• শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

সচেতনতাই পারে বিরল ‘এসএমএ’ রোগ প্রতিরোধ করতে

প্রকাশ:  ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭:১৫
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি (এসএমএ) একটি দুরারোগ্য বিরল রোগ। পেশীর সঞ্চালনকে নিয়ন্ত্রণ করে যে মোটর নিউরন, তা নষ্ট হওয়াই জিনঘটিত এই বিরল রোগের কারণ। রোগের তীব্রতা অনুযায়ী, টাইপ ওয়ান থেকে টাইপ ফোর পর্যন্ত হয় এসএমএ। এর ওষুধ বাজারে এলেও তা সাধারণের কেনা সাধ্যাতীত। পৃথিবীর অনেক দেশের মতো আমাদের দেশেও এই রোগে আক্রান্ত রোগী রয়েছে।

তবে সচেতনতার অভাবে এই রোগে আক্রান্তদের একটি বড় অংশ টেস্ট এবং চিকিৎসায় আওতায় আসছে না। ফলে চিকিৎসার অভাবেই দেশে অসংখ্য শিশু এই রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) কিউর এসএমএ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আয়োজিত র‍্যালি এবং মানববন্ধনে বক্তারা এসব কথা বলেন। ২৯ ফেব্রুয়ারি বিরল ব্যাধি দিবস বা রেয়ার ডিজিস ডে উপলক্ষে এই সচেতনতামূলক কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। র‌্যালিটি দোয়েল চত্বর থেকে শুরু হয়ে আবদুল গণি রোড হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়।

কিউর এসএমএ বাংলাদেশ জানায়, এসএমএ’র লক্ষণগুলো বিকাশের আগে প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করা হলে পরবর্তীতে চিকিৎসার ভালো ফল পেতে তা সহায়ক। একটি নবজাতকের স্ক্রিনিংয়ের সাহায্যে প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করা যেতে পারে। ওষুধের পাশাপাশি থেরাপিসহ আনুষঙ্গিক সেবার মাধ্যমে একজন আক্রান্ত শিশুকে স্বাভাবিক জীবন দেওয়া যায়। এমনকি গর্ভাবস্থায় এমনিওটিক ফ্লুইড পরীক্ষা করে অনাগত শিশুটি আক্রান্ত কি-না জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যায়। তাই সচেতনতাই পারে এই রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে।

সংগঠনটি বলে, এসএমএ রোগটি বাবা-মায়ের জিনগত সমস্যার কারণে হয়। যদি কোনো দম্পতি এসএমএ ক্যারিয়ার হয় বা এসএমএ রোগ হওয়ার জন্য দায়ী জিন বহনকারী হয়, তাদের সন্তানের ২৫% আশঙ্কা থাকে এসএমএ রোগ হওয়ার; ২৫% সম্ভাবনা থাকে সুস্থ সন্তান হওয়ার, আর ৫০% আশঙ্কা থাকে, সুস্থ সন্তান হলেও এসএমএ ক্যারিয়ার হওয়ার।

দেশে এখন পর্যন্ত এ রোগের চিহ্নিত রোগী ১৬৫ জন। দেশের বেশ কয়েকটি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ফার্মাসিউটিক্যালের কাছ থেকে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করে সংগঠনটি এই পরিসংখ্যান তৈরি করেছে।

তবে এটি দেশের প্রকৃত চিত্র নয়। উন্নত বিশ্বে প্রতি ১০ হাজার জনে একজন এসএমএ আক্রান্ত রোগী রয়েছে বলে ধরা নেওয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে আত্মীয়দের মধ্যে বিয়ে বেশি হয়। তাই এই সংখ্যা এ অঞ্চলে বেশি হওয়ার আশঙ্কা বেশি। কারণ, এই রোগ সাধারণত জিনগত সমস্যার কারণে হয়। আর এই জিনগত সমস্যা রক্তের সর্ম্পকের আত্মীয়দের মধ্যে বিয়ে হলে সেসব পুরুষ-নারীর থেকে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যার অন্যতম কারণ ধরা হয় আত্মীয়দের মধ্যে বিয়ে হওয়া।

সে হিসেবে আশঙ্কা করা হচ্ছে, বাংলাদেশে এই রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। কিন্তু টেস্ট করার সুযোগ কম থাকায় এটি নির্ণয় দুরূহ হয়ে পড়েছে। যদি এসএমএ টেস্ট সহজ ও কম খরচে করা সম্ভব হতো; তাহলে দেখা যেত, বাংলাদেশে মহামারি আকারে এটি ছড়িয়ে আছে।

এসএমএ রোগের টেস্ট বাংলাদেশে করা যায় না। পাশের দেশে এই টেস্ট করা হলেও খুব ব্যয়বহুল। ফলে এই রোগের লক্ষণ দেখেই চিকিৎসা করেন । এছাড়া, প্রায় কাছাকাছি লক্ষণ দেখা যাওয়া অন্যান্য রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এসব কারণে এসএমএ-তে বাংলাদেশে মৃত্যুহার পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি।

এসএমএ রোগের থেরাপিসহ অন্যান্য চিকিৎসাসেবার জন্য ডেডিকেটেড কোনো হাসপাতাল নেই। এমনকি, কোনো এসএমএ ক্লিনিকও এখনও গড়ে ওঠেনি; যেখানে নিয়মিত এবং ঝামেলা ছাড়া রোগীরা পরামর্শ নিতে পারেন।

এই রোগের ইনজেকশনের দাম প্রায় ২২ কোটি টাকা। এছাড়া দেশে একমাত্র অনুমোদিত ওষুধ রোশ ফার্মার ওষুধ রিজডিপ্লাম। এর প্রতিটি ফাইলের দাম প্রায় ৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। অনেক মা-বাবার পক্ষে এসব ওষুধ কেনা সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় সরকারের পদক্ষেপ জরুরি।

২৯ ফেব্রুয়ারি বিরল ব্যাধি দিবস বা রেয়ার ডিজিস ডে। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিনটি বিরল রোগের জন্য সচেতনতা বাড়াতে এবং বিরল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের জন্য চিকিৎসা এবং চিকিৎসা প্রতিনিধিদের প্রবেশাধিকার উন্নত করার জন্য পালন করা হয়। সে হিসাবে ২৯ ফেব্রুয়ারি বিরল ব্যাধি দিবস বা রেয়ার ডিজিস ডে হিসেবে পালিত হতে যাচ্ছে। ইউরোপীয় সংস্থা ২০০৮ সালে অজানা বা উপেক্ষিত অসুস্থতার জন্য সচেতনতা বাড়াতে দিবসটির প্রচলন করে।

কিউর এসএমএ বাংলাদেশ এর দাবিগুলো:

- দেশে এসএমএ রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা।

- দেশের সব সরকারি হাসপাতালে এসএমএ ডেডিকেটেড কর্ণার বা এসএমএ কর্নার স্থাপন।

- দেশে এসএমএ রোগের প্রকৃত চিত্র জানার জন্য জাতীয়ভাবে জরিপের ব্যবস্থা করা।

- বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো সরকারিভাবে এসএমএ রোগীদের জন্য ওষুধের ব্যবস্থা করা।

- এসএমএ রোগ সর্ম্পকে জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য কর্মসূচি গ্রহণ।

- এসএমএ রোগের জন্য অনুমোদিত ওষুধকে ‘‘অত্যাবশ্যকীয় তালিকাভুক্ত’’ করা।

- আক্রান্ত পরিবারগুলোর জন্য প্রয়োজন সাইকোলজিক্যাল সাপোর্টের ব্যবস্থা করা।

শিশু
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close