ১০:৩৬
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা, নির্যাতনের মুখে সাত লাখের অধিক রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেয়। এর আগে থেকে আশ্রয় নেওয়া আরও সাড়ে তিন লাখ রোহিঙ্গাসহ বর্তমানে ১২ লাখেরও অধিক রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে বসবাস করছে।

রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ ছাড়ার ৬ বছর হলেও প্রত্যাবাসন নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়েছে। যদিও সরকারের শরণার্থী বিষয়ক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। শিগগিরই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করা হবে।

কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াটি চলমান। রোহিঙ্গারা রাখাইনে নিজেদের ভিটে-মাটিতে ফিরতে চায়। তারা রাখাইনে নির্মিত মডেল ভিলেজে যাবে না। তাদের নিরাপত্তা ও নাগরিকত্বের দাবিও রয়েছে। সম্প্রতি মিয়ানমার সরকার কিছু রোহিঙ্গাকে নিজেদের ভিটে বাড়িতে প্রত্যাবাসনের সম্মতি দিয়েছে। শিগগিরই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে।

রোহিঙ্গাদের মধ্যে বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা

শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়রা হুমকির মুখে রয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রতিনিয়ত অপরাধ বাড়ছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রতিদিন কোনো না কোনো অপরাধ সংঘঠিত হচ্ছে। হত্যাকাণ্ড, গোলাগুলি, মাদক, ধর্ষণ, অপহরণ এখন নিত্য-নৈমত্তিক ব্যাপার।

গত ছয় বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১৮৬টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এর মধ্যে গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে এ বছরের ২৪ আগস্ট পর্যন্ত ৮৫টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এর আগের পাঁচ বছরে ১০১টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল। এসব হত্যাকাণ্ডের পেছনে রয়েছে চাঁদাবাজি, অপহরণ, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা এবং আধিপত্য বিস্তার। এ নিয়ে আরসা-আরএসওর প্রকাশ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে।

জেলা পুলিশ ও এপিবিএনের তথ্যমতে, এ বছরের আট মাসে (২৪ আগস্ট পর্যন্ত) একাধিক সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে ৪৬ জন নিহত হয়েছেন; এর আগের চার মাসে ৩৯ জন নিহত হন। এর মধ্যে ১৮ জন রোহিঙ্গা মাঝি, ১২ জন আরসার সদস্য, একজন স্বেচ্ছাসেবক ও অন্যরা সাধারণ রোহিঙ্গা।

জেলা পুলিশের তথ্য বলছে, গত ছয় বছরে ক্যাম্পে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ-গোলাগুলিতে দুই শতাধিক রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়। গত ছয় বছরে থানায় হত্যা মামলা হয়েছে ১৩১টি, মানবপাচারের মামলা হয়েছে ৩৭টি, মাদকপাচারের মামলা হয়েছে ২,০৫৭টি, ধর্ষণের মামলা হয়েছে ৯৪টি, অস্ত্র মামলা হয়েছে ২৩৮টি, ডাকাতি মামলা হয়েছে ৬২টি, অপহরণ মামলা হয়েছে ৪৪টি এবং অন্যান্য অপরাধে মামলা হয়েছে ২৪৩টি।

কূটনৈতিক জটিলতায় প্রত্যাবাসন কার্যক্রম আটকে

এই অবস্থায় রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন জরুরি। তবে কূটনৈতিক জটিলতায় প্রত্যাবাসন কার্যক্রম আটকে আছে বলে মনে করা হয়। যদিও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করেছিল মিয়ানমার সরকার। কিন্তু সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি। এতে দীর্ঘ হচ্ছে রোহিঙ্গা সংকট।

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করতে মিয়ানমারকে চাপ রাখার কথা সম্প্রতি জানিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইমোন গিলমোর। একইসঙ্গে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে ইইউ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার কথাও জানান তিনি।

রোহিঙ্গা,মিয়ানমার
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close