• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

আজ রাতে ১ মিনিট অন্ধকারে থাকবে দেশ

প্রকাশ:  ২৫ মার্চ ২০২৪, ২১:৪১ | আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২৪, ২১:৪৬
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে এক মিনিট অন্ধকারে (ব্ল্যাক আউট) থাকবে সারা িদেশ। যথাযোগ্য মর্যাদায় গণহত্যা দিবস পালনের লক্ষ্যে এই কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এদিন রাত ১১টা থেকে ১১টা ১ মিনিট পর্যন্ত সারা দেশে প্রতীকী ‘ব্ল্যাক আউট’ পালন করা হবে। তবে কেপিআই এবং জরুরি স্থাপনাসমূহ এ কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে।

এর আগে শনিবার (২৩ মার্চ) মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের রাতটি ছিল ভয়াবহতম একটি রাত। মানব ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যায় সেই কালরাতে বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী মেতেছিল উল্লাসে। ঢাকা শহর হয়েছিল ধ্বংসস্তূপ। এত বছর পেরিয়ে গেলেও এমন আতঙ্কের রাত আর আসেনি ২৫ মার্চে।

‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পরিচালিত পরিকল্পিত গণহত্যার মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চে বাঙালির জাতীয়তাবাদী, স্বাধিকার আন্দোলনকে সশস্ত্র হামলার মাধ্যমে দমন করতে চেয়েছিল তারা।

এ গণহত্যা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের আদেশে পরিচালিত, যা ১৯৭০-এর নভেম্বরে সংঘটিত ‘অপারেশন ব্লিটজ’-এর পরবর্তী সামরিক আক্রমণ।

২৫ মার্চে পাকিস্তানি সামরিক অপারেশনের আসল উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতাকামী বাংলাদেশ তথা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সব বড় বড় শহর দখল করে নেওয়া। এ ছাড়া রাজনৈতিক ও সামরিক বিরোধীদের এক মাসের ভেতর নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া।

কিন্তু অকুতোভয় বাঙালিরা পাল্টা প্রতিরোধ সৃষ্টি করে। সূচনা ঘটায় স্বাধীনতা যুদ্ধের। ২৫ মার্চের গণহত্যা বাঙালিদের ক্রুদ্ধ ও প্রতিবাদমুখর করে তোলে। আপামর বাঙালি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটায়। বাঙালিরা দখলদারি পাকিস্তানি বাহিনীকে বিতাড়িত করার সংগ্রামে লিপ্ত হয়। পরিণতিতে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিনাশর্তে আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়।

২৫ মার্চের সঙ্গে মিশে আছে বাঙালির রাজনৈতিক সংগ্রামের ধারাবাহিক পর্যায়গুলো। বছরের পর বছর তীব্র গণআন্দোলন শেষে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। এরপর বাঙালিরা স্বাভাবিকভাবেই আশা করেছিল যে ক্ষমতার পালাবদল হবে। আওয়ামী লীগ ৬ দফা অনুসারে সরকার গঠন করবে। কিন্তু ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১ এ তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ও সেনাপ্রধান ইয়াহিয়া খান পিপিপির জুলফিকার আলি ভুট্টোর প্ররোচনা ও চাপে জাতীয় সংসদের কার্যাবলি মার্চ পর্যন্ত স্থগিত করে দেন।

পিপিপির জুলফিকার আলি ভুট্টো এও বলেন, তিনি বাঙালিদের ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে চান। এ স্থগিতকরণের প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ ৭ মার্চ ১৯৭১ সালে একটি গণসমাবেশের আয়োজন করে। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে সমুজ্জ্বল সেই জনসমাবেশ এতই সফল ছিল, পাকিস্তান সরকার সেনাছাউনি ও পূর্বপাকিস্তানের সরকারি প্রতিষ্ঠানে সীমিত হয়ে পড়ে আর পুরো দেশ চলে যায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালি জাতির অধীনে।

এমন পরিস্থিতিতে জেনারেল ইয়াহিয়া বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বৈঠকের উদ্দেশে মার্চের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা আসেন। এরপর ভুট্টো তার সঙ্গে যোগ দেন। কিন্তু তারা আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে তালবাহানা শুরু করে আলোচনার নামে। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ভয় ছিল যে ক্ষমতা জনরায় অনুযায়ী বঙ্গবন্ধুকে হস্তান্তরিত করা হলে পাকিস্তান পিপলস পার্টির কর্তৃত্ব হ্রাস পাবে। এ জন্য পাকিস্তানি জেনারেলরা পিপিপির ভুট্টোকে গোপনে সমর্থন জোগাতে থাকে। শেষ দিকে বাঙালিকে ন্যায্য রাজনৈতিক ক্ষমতার বৈধ অধিকার থেকে বঞ্চিত করার জন্য পুরো বাঙালি জাতির ওপর সেনা আক্রমণ চালায়।

ইতিহাসের বিবরণ অনুযায়ী, ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর এক বৈঠকে গৃহীত প্রস্তাবনার ভিত্তিতে মার্চের শুরুতে ১৪তম ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা এবং মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলি অপারেশনের মূল পরিকল্পনা তৈরি করেন। এদের পেছনে ছিলেন জেনারেল গুল হাসান। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পশ্চিম পাকিস্তানের কোয়েতা হতে ১৬তম ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন এবং খরিয়ান থেকে ১৯তম ডিভিশনকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে পূর্ব পাকিস্তানে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়।

পাকিস্তানের ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা পূর্ব পাকিস্তানের জিওসি লে. জেনারেল সাহেবজাদা ইয়াকুব খান এবং পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ভাইস অ্যাডমিরাল এস এম আহসান পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ জনগণের ওপর সামরিক হামলার বিরোধী ছিলেন বলে অপারেশনের পূর্বেই তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। সেখানে বেলুচিস্তানের কসাই নামে নিন্দিত জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ও জিওসি করে পাঠানো হয়।

মার্চের ১৭ তারিখ পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর সিওএস জেনারেল হামিদ টেলিফোন করে জেনারেল রাজাকে অপারেশনের পরিকল্পনা করার দায়িত্ব দেন। ১৮ মার্চ সকালে ঢাকা সেনানিবাসের জিওসি কার্যালয়ে বসে জেনারেল রাজা এবং মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলি অপারেশনের পরিকল্পনা তৈরি করেন। পরিকল্পনাটি জেনারেল ফরমান নিজ হাতে হালকা নীল রঙের একটি অফিস প্যাডের ৫ পাতাজুড়ে লিড পেন্সিল দিয়ে লিখে নেন।

এটা ধারণা করা হয় যে বাঙালি সেনারা অপারেশনের শুরুর সময় বিদ্রোহ করবে, তাই পরিকল্পনাকারীরা প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে আলাপকালে বাঙালি সৈন্যদের অপারেশনের আগেই নিরস্ত্র করার এবং বাঙালি রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেপ্তারের প্রস্তাব দেন। পরিকল্পনাটি ২০ মার্চে আবার জেনারেল হামিদ এবং লে. জেনারেল টিক্কা পর্যালোচনা করেন।

অবশেষে অপারেশন শুরু হয় ঢাকায় ২৫ মার্চ রাতের শেষ প্রহরে এবং অন্যান্য গ্যারিসনকে ফোন কলের মাধ্যমে তাদের জিরো আওয়ারে (অপারেশন শুরুর পূর্বনির্ধারিত সময়) তাদের কার্যক্রম শুরু করার জন্য সতর্ক করে দেওয়া হয়। ঢাকার সৈন্যদের কমান্ডে ছিলেন রাও ফরমান আলি এবং অন্যান্য সব স্থানের সৈন্যদের কমান্ডে ছিলেন জেনারেল খাদেম হোসেন রাজা। জেনারেল টিক্কা এবং তার কর্মকর্তারা ৩১তম কমান্ড সেন্টারের সব কিছু তদারকি করা এবং ১৪তম ডিভিশনের কর্মকর্তাদের সহযোগিতা করার উদ্দেশ্যে উপস্থিত ছিলেন।

২৫ মার্চে গণহত্যা পৃথিবীর ইতিহাসে নিরস্ত্র মানুষের ওপর সামরিক আক্রমণের জন্য কুখ্যাত এবং পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতার জ্বলন্ত সাক্ষী। ২৫ মার্চের ধ্বংসযজ্ঞ ও হত্যাকাণ্ডের মধ্যেও ফিনিক্স পাখির মতো বাঙালি জাতির উত্থান ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে হানাদারদের পরাজিত করে স্বাধীনতা অর্জনের ঘটনা বিশ্ব ইতিহাসে বিরল ও ঐতিহাসিক গৌরবের।

২৫ মার্চ রাত সম্পর্কে মার্কিন সাংবাদিক রবার্ট পেইন লিখেছেন, ওই রাতে ৭ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়। এ সময় গ্রেপ্তার হন আরও তিন হাজার।

২৫ মার্চ,গণহত্যা দিবস,ব্ল্যাক আউট
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close