• বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

নতুন প্রজন্মকে বীরাঙ্গনাদের ইতিহাস জানানো প্রয়োজন

প্রকাশ:  ০৩ মার্চ ২০২৪, ০১:০৪ | আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২৪, ১৭:৪৯
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

সরকারের গেজেটে সব বীরাঙ্গনাকে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধে বীরাঙ্গনাদের অবদানের বিষয়ে সঠিকভাবে জানতে পারছে না। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বীরত্বগাঁথার কথা বলা হয়। কিন্তু বীরাঙ্গনাদের কথা উহ্য থাকে। কয়েক লাখ নারী মুক্তিযুদ্ধে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, শুধু এতটুকুই বলা হয়। কিন্তু তাদের বিষয়ে বিস্তারিত কিছুই জানানো হয় না। ইতিহাসের পাতায় বীরাঙ্গনাদের আনতে হবে।

শনিবার (২মার্চ) সাভারে গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের পিএইচএ ভবন মিলনায়তনে বীরাঙ্গনা সম্মেলনে বক্তারা এ সব কথা বলেন। নারীপক্ষের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজন ‘মোরা আকাশের মত বাধাহীন’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে দুদিন ব্যাপী এই সম্মিলন আয়োজন করা হয়।

নারীপক্ষের সদস্য ও কর্মসূচি সমন্বয়কারী ফিরদৌস আজীম বলেন, আমাদের পাঠ্যবইয়ে বীরাঙ্গনা বিষয়টি নেই বললেই চলে। আমরা শুধু বীরগাঁথা, বীরত্বগাঁথা দেখি। বীরাঙ্গনাদের কথা উহ্য থাকে। এই শব্দটি গালির মতো হয়ে গেছে। তাই সরকার হয়তো বীরাঙ্গনার বদলে নারী মুক্তিযোদ্ধা শব্দটি ব্যবহার করতে চাইছে। কিন্তু আমরা চাই বীরাঙ্গনা নামটি থাক। তাদের ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে জানানো খুব দরকার।

তিনি বলেন, এই কর্মসূচীর আওতায় ১০০ বীরাঙ্গনাদের নিয়ে কাজ করছে। এখন তাদের কার্যক্রমে ৫৪ জন বীরাঙ্গনা যুক্ত আছেন। তাদের মধ্যে ২০ জন মারা গেছেন। বাকিরা সরকারে মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হয়েছেন। যারা এখন পর্যন্ত তালিকাভুক্ত হতে পারেনি তাদের অবস্থা খুব খারাপ।

নারীপক্ষের সভানেত্রী গীতা দাস বলেন, ‘মোরা আকাশের মত বাধাহীন’ এই শিরোনাম দিয়ে আমরা ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করেছি। এর মধ্যে বীরাঙ্গনা সম্মিলন একটি। এখানে ১৩টি জেলার ৩৮ বীরাঙ্গনা বোনরা এখানে সামিল হয়েছেন। গেজেটভুক্ত হতে না পারায় মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া সম্মানী এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন না, এমন ৪৬ জন বীরাঙ্গনাকে মাসিক আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে নারীপক্ষ।

২১শে পদক প্রাপ্ত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কাওসার চৌধুরী বলেন, বীরাঙ্গনারা ১৯৭২ সালের পর পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী দ্বারা ধর্ষণের শিকার হওয়ার কথা প্রকাশ করতে চাননি। এর পরবর্তী সময়ে সামাজিকভাবে এই বিষয়গুলো আরও জটিল হতে থাকে। এমন একটা পশ্চাৎপদ সময়ে আমরা বসবাস করি সেখানে নারীদের এমন একটা চোখে দেখা হয়, তার উপর পাকিস্তানি সেনাদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার নারীদের আমরা কতোটা সম্মানের চোখে দেখবো, কতটা সম্মান করবো, সেটা বড় ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়। সে জায়গায় সমাজ তাদের স্বীকৃতি দেয়নি। এই ভয়ে বীরাঙ্গনারা নিজেকে প্রকাশ করেননি।

খুলনা থেকে আসা বীরাঙ্গনা রঞ্জিতা বলেন, আমরা রাস্তা চিনি না, পথ চিনি না। কাগজপত্র নিয়ে দৌড়াতে জানি না। তাই স্বীকৃতিও পাচ্ছি না।

সম্মিলনে অতিথি হিসেবে অংশ নেওয়া সাবেক সচিব রীতি ইব্রাহিম বলেন, বীরাঙ্গনাদের অনেকেই মারা গেছেন। যারা বেঁচে আছেন, তাদেরও আমরা যথাযথভাবে স্বীকৃতি দিতে পারছি না।

সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন গবেষক ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা শবনম আজীম, চলচ্চিত্র নিমার্তা শবনম ফেরদৌসী, আমি বীরাঙ্গনা বলছি বইয়ে রচয়িতা ড. নীলিমা ইব্রাহিমের মেয়ে রিতি ইব্রহিম আহসান। এ ছাড়াও গবেষক ও নাট্যব্যক্তিত্ব কাউসার চৌধুরী প্রমুখ।

বীরাঙ্গনা,বীরাঙ্গনা সম্মেলন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close