• রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতায় বিপর্যস্ত পর্যটন

প্রকাশ:  ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯:০০ | আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯:২২
নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে পর্যটনের ভরা মৌসুম নভেম্বর-ডিসেম্বর। এই সময়ে দেশি-বিদেশি পর্যটকে মুখরিত থাকে দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলো। হরতাল-অবরোধ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ভরা মৌসুমেও পর্যটন গন্তব্যগুলো অনেকটাই পর্যটকশূন্য।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অক্টোবরের শেষের দিক থেকে নিয়মিত অগ্নিসংযোগসহ বিরতিহীন অবরোধ ও হরতালের কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।

তারা বলছেন, পর্যটন খাতে ভরা মৌসুমের আগে প্রতি সাধারণ নির্বাচন সময় আসে। আর তখনই সঙ্কট দেখা দেয়।

পর্যটন মৌসুমের আগে বা পরে সংসদ নির্বাচন করার দাবি সংশ্লিষ্টদের।

পর্যটন স্পটের যে পরিস্থিতি

দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য-কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন দ্বীপ-এখন প্রায় পর্যটকমুক্ত।

একই অবস্থা সুন্দরবন, কুয়াকাটা, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, সিলেটসহ অন্যান্য বিখ্যাত পর্যটন স্থানগুলোতেও।

ফলে হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউস, কটেজগুলো প্রায় ফাঁকা। স্থানীয় রেস্টুরেন্ট ও পরিবহনেও এর বিরূপ প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

আগামী ৭ জানুয়ারি সাধারণ নির্বাচন। এরই মধ্যে এই খাতের সংশ্লিষ্টরা সামনের দিন নিয়ে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করছেন।

যা বলছেন পর্যটন খাতে নির্ভরশীলরা

কক্সবাজারে সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের ছবি তুলে সংসার চালানো মোহাম্মদ আতাউল বলেন, “লোকজন একদম নেই বললে চলে। আশা নিয়ে সৈকতে আসি, খালি হাতে ফিরে যেতে হয়। কোনোরকমে টিকে থাকার লড়াই করে যাচ্ছি। কিন্তু পর্যটক আরও কমে গেলে আমাদের সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়বে। আমি প্রায় খালি হাতে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হয়েছি। এই অবস্থা চলতে থাকলে আমার মতো লোকেদের জন্য আমাদের পরিবারকে খাওয়ানো আরও কঠিন হবে।”

আতাউলের মতো, সৈকত ভিত্তিক ছোট ব্যবসায়ীরাও একই কারণে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। কুয়াকাটার ব্যবসায়ীদেরও একই অবস্থা।

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে খেলনা বিক্রি করেন মান্নান মিয়া। বেশি মুনাফা করতে পর্যটন মৌসুমে আরও বিনিয়োগ করেছিলেন তিনি।

মান্নান বলেন, “আমি ঢাকা থেকে খেলনা কিনি। এবার ভালো আয় আশা করেছিলাম। কিন্তু এখন পরিবারের দৈনন্দিন চাহিদা মেটানো কঠিন হয়ে পড়েছে।”

বিপাকে হোটেল মালিকরা

লাগাতার অবরোধ ও হরতালের কারণে হোটেল, মোটেল, কটেজ, গেস্টহাউসের বুকিং বাতিল করছেন অনেকেই।

কক্সবাজারের হোটেল, মোটেল ও রিসোর্টের মালিকদের; অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, “পিক সিজন নভেম্বরের শুরুতে শুরু হয়ে ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত চলে।”

তিনি বলেন, “সাধারণ নির্বাচন ডিসেম্বরে বা জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হয়। আর ভোটকেন্দ্রিক সহিংসতা শুরু হয় ভোটের অন্তত এক মাস আগে। এই সময়, তারপর নভেম্বরে সহিংসতা শুরু হয়।”

যেহেতু জানুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, নওয়াজের ধারণা, চলমান সংকট ডিসেম্বরে অব্যাহত থাকবে।”

যা চান খাত সংশ্লিষ্টরা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে কোনো নির্বাচনই এ ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে না বলে দাবি হোটেল মালিকদের।

তারা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পর্যটকরা ভ্রমণ বাতিল করায় ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

কলাতলী-মেরিন ড্রাইভ হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মৌখিম খান বলেন, “অবরোধ ও ধর্মঘটের কারণে কক্সবাজারের পর্যটন খাতের কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।”

প্রায় আড়াই লাখ মানুষের রোজগারের এই খাতকে রাজনৈতিক সহিংসতা থেকে মুক্ত রাখার দাবি তার।

ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি শিবলুল আজম কোরাইশী বলেন, “দেশে যে কোনো সংকট হলে প্রথমে দেশের পর্যটন খাতে আঘাত লাগে।”

তিনি বলেন, “কোভিড-১৯ মহামারীর প্রথম দুই বছরে, এই খাতটি অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। যখন আমরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রস্তুত, তখন এসেছে রাজনৈতিক অস্থিরতা।”

তিনি আরও বলেন, “সাধারণ নির্বাচন সবসময় ভরা মৌসুমে হয়। যদি এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে, তাহলে এই খাতকে টেকসই করা কঠিন হবে।”

টোয়াব সভাপতি বলেন, “বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবসা পরিবেশের অনুপস্থিতিতে বিদেশী বিনিয়োগ আসবে না।”

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সিইও আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের বলেন, “মসৃণ পর্যটনের জন্য নিরাপত্তা একটি অপরিহার্য হাতিয়ার।”

তিনি বলেন, “পর্যটকরা যদি অবাধে ঘোরাঘুরি করতে না পারে, কেউ ভ্রমণ বা আউটিং করবে না। সব পর্যটকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা ট্যুরিস্ট পুলিশের সাথে যোগাযোগ করছি। আমরা স্থানীয় প্রশাসনকে এই বিষয়ে সাহায্য করার জন্য অনুরোধ করেছি।”

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দলগুলো আরও আন্তরিক হবে বলে আশা করছেন পর্যটন বোর্ডের এই কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে ১০ মিলিয়ন পর্যটক আকর্ষণ এবং ৮ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

পর্যটন কেন্দ্র,বিপর্যস্ত,নির্বাচনকেন্দ্রিক
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close