• শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন

প্রকাশ:  ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ২০:৩০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার, জাসদ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন।

শুক্রবার(১৯ এপ্রিল) সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের কেবিন ব্লকের আইসিইউতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এর আগে শিব নারায়ণ রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকদের পরামর্শে দ্রুত তাকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয়।

মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৭৮ বছর। তিনি এক ছেলে ও স্ত্রী রেখে গেছেন।

শিব নারায়ণ দাশের একমাত্র ছেলে অর্ণব আদিত্য দাশ তার ফেসবুকে জানিয়েছেন, তার বাবা সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে মারা গেছেন। তিনি তার বাবার জন্য সবাইকে প্রার্থনা করতে বলেছেন। জাতীয় পতাকার সবুজ জমিনে বাংলাদেশের যে হলুদ মানচিত্রটি ছিল, তা অঙ্কন করেছিলেন শিব নারায়ণ দাশ।

গতকাল তার ছেলে অর্ণব আদিত্য জানিয়েছিলেন, বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় তার বাবা শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে গতকাল রাতে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়।

অর্ণব আদিত্য বলেন, ‘বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তকে বা সেই সময় প্রথম জাতীয় পতাকা তৈরির সঙ্গে যুক্ত যারা বেঁচে আছেন, তারা এই পতাকার নকশাকার হিসেবে আমার বাবার নাম বলেছেন। তবে বাবা সব সময় বলতেন, দেশের মানুষের প্রয়োজনে তিনি তখন দায়িত্ব পালন করেছেন। তাই এটা নিয়ে প্রচার চাইতেন না। কে স্বীকৃতি দিল না দিল তা নিয়েও মাথা ঘামাতেন না। অসুস্থ থাকার সময়ও এ নিয়ে তিনি কিছু বলেননি।’

২০২৩ সালে বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছাত্রনেতা হাসানুল হক ইনু, কাজী আরেফ আহমেদ, শিব নারায়ণ দাশসহ ২২ জন পতাকার নকশার সাথে জড়িত ছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে পতাকা থেকে মানচিত্র বাদ দিয়ে কামরুল হাসানের ডিজাইন করা লাল-সবুজের পতাকাটিই বাংলাদেশের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করা হয়।

বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাশের স্ত্রী গীতশ্রী চৌধুরীও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। শিব নারায়ণ দাশের বাবা সতীশ চন্দ্র দাশকে ছেলে মুক্তিযুদ্ধে গেছে এই অপরাধে পাকিস্তানি হানাদাররা গুলি করে মেরে ফেলে।

অর্ণব আদিত্য আগে বেসরকারি এয়ারলাইনসে কাজ করতেন। দুর্ঘটনায় কাজটি আর করতে পারেননি। বর্তমানে তিনি ফ্রিল্যান্সিং করছেন। তিনি গতকাল বলেছিলেন, তাদের বাড়ি বিক্রমপুরে। তবে তার দাদার কাজের সূত্রে তারা কুমিল্লায় স্থায়ী হন। শিব নারায়ণ দাশ রাজনীতি এবং লেখালেখি করে গেছেন সারা জীবন। নিভৃতে থাকতে পছন্দ করতেন।

এর আগে সরকার থেকে শিব নারায়ণ দাশের চিকিৎসার জন্য দুই লাখ টাকা পেয়েছিলেন উল্লেখ করে অর্ণব আদিত্য বলেন, ‘মধ্যবিত্ত পরিবারে হুট করে চিকিৎসা বাবদ লাখ লাখ টাকা খরচ করা বেশ কঠিন। বাবার দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসায় বিভিন্ন সময় বন্ধু–স্বজনেরা এগিয়ে এসেছেন।’

১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে ছাত্রদের পক্ষে পতাকা উড়িয়েছিলেন ছাত্রনেতা তৎকালীন ডাকসুর ভিপি আ স ম আবদুর রবসহ অন্য নেতারা। দেশ স্বাধীনের আগে এই পতাকার নকশাকারদের অন্যতম ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাশ।

১৯৭০ সালের ছয় জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলের (বর্তমান শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ১১৬ নং কক্ষে রাত ১১টার পর পুরো পতাকার নকশা সম্পন্ন করেন। এ পতাকাই পরবর্তীতে ১৯৭১-এর দুই মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় উত্তোলিত হয়।

শিবনারায়ণ দাসের বাবা সতীশচন্দ্র দাশ কুমিল্লাতে আয়ুর্বেদ চিকিৎসা করতেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি হানাদাররা তাকে ধরে নিয়ে হত্যা করে।

শিব নারায়ণ দাসের মৃত্যুতে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এক শোক বার্তা দেন। জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার, জাসদের এই নেতার মৃত্যুতে গভীর শোক এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন তারা।

শিব নারায়ণ দাস,জাতীয় পতাকা,নিহত
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close