• সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

নোয়াখালীতে এমপির ব্যর্থতাকে দুষে আ.লীগ নেতার পদত্যাগ

প্রকাশ:  ২৮ এপ্রিল ২০২২, ১৩:০১ | আপডেট : ২৮ এপ্রিল ২০২২, ১৩:০৪
নোয়াখালী প্রতিনিধি

স্থানীয় এমপির ব্যর্থতাকে দুষে নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন সদ্য ঘোষিত কমিটির ১নং সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক আলহাজ্ব জাফর আহমেদ চৌধুরী। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের তিনবারের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান।

বুধবার (২৭ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে নিজের ফেসবুক পেজ থেকে লাইভে এসে তিনি এই পদত্যাগের ঘোষণা দেন। গুঞ্জন রয়েছে এ কমিটি থেকে আরো একাধিক নেতা পদত্যাগ করতে পারেন।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) সকালে জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের কাছে এ নেতা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এর আগে ২৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম যুগ্ম-আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন ও সহিদুল্লাহ খান সোহেল স্বাক্ষরিত পত্রে সেনবাগ উপজেলা আওয়ামী লীগের ৬৩সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঘোষিত কমিটিতে নোয়াখালী-২ (সেনবাগ-সোনাইমুড়ী) আংশিক আসনের সাংসদ মোরশেদ আলমকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। পাঁজনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে। তাঁরা হলেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের তিনবারের সাবেক সভাপতিও উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহম্মদ চৌধুরী, নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক লায়ন জাহাঙ্গীর আলম মানিক, সেনবাগ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাহার উল্যা বাহার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদের আহ্বায়ক শওকত হোসেন কানন এবং সেনবাগ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর টিপু। এছাড়া কমিটিতে সদস্য করা হয়েছে ৬৩ জনকে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেনবাগ উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব জাফর আহমেদ বলেন, স্থানীয় সাংসদ মোরশেদ আলম নেতাকর্মীদের চেনেন না। তিনি সময় দিতে পারেন না এবং তার চেষ্টাও করেন না। তাঁর ব্যর্থতার কারণে সেনবাগে বর্তমানে দলের ত্যাগী ও সৎ কর্মীরা অবমূল্যায়িত হতে হতে অনেকে ঘরে ঢুকে গেছে। সেনবাগে ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে একজন দলীয় প্রার্থী ছাড়া কেউ নির্বাচিত হোতে পারেনি। আমরা সিন্ধান্ত দিয়েছি, আমরা দলের ত্যাগী নেতাদের চাই, তিনি আমাদের সাথে একমত হয়েছেন। পরে ব্যক্তিগতভাবে ডিউ লেটার দিয়ে তিনি তদবির করে কিছু লোককে নমিনেশন দেন। নমিনেশন সঠিক হয়নি বিধায় একজন চেয়ারম্যানও নির্বাচিত করতে পারেননি। আমাদের মেয়র নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী আবু জাফর টিপুকে মনোনয়ন দেয়। সেখানে দেখা গেছে তিনিসহ কিছু লোক দলের বিরোধীতা করে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নির্বাচিত করে।

তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, এতে আমাদের দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে। যেটা আমরা মেকাপ করতে পারব না। এতো ব্যর্থতার পরও কালকে জেলা আওয়ামী লীগ থেকে একটা কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ কমিটিতে এমপিকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। আমরা যতটুকু জানি এক উপজেলার লোক অন্য উপজেলায় এমপি হতে পারে। তবে এক উপজেলার লোক আরেক উপজেলায় আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক বা সভাপতি হতে পারে। এটা আমার জানা ছিল না। অন্য উপজেলা থেকে হাওলাত করে এনে সভাপতি বানানোর অর্থ হলো, সেনবাগ আওয়ামী লীগে নেতৃত্বের যোগ্যতা বলে কিছু নেই। যদি যোগ্যতা থাকতো আমার কথা বাদ দেন, আরো তো সেনবাগে দুই লক্ষ নয় হাজার ভোটার আছে। একজন লোকও কি আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করার যোগ্যতা নেই?

জাফর আহমদ চৌধুরী বলে, অন্য উপজেলার লোক এনে সেনবাগ উপজেলার আহ্বায়ক বানানোর পর আমি মনে করি, আমরা যারা সেনবাগে আওয়ামী লীগ করি, আজকে আমরা লজ্জিত। মানুষ আমাদেরকে ধিক্কার দিচ্ছে। যে সেনবাগে যোগ্যতাপূর্ণ লোক না থাকায় অন্য উপজেলা থেকে হাওলাত করে লোক এনে আজকে আহ্বায়ক বানাইছে, যেখানে আমি কাউন্সিলর ভোটে পর পর তিনবার উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সভাপতি। বুধবার যে কমিটি হয়েছে, সেখানে হয়তো আমাকে রাখবে না হয় বাদ দেবে। এতে আমার কোনো আপত্ত্বি নেই। কিন্তু তা না করে আমাকে আহ্বায়ক কমিটির ১নং যুগ্ম-আহ্বায়ক বানিয়ে কমিটি ঘোষণা করছে। এতে আমি লজ্জিত বোধ করছি। কারণ একজন তিনবার সভাপতি হওয়ার পর সে কি করে ১নং যুগ্ম-আহ্বায়ক হতে পারে। আমি মনে করি এটি সঠিক নয়। তাই উপজেলা আওয়ামী লীগের ১নং যুগ্ম-আহ্বায়ক পদ থেকে তিনি পদত্যাগ করেন।

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে জাফর আহমদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশের ব্যাপক উন্নয়ন, সুষ্ঠুভাবে দল ও দেশ পরিচালনা ইতমধ্যে দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এত সুনাম। কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হয় সেনবাগের ব্যাপারে কেন ওনার এত অনীহা। কেন আমরা সুবিচার পাচ্ছি না, কেন আমরা সু-নেতৃত্ব পাচ্ছি না।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে নোয়াখালী-২ (সেনবাগ-সোনাইমুড়ী) আংশিক আসনের সাংসদ মোরশেদ আলমকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন বলেন, লাইভে এসে জাফর আহমদ চৌধুরী সদ্য ঘোষিত কমিটির পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার ভিডিও আমি দেখেছি। দলীয় গঠনতন্ত্র মেনে কমিটি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত লিখিত কোন পদত্যাগপত্র আমরা পাইনি। লিখিত পদত্যাগপত্র পেলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পূর্বপশ্চিম/জিইউ/এনএন

আ.লীগ,নোয়াখালী
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close