• শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

জাহাঙ্গীরকে দলে চায় তৃণমূল, কেন্দ্র চুপ

প্রকাশ:  ২৮ মে ২০২৩, ১৩:২৩
নিউজ ডেস্ক

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে নির্বাচিত জায়েদা খাতুনের পক্ষে কাজ করায় তার ছেলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে বহিষ্কার করে আওয়ামী লীগ। পরে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের চ্যালেঞ্জ করে নিজের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্রকে মিথ্যা প্রমাণ করতে মায়ের পক্ষে প্রাণপণ প্রচার চালান জাহাঙ্গীর। সেই চ্যালেঞ্জে জিতেছেন জাহাঙ্গীর আলম। এখন আবারও সসম্মানে দলে ফেরা জাহাঙ্গীরের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ। এরই মধ্যে দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা গাজীপুর আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ করতে জাহাঙ্গীরকে দলে ফেরানোর দাবি তুলছেন। তবে এ বিষয়ে নিশ্চুপ ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় ও গাজীপুরের দায়িত্বশীল নেতারা।

দলীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠায় গাজীপুর আওয়ামী লীগের ব্যর্থতায় পরাজিত হন নৌকার প্রার্থী গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান। অন্যদিকে তৃণমূলে জনপ্রিয়তা ও আওয়ামী লীগের একাংশকে ঐক্যবদ্ধ করে নীরব ভোট বিপ্লব ঘটিয়েছেন জাহাঙ্গীর। তাই দলকে সুসংগঠিত করতে এমন নেতাকে যে কোনো মূল্যে দলে চান তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয় গাজীপুর সিটির তৃতীয় নির্বাচন। নতুন মেয়র জায়েদা খাতুন ছেলে জাহাঙ্গীর আলমকে সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার আগ্রহ প্রকাশ করায় গাজীপুরের আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম নিয়েছে।

মহানগর আওয়ামী লীগের অনেক নেতা মনে করছেন, জাহাঙ্গীর ইস্যুতে তার বিরোধী শিবিরের নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়েছেন। নতুন করে দেখা করার সুযোগ পেলে জাহাঙ্গীরের দলে ফেরা সহজতর হতে পারে। স্থানীয় তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলেছেন, জাহাঙ্গীর ইস্যুতে আওয়ামী লীগের মধ্যে অলিখিত বিরোধ রয়ে গেছে। ফলে দ্বিধাবিভক্ত আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী করতে তার দলে ফেরা জরুরি বলে দাবি তাদের।

জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও নবনির্বাচিত কাউন্সিলর আলতাব হোসেন বলেন, জাহাঙ্গীর আলমের দলে ফেরা বা না ফেরা সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এখতিয়ার। তিনি যেটা ভালো মনে করবেন, সেটা সবাই মেনে নেবে।

গাজীপুরের কয়েকজন সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের প্রতি আঙুল তুলে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের ঘাঁটি এখন দ্বন্দ্বে জর্জরিত। তাদের ভুল সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে, নইলে প্রতিবাদ করলে পরিণতি হবে জাহাঙ্গীরের মতো।

সাবেক মহানগর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, হেভিওয়েট অনেক নেতা আওয়ামী লীগের ভেতরে দল, উপদল, পকেট দল করে আওয়ামী লীগকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। দলের ভেতর বিভেদ সৃষ্টি করেছে; কিন্তু সিটি নির্বাচনে জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন। আমি মনে করি, ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগের রাজনীতি জাহাঙ্গীর আলমের কাছে নিরাপদ।

গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের পদপ্রত্যাশী কয়েকজন বলেন, মেয়র থাকাকালীন গাজীপুরের উন্নয়নে জাহাঙ্গীরের ভূমিকা তুলে ধরে অনেকে তাকে দলে ফিরিয়ে আনার কথা বলেন। রাজধানীর পাশে হয়েও রাস্তাঘাটের ভগ্নদশা, ট্রাফিক জ্যাম, নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে তৎপর ছিলেন জাহাঙ্গীর, সেজন্যই হয়তো তার বিরুদ্ধে অনেকের ষড়যন্ত্র। সবকিছুর জবাব তিনি ভোটের মাধ্যমে দিয়েছেন।

মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক উপদেষ্টা রিয়াজ মাহমুদ আয়নাল বলেন, নগরবাসীর প্রয়োজনেই জাহাঙ্গীরকে দলে ফিরিয়ে নেওয়া উচিত। রাজনীতি যে মুষ্টিমেয় মানুষের জন্য নয়, সব মানুষের জন্য, সেটা জাহাঙ্গীর প্রমাণ করেছেন। তিনি দলে থাকা অবস্থায় গাজীপুর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রাণ ছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ এক নেতা বলেন, ভুলত্রুটি তো মানুষেরই হয়। দলের জন্য এই মহানগরে জাহাঙ্গীরকেই দরকার। দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার হলেও জাহাঙ্গীর আলম নিজেকে এখনো আওয়ামী লীগের কর্মী মনে করেন।

এ ব্যাপারে মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা ও কাউন্সিলর নূরুল ইসলাম নূরু বলেন, আওয়ামী লীগ একটি আদর্শিক সংগঠন। এখানে কিছু নিয়ম-কানুন রয়েছে। জাহাঙ্গীর আলমকে প্রথমবার বহিষ্কারাদেশ দেওয়ার পর কিছু শর্ত সাপেক্ষে তাকে আবার দলে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। এরপর তাকে আবার স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়। এখানে জাহাঙ্গীরকে দলে ফেরানো হবে বলে বিশ্বাস করি না।

মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লা মণ্ডল বলেন, জাহাঙ্গীরকে বহিষ্কার করেছে দলের হাইকমান্ড। তাই তার দলে ফেরার বিষয়ে হাইকমান্ড, অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। দল যেটা ভালো মনে করে, সেটাই মেনে নেবেন বলেও জানান এই নেতা।

এসব বিষয়ে মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নগর উন্নয়নে মা-ছেলে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চাইব। আমার নির্বাচন ছিল এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নয়।

গত ১৫ মে জাহাঙ্গীরকে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে আওয়ামী লীগ। এর আগের দিন ধানমন্ডিতে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ের বৈঠকে বহিষ্কারের বিষয়টি আলোচনা হয়। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত অধিকাংশ সদস্য এই প্রস্তাবকে সমর্থন করেন। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য দলের সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে এ সুপারিশ পাঠানো হয়। পরে দলের সভাপতির সম্মতিক্রমে জাহাঙ্গীরকে দল থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়। ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে জাহাঙ্গীরকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। দল থেকে বহিষ্কারের ৭ দিন পর ২৫ নভেম্বর তাকে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরে ২০২২ সালের ১৭ ডিসেম্বর গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের সাধারণ ক্ষমা করা হয়। সাধারণ ক্ষমা পান জাহাঙ্গীরও। সাধারণের ক্ষমার চিঠিতে উল্লেখ ছিল, ভবিষ্যতে সংগঠনের স্বার্থ পরিপন্থি কর্মকাণ্ড ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করার শর্তে তাকে ক্ষমা করা হয়েছে; কিন্তু আবারও দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে দলের কেন্দ্রীয় ৬ নেতার সঙ্গে কথা বললেও তাদের কেউ জাহাঙ্গীরের বিষয়ে মন্তব্য করতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। এক নেতা বলেন, এটা দলের সিদ্ধান্ত, দল যদি প্রয়োজন মনে করে, তাহলে তাকে আবারও ফিরিয়ে নেবে। দলের জ্যেষ্ঠ সদস্য অনেকেই জাহাঙ্গীরের শুভাকাঙ্ক্ষী, তারাই বিষয়টি দেখবেন।

জাহাঙ্গীর,আ.লীগ
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close