• শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

দেশজুড়ে সিপিবির ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

প্রকাশ:  ০৬ মার্চ ২০২২, ১৮:২৩ | আপডেট : ০৬ মার্চ ২০২২, ১৮:৩৮
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। দেশের অন্যতম বৃহত্তম বামপন্থি দলটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে দেশজুড়ে।

রোববার (৬ মার্চ) বিকেল ৪টায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীতে লাল পতাকা মিছিল করেছে সিপিবি। এরপর পুরানা পল্টনের মুক্তি ভবনে দলটির কেন্দ্রিয় কার্যালয়ে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এর আগে সকাল ৮টায় কেন্দ্রিয় কার্যালয়ে পার্টির পতাকা উত্তোলন কর্মসূচি পালিত হয়।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে দেশের শ্রমিক, কৃষক, ক্ষেতমজুর, মেহনতি মানুষসহ সর্বস্তরের দেশবাসীর প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বিগত দিনে পার্টির পতাকা সমুন্নত রাখতে গিয়ে যারা শহীদের মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ অতীতে ও বর্তমানে নানাভাবে যারা পার্টিতে অবদান রেখেছেন ও রাখছেন তাদের সকলকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগ্রামী অভিনন্দন জ্ঞাপন করেছেন। যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের জন্য সারাদেশে পার্টির সকল কমিটি ও শাখার প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠা পেলেও এর অনেক আগে থেকেই এ দেশে কমিউনিস্ট আন্দোলনের যাত্রা শুরু হয়েছিল। ১৯২০ সালে ভারত ভূখণ্ডে এ আন্দোলনের সূচনা ঘটে। ১৯২৫ সালে ভারতবর্ষের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিআই) প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪৮ সালের ৬ মার্চ সিপিআই-এর দ্বিতীয় কংগ্রেসে পৃথকভাবে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র পাকিস্তানের প্রতিনিধিরা ভিন্ন একটি অধিবেশনে মিলিত হয়ে স্বতন্ত্রভাবে পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি এবং একই সঙ্গে খোকা রায়কে সম্পাদক করে পার্টির পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক কমিটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক কমিটির ৪র্থ সম্মেলনে পৃথক কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করে স্বতন্ত্র ও স্বাধীন পার্টি হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি কার্যক্রম শুরু করে এবং ওই সম্মেলনকে প্রথম পার্টি কংগ্রেস হিসেবে গ্রহণ করা হয়। স্বাধীনতার পর দলটি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সংক্ষেপে সিপিবি নামে পরিচিত হয়।

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পরই পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী কমিউনিস্ট নেতা-কর্মীদের ওপর হত্যা-নির্যাতন ও জেল-জুলুম-হুলিয়া চালায়। হাজার হাজার কমিউনিস্টকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয় সে সময়। ১৯৫০ সালের ২৪ এপ্রিল রাজশাহী জেলের খাপড়া ওয়ার্ডে কমিউনিস্ট রাজবন্দিদের ওপর পুলিশ গুলি চালালে সাতজন শহীদ হন। এটাই এ ভূখণ্ডের প্রথম জেল হত্যাকাণ্ড। দলটি তেভাগা, নানকার ও টঙ্কসহ নানা কৃষক-শ্রমিক আন্দোলনের পাশাপাশি ছাত্র ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন সংগঠিত করেছে।

ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রাম, সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী লড়াই এবং জাতীয় সম্পদ রক্ষা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের আন্দোলনসহ সব আন্দোলন-সংগ্রামেই সিপিবি অনন্য ভূমিকা পালন করেছে। কিংবদন্তি কমিউনিস্ট নেতা সিপিবির সাবেক সভাপতি কমরেড মণি সিংহ ছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য। এ ছাড়াও ‘ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন’ যৌথ গেরিলা বাহিনী গঠন করে সিপিবি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আন্তর্জাতিকভাবে জনমত সৃষ্টিতেও তাদের ভূমিকা ছিল অনন্য।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর জেল-জুলুম-নির্যাতন অগ্রাহ্য করে সিপিবি এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রাজপথে নামে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রায় অর্ধেক সময় দলটি বেআইনি ছিল। এমনকি স্বাধীন দেশেও সিপিবিকে একাধিকবার বেআইনি হতে হয়েছে।

দীর্ঘ চলার পথে আন্দোলন-সংগ্রামে সিপিবির অসংখ্য নেতাকর্মীকে জীবন দিতে হয়েছে। ১৯৭৩ সালের ১ জানুয়ারি ছাত্র গণসংগঠনের সাম্রাজ্যবাদবিরোধী মিছিলে পুলিশ গুলি করলে মতিউল-কাদের নামে ২ জন নেতা শহীদ হন। ১৯৭৩ সালের ১০ মার্চ গোপালগঞ্জের দুই কমিউনিস্ট নেতা ও দুই ছাত্র ইউনিয়ন নেতাকে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়। ২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে সিপিবির মহাসমাবেশে বোমা হামলা হলে পাঁচজন নেতাকর্মী শহীদ হন।

পূর্বপশ্চিমবিডি/জেএস

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close