• শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

কাতারকে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বরাদ্দ দেওয়ার আলাপ হতে পারে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশ:  ২১ এপ্রিল ২০২৪, ১৭:২৫
নিজস্ব প্রতিবেদক

কাতার চাইলে কোনো একটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে তাদের বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

রোববার (২১ এপ্রিল) দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির ঢাকা সফর নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এ কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, কাতারের আমিরের সফরে মোট ১১টি চুক্তি ও সমঝোতা সইয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৬টি চুক্তি ও ৫টি সমঝোতা। যে ৬টি চুক্তির প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে বন্দি বিনিময়, বাণিজ্য-বিনিয়োগ, দ্বৈত কর প্রত্যাহার, শুল্ক সুবিধা দেওয়ার জন্য সহযোগিতা প্রভৃতি। এছাড়া যে ৫টি সমঝোতা সইয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে—কাতারে জনশক্তি রপ্তানি, বন্দর ব্যবস্থাপনা সহযোগিতা, উভয় দেশের কূটনীতিকদের প্রশিক্ষণ-উচ্চশিক্ষা সহযোগিতা।

এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, যেহেতু সৌদি আরবের সাথে আমাদের রেফার্ড পেমেন্টে (এক বছরের বাকিতে) তেল কেনার চুক্তি রয়েছে, কাতারের আমিরের সফরে এ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।

মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে কাতারের মহামহিম আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের কাতারি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সফর করবেন। প্রধানমন্ত্রী ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে সরকার গঠনের পর মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহ হতে এটি প্রথম উচ্চ পর্যায়ের রাষ্ট্রীয় সফর।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও কাতারের বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর, বন্ধুত্বপূর্ণ ও বহুমুখী। কাতার বঙ্গবন্ধুর সরকারকালীন সময়ে (১৯৭৪ সালে) বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানকারী অন্যতম মুসলিম রাষ্ট্র।

মন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রীর বিগত ২০২৩ সালের মার্চ ও মে মাসে দুইবার কাতার সফরের মাধ্যমে উভয় দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সুদৃঢ় অবস্থানে উপনীত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় কাতারের আমির বাংলাদেশে সফর করবেন।

সফরের আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিককালে কাতারের সাথে বিভিন্ন পর্যায়ে কূটনৈতিক যোগাযোগ ও আলোচনার মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার পরিধি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, জ্বালানী, বিমান চলাচল, কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি ক্ষেত্রসমূহকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, ২২ এপ্রিল বিকালে বা সন্ধ্যায় বিশেষ বিমানযোগে ঢাকায় আগমন করবেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বিমানবন্দরে কাতারের আমিরকে রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে স্বাগত জানাবেন। আমিরকে গার্ড অফ অনার প্রদান করা হবে। পরদিন ২৩ এপ্রিল সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন কাতারের আমির। এরপর গণভবনে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হবে। দুপুরে রাষ্ট্রপতির সাথে বঙ্গভবনের সৌজন্য সাক্ষাৎ ও রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্নভোজনে অংশ নেবেন আমির। সন্ধ্যায় তিনি বিশেষ বিমানযোগে ঢাকা ত্যাগ করবেন।

ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ ও কাতারের বন্ধুত্বের নিদর্শন স্বরূপ ঢাকার একটি সড়কের নামকরণ কাতারের মহামহিম আমিরের নামে করার কার্যক্রম চলছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন মিরপুরের কালশী এলাকায় বালুর মাঠে নির্মিতব্য পার্ক ও মিরপুর ইসিবি চত্বর থেকে কালসী উড়াল সেতু পর্যন্ত সড়কটি আমিরের নামে নামকরণ করা হবে। আগামী ২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় কাতারের মহামহিম আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির এই দুটি স্থাপনা উদ্বোধনের কথা রয়েছে।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, কাতারের আমিরের এ সফরের ১১টি দ্বিপক্ষীয় দলিল স্বাক্ষরের কথা রয়েছে। এর মধ্যে ৬টি চুক্তি এবং ৫টি সমঝোতা স্মারক। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- দ্বৈতকর পরিহার ও কর ফাঁকি সংক্রান্ত চুক্তি, আইনগত বিষয়ে সহযোগিতা সংক্রান্ত চুক্তি, সাগরপথে পরিবহন সংক্রান্ত চুক্তি, উভয় দেশের পারস্পরিক বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা সংক্রান্ত চুক্তি, দু'দেশের মধ্যকার দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বদলি সংক্রান্ত চুক্তি, যৌথ ব্যবসা পরিষদ গঠন সংক্রান্ত চুক্তি, শ্রমশক্তির বিষয়ে সমঝোতা স্মারক, বন্দর পরিচালনা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক, উচ্চ শিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক, যুব ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক এবং কূটনৈতিক প্রশিক্ষণে সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক।

কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল থানির এই সফরের তাৎপর্য সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস সমৃদ্ধ সর্বোচ্চ গড় মাথাপিছু আয়ের দেশ কাতার শক্তিশালী অর্থনীতি, ভূরাজনৈতিক অবস্থান ও কূটনৈতিক তৎপরতা ও মধ্যস্থতার কারণে মধ্যপ্রাচ্যে একটি প্রভাবশালী দেশ হিসেবে বিবেচিত। কাতার মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার যেখানে প্রায় চার লাখ বাংলাদেশি কর্মরত আছেন। পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ সার্বভৌম তহবিলের অধিকারী কাতার বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাবনাময় বিনিয়োগের উৎস হিসেবে বিবেচিত। তদুপরি কাতার বাংলাদেশের জন্য জ্বালানি আমদানির ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎস। পরিশেষে, কাতারের মহামহিম আমিরের এই সফর বাংলাদেশ এবং কাতারের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে পরিগণিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারের সাথে বাংলাদেশের সহযোগিতার সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী,কাতার,আমির,সংবাদ সম্মেলন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close