• রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

সিলেটে তেলের সন্ধান, কতোটা সম্ভাবনাময়?

প্রকাশ:  ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:৩৯
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

বাংলাদেশে ৩৭ বছর পর আবারো ভূগর্ভে তেলের সন্ধান মিলেছে। সিলেটে একটি গ্যাসক্ষেত্রে কূপ খননের সময় সেখান তেল পাওয়া যায়। রোববার (১০ ডিসেম্বর) দুপুর নিজ মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে খবরটি জানান বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু।

সিলেটে জৈন্তাপুর-গোয়াইনহাট এলাকায় ১০ নম্বর কূপের প্রথম স্তরেই তেলের সন্ধান পাবার কথা জানান তিনি। এছাড়া চারটি স্তরে গ্যাস পাওয়া গিয়েছে বলেও নিশ্চিত করেন প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, এই অঞ্চলে গত দুই মাস আগে ড্রিল শুরু হয়। ২৫৭৬ মিটার খনন সম্পন্ন হয়েছে এখানে। এর চারটি স্তরে আমরা গ্যাসের উপস্থিতি পেয়েছি।

নসরুল হামিদ বলেন, একদম নিচে গ্যাসের প্রবাহ ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত, আর প্রেশার ৩২৫০ পিএসআই। এখানে গ্যাসের মজুদের পরিমাণ ৪৩ দশমিক ১০০ বিলিয়ন ঘনফুট।

এরপরই প্রতিমন্ত্রী জানান, ১৩৯৭ থেকে ১৪৪৫ মিটার গভীরে যে জোন সেখানে ৮ই ডিসেম্বর তেলের উপস্থিতি মিলেছে।

‘এখন প্রতি ঘণ্টায় যে প্রেশার তাতে ৩৫ ব্যারেল তেল উঠছে, প্রথম দিন দুই ঘণ্টা ৭০ ব্যারেল তেল উঠেছে। এখন বন্ধ রাখা হয়েছে।’

তবে ঠিক কতো বড় এই খনি এবং কী পরিমাণ তেল এখান থেকে পাওয়া যেতে পারে তা নিশ্চিত হতে ৪ থেকে ৫ মাস সময় লাগবে বলে তিনি জানান। আরো বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তেল পাঠানো হয়েছে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড, বুয়েট এবং সিলেট গ্যাসফিল্ডে।

তবে তেলের মজুদ সম্পর্কে একটা প্রাথমিক ধারণা দেন প্রতিমন্ত্রী।

তিনি আশা করেন, যদি ২৫৪০ ও ২৪৬০ মিটার গভীরে একযোগে উৎপাদন করা হয় তাহলে এটি আট থেকে ১০ বছর স্থায়ী হবে। আর ২০ মিলিয়ন ঘনফুটে তেল উৎপাদন করা হলে তা ১৫ বছরের বেশি টিকে থাকবে। আর এর গড় মূল্য ৮৫০০ কোটি টাকা দাঁড়াবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তবে এখনি এ থেকে ব্যাপক পরিমাণ তেল আসবে এমন উচ্চাভিলাষের ব্যাপারে সতর্ক করে দেন জ্বালানী বিশেষজ্ঞরা।

‘সিলেটের ঐ অঞ্চলে এর আগেও তেলের সন্ধান মিলেছে। কিন্তু এই অঞ্চলে ছোট ছোট স্তরগুলোর বিস্তৃতি খুব বেশি হয় না,’ বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম। তিনি এটাকে আপাতত আরেকটা ছোট স্তর বলেই ভাবতে চান।

বাংলাদেশে সবশেষ ১৯৮৬ সালে হরিপুরে তেলের সন্ধান মিলেছিলো। সেখান থেকে পাঁচ বছর তেল উত্তোলন করা হয়। এরপর প্রায়শই ছোট-বড় গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান মিললেও বাংলাদেশে তেলের অস্তিত্ব সহসা পাওয়া যায়নি।

এ কারণেই এটাকে আশাব্যঞ্জক বলছেন সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান।

‘আমরা গ্যাসের দেখা পাই, কিন্তু তেল পাওয়া যাচ্ছিলো না। এখন এই তেলক্ষেত্রের সন্ধান পাওয়া আমাদের উৎসাহ দিচ্ছে যে, এখানে তেল আছে। তার মানে ভবিষ্যতে আরো পাওয়া যাবে,’ বলেন তিনি।

তবে আগের তেলক্ষেত্রের থেকে এটির স্তর আলাদা। দুইটার মধ্যে যদি সংযোগ থাকতো তাহলে এটি বড় আকারে বিস্তৃত হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো বলে জানান বদরুল ইমাম।

কিন্তু তিনিও বলছেন ভবিষ্যতে এরকম আরো তেলের স্তর পাওয়া যেতে পারে। কারণ ভূতাত্ত্বিকভাবেই সিলেট অঞ্চলে গ্যাস ও তেলের সন্ধান মেলে বেশি।

‘আমরা গ্যাস বেশি পাই, কিন্তু তেল কম পেলেও এখানে কিন্তু ভূগর্ভের বিভিন্ন জায়গায় কম হলেও তেল জমা হয়ে আছে। তাই এরকম সামনে আরো পাবো। কিন্তু এটা যেন অতি আশাবাদী না করে বা সরকারের তরফ থেকে যেন খুব বড় করে দেখানো না হয়।’

এক্ষেত্রে তিনি পদ্ধতিগত উত্তোলনের দিকে মনোযোগ দেয়ার কথা বলেন।

অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলছেন, হরিপুরে যেটা পাওয়া গিয়েছিলো সেখানে কিন্তু নিয়ম মেনে তেল তোলা হয়নি। শুধুমাত্র যতোদিন প্রাকৃতিকভাবে উঠে আসছে, ততোদিন তোলা হয়েছে। কিন্তু তারপর তেলক্ষেত্র ডেভেলপ করা হয়নি।

বদরুল ইমাম বলেন, যখন চাপ কমে তখন তেল আর প্রাকৃতিকভাবে উঠে আসে না। নিচে থেকে যাওয়া তেল তুলতে নানা পদ্ধতি মানতে হয়।

‘প্রাকৃতিকভাবে তেল ওঠা বন্ধ হয়ে গেলে আমরা মনে করি শেষ হয়ে গিয়েছে। তেল কিন্তু মাইগ্রেশন করে, তারা সরে গিয়ে একটা যুৎসই জায়গায় রিজার্ভ হয়। তখন ভিন্নভাবে ইন্ডাকশন অয়েল দিয়ে তেল উত্তোলন করতে হয়। আমাদের সেরকম পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত।’

আর এক্ষেত্রে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন ও প্রডাকশন কোম্পানি বাপেক্স এটা করতে সক্ষম বলে মনে করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী এই তেল পাওয়াটাকে সুখবর উল্লেখ করে বলেন, আগে গ্যাসের সাথে একটু করে একসাথে তেল আসতো। কিন্তু এবারা আলাদা আলাদা স্লটে আমরা তেল-গ্যাস পাচ্ছি।

বাংলাদেশে বছরে চাহিদা ৬ মিলিয়ন তেলের। যেটা মূলত আমদানি করেই মেটাতে হয় সরকারকে। তবে নসরুল হামিদ বলেন ২০২৭ সাল নাগাদ গ্যাসে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া লক্ষ্য বাংলাদেশের। খবর: বিবিসি বাংলা।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম

সন্ধান,সিলেট,তেল
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close