• শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

তীব্র দাবদাহ: হিটস্ট্রোকে ৮ জনের মৃত্যু

প্রকাশ:  ২১ এপ্রিল ২০২৪, ২১:৪৯
নিজস্ব প্রতিবেদক

তীব্র দাবদাহে পুড়ছে দেশ। দিন দিন তাপমাত্রার পারদ উপরের দিকেই উঠছে। তীব্র রৌদ ও গরমে অস্বস্তিতে হাঁসফাঁস অবস্থা মানুষের। এতে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকেই। এ অবস্থায় দেশের প্রায় সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

এর মধ্যেই সারাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় হিটস্ট্রোকে এখন পর্যন্ত মোট আটজন মারা গেছেন। এদের মধ্যে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে দুইজন, মেহেরপুর, পাবনা, নরসিংদী, শরীয়তপুর, ঝালকাঠি ও সিলেটে একজন করে রয়েছেন।

সারাদেশে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। আর এই তাপপ্রবাহে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে হিটস্ট্রোকে দুজন মারা গেছেন। তারা হলেন- পৌর এলাকার চকসাবাজপুর গ্রামের মৃত মোশারফ হোসেনের ছেলে সাবেক পৌর কাউন্সিলর মোতাহার আলী (৫৮) এবং অপরজন যশোর কোতোয়ালি থানা এলাকার রাজারহাট গ্রামের ট্রাকচালক বিল্লাল হোসেন (৫২)।

হিটস্ট্রোকে দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি রোববার দুপুরে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মশিউর রহমান।

মেহেরপুরের গাংনীতে হিটস্ট্রোকে শিল্পী খাতুন (৪৫) নামের এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। রোববার সকাল ৮টায় উপজেলার ষোলটাকা ইউনিয়নের রুয়েরকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

শিল্পী খাতুন রুয়েরকান্দি গ্রামের আবু তাহেরের স্ত্রী এবং পার্শ্ববর্তী আমতৈল গ্রামের বিল্লাল মালিথার মেয়ে।

মেহেরপুর জেলা প্রশাসক শামীম হাসান বলেন, শিল্পী খাতুনের মৃত্যু হিটস্ট্রোকে হয়েছে কিনা সেটা নিশ্চিত করতে ইউএনও এবং স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে জেলায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বইছে। তীব্র গরমে অতি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের না হতে এবং নিজেকে সুস্থ রাখার নির্দেশনা দিয়ে মাইকিং করা হয়েছে।

ভূট্টার ক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে আলাউদ্দিন আলী ওরফে আলাল (৪৩) নামে কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। রোববার সকাল ৯টার দিকে পাবনার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়য়নের নেউতিগাছা গ্রামে তার মৃত্যু হয়। তিনি ওই গ্রামের ইউসুফ আলীর ছেলে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, প্রচণ্ড গরমে প্রতিদিনই মানুষ হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন। অনেক রোগী হাসপাতালে আসছে। চাটমোহরের আলাউদ্দিন হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে এসেছিলেন বলে আমাদের প্রাথমিক ধারণা।

নরসিংদীর মাধবদীতে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। রোববার দুপুরে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

নিহত সাফকাত জামিল ইবান (৩২) সদর উপজেলার মাধবদী থানার ভগীরথপুর এলাকার মৃত জাকারিয়া জামিলের ছেলে এবং শেখেরচর বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী ছিলেন।

নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকলে অফিসার (আরএমও) ডা. মাহমুদুল কবির বাশার বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয় প্রচণ্ড রোদের মাঝে চলাফেরা এবং প্রচুর ঘামের ফলেই অজ্ঞান হয়ে যান ইবান। তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়। পরিবারের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে তার মৃত্যু হিটস্ট্রোকে হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

শরীয়তপুরে অতিরিক্ত গরমে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে হারুন চৌকিদার (৪৩) নামে এক অটোরিকশা চালকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। রোববার দুপুরে জেলা পরিষদের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত হারুন চৌকিদার নড়িয়া উপজেলার মোক্তারেরচর ইউনিয়নের নয়ন মাদবরকান্দি এলাকার আলী হোসেন চৌকিদারের ছেলে।

এ বিষয়ে সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সাবিকুন নাহার বলেন, স্বজনদের কাছ থেকে জানতে পারি অতিরিক্ত গরমে কাজ করার ফলে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যান হারুন নামের ওই ব্যক্তি। রোগীর স্বজনরা তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে সদর হাসপাতালে সামনে নিয়ে আসলে, আমি অ্যাম্বুলেন্সে গিয়ে তাকে দেখি। হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। অতিরিক্ত গরমে কাজ করার ফলে হিটস্ট্রোকে তার মৃত্যু হয়েছে।

ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলার কাঠালিয়া সদর ইউনিয়নের পশ্চিম আউরা গ্রামে মো. আফজাল তালুকদার (৪৫) নামের এক যুবক হিটস্ট্রোকে মারা গেছেন।

রোববার আফজালের মৃত্যুর বিষয়টি হিটস্ট্রোকে হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক দিলীপ চন্দ্র হাওলাদার।

সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় হিটস্ট্রোকে এক রিকশাচালকের মৃত্যু হয়েছে। রোববার দুপুরে দক্ষিণ সুরমা পুলিশ বক্সের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত রিকশাচালকের পরিচয় এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিষয়টি নিশ্চিত করে দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি ইয়ারদৌস হাসান জানান, দুপুর ১২টার দিকে এক অজ্ঞাত পরিচয়ের রিকশাচালক দক্ষিণ সুরমা পুলিশ বক্সের সামনে অজ্ঞান হয়ে পড়েন।

পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ দিকে সারাদেশে হিটস্ট্রোকে মৃত্যুর বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব হেলথ সায়েন্সেসের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী বলেন, ঝড়, বন্যার মতো হিট অ্যালার্টকে আমরা এখনো তেমনভাবে দুর্যোগ হিসেবে চিহ্নিত করতে পারিনি। হিট অ্যালার্ট যে স্বাস্থ্যের জন্য বড় দুর্যোগ, তা আমাদের উপলব্ধি করার সময় এসেছে।

তিনি আরও বলেন, শুধু হিট অ্যালার্ট ঘোষণা করেই দায়িত্ব শেষ করলে হবে না, তীব্র গরমকে দুর্যোগ হিসেবে চিহ্নিত করে শ্রমজীবী মানুষের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।

এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় কার্যকর স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল অবলম্বনের আহ্বানও জানান এ চিকিৎসাবিজ্ঞানী।

তীব্র দাবদাহ,হিটস্ট্রোক,গরম
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close