• সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

চালেঞ্জে মঞ্জু, মহারাজের সাথে হবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই

প্রকাশ:  ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:৩১
পিরোজপুর প্রতিনিধি

দীর্ঘ ৩৮ বছর একচ্ছত্র আধিপত্য ধরে রেখেছেন পিরোজপুর-২ আসনের রাজনীতিতে। সারাদেশে সাংগঠনিক ভিত্তি না থাকলেও জাতীয় পার্টি (জেপি) পিরোজপুরের প্রতিটি উপজেলায় ছিল শক্ত অবস্থান। গত কয়েকটি নির্বাচনে আধিপত্য বজায় ছিল কেবল পিরোজপুর-২ (ভান্ডারিয়া-কাউখালী-নেছারাবাদ) আসনে।

দলীয় প্রতীক সাইকেল নিয়ে বিভিন্ন সময়ে এসব উপজেলায় জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হলেও সাম্প্রতিক সময়ে তাও হারিয়েছে জাতীয় পার্টি (জেপি)। এবারের সংসদ নির্বাচনে কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়েছেন জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু।

এবারের নির্বাচেন নিজ দলীয় প্রতীক বাইসাইকেল ছেড়ে আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা নিয়ে ১৪ দলের ব্যানারে নির্বাচন করছেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। তাতেও খুব একটা স্বস্তিতে নেই তিনি। আওয়ামী লীগের জেলা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পিরোজপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহারাজ শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। যিনি আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর শিষ্য হিসেবে এলাকায় পরিচিত। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহিউদ্দিন মহারাজ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে একই আসনে ঈগল মার্কা নিয়ে নির্বাচন করছেন। মঞ্জু নৌকা প্রতীক পেলেও তার সাথে নেই স্থানীয় আওয়ামী লীগের তেমন কোনো নেতাকর্মী। এমনকি তার নিজ দল জেপিরও বড় একটু অংশ জেপি থেকে পদত্যাগ করে মহারাজের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন।

সরেজমিন খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, তিন উপজেলার আওয়ামী লীগের প্রায় সব জনপ্রতিনিধি স্বতন্ত্র প্রার্থী মহিউদ্দিন মহারাজের সঙ্গে জোট বেঁধেছেন। নির্বাচনী প্রচারণায় জেপির একটা অংশও ঈগলের পক্ষ নিয়েছেন। এ নিয়ে ভোটের রাজনীতিতে চলছে নানা সমীকরণ। কাউখালি, ভান্ডারিয়া ও নেছারাবাদ উপজেলা নিয়ে গঠিত পিরোজপুর-২ আসন। জাতীয় সংসদের এ নির্বাচনী আসনে মোট ভোটার ৩,৮৪,৫১২ জন। তিনটি উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ২১টি। তিনটি উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, নির্বাচনী আসনের তিন উপজেলা চেয়ারম্যানই স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রতীক ঈগলের পক্ষে জোরেশোরে কাজ করছেন।

এ আসনে রয়েছে দুটি পৌরসভা। পৌরসভার দুই মেয়রও মহারাজের পক্ষে। পিরোজপুর-২ আসনে থাকা ২১ ইউনিয়নের মধ্যে ১টি বাদে বাকি ২০ জন ইউপি চেয়ারম্যানও ঈগলের পক্ষে কাজ করতে দেখা গেছে। তিন উপজেলায় সাধারণ ও সংরক্ষিত মহিলা ৬ জন ভাইস চেয়ারম্যানের ৪ জনই ঈগলের প্রতিদিন গণংযোগে অংশ নিচ্ছেন। জেপি প্রার্থী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মহিউদ্দিন মহারাজের নিজ উপজেলা ভান্ডারিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌরসভা মেয়র খসরু জমাদ্দার এবং সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলামসহ দলটির অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের শতভাগ নেতাকর্মী কাজ করছেন ঈগলের পক্ষে। ভান্ডারিয়া আওয়ামী লীগের বড় অংশই নৌকার পক্ষে কাজ করছে না।

কাউখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ বড় একটি অংশ সকাল সন্ধ্যা ঈগলের পক্ষে প্রচারে অংশ নিচ্ছেন। একই অবস্থা নেছারাবাদ উপজেলাতেও। সেখানেও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ কমিটির বেশিরভাগ নেতাকর্মীই মহিউদ্দিন মহারাজের পক্ষে কাজ করছেন। কাউখালি ও নেছারাবাদ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিরা আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর সমর্থনে পথসভায় অংশ নিচ্ছেন। অনুসারী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একটা অংশ মঞ্জুর পক্ষ নিয়েছেন।

ভান্ডারিয়া উপজেলা জাতীয় পার্টি (জেপি) বর্তমান কমিটি আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর পক্ষে মাঠে কাজ করলেও সদ্য বিদায়ী কমিটির সভাপতি-মহাসচিব মহারাজের পক্ষে কাজ করছেন। নেছারাবাদে জেপির সাংগঠনিক কার্যক্রমও অনেকটা দুর্বল। সব মিলিয়ে তিন উপজেলায়ই শক্তভাবে দাঁড়াতে পারছেন না বর্ষীয়ান রাজনীতিক আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। তার পক্ষে প্রচারও তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না।

এ নিয়ে নেছারাবাদ উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সদস্য আব্দুল হক বলেন, আগের নির্বাচনগুলোয় আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সাইকেল নিয়ে নৌকাকে হারিয়েছিলেন। আমরা এবার অন্যভাবে ভাবছি।

নেছারাবাদ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক গোলাম কবির বলেন, আমি এবারের নির্বাচনে প্রত্যক্ষভাবে নেই।

ভান্ডারিয়া উপজেলার ধাওয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও জেপির পদত্যাগ করা কমিটির সাবেক উপজেলা মহাসচিব মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু নৌকা পেলেও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়বেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বেশিরভাগই ঈগলের পক্ষে।

আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর চাচাতো ভাই ও জেপির প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহিবুল হোসেন মাহিম বলেন, জেপির সাংগঠনিক সংকট নেই। আসন পুনর্বিন্যাস করায় ইন্দুরকানী বাদ দেয়ায় সংকটে পড়তে হয়েছে। দুই উপজেলার চেয়ে নতুন সংযুক্ত নেছারাবাদে ভোটার বেশি। সেখানে সাইকেল প্রতীক ভোটারদের কাছে পরিচিত নয়। এ জন্য নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে হচ্ছে। ভোটে হাড্ডারাড্ডি লড়াই হবে।

এ বিষয়ে ঈগল মার্কার স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মহারাজ বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মঞ্জু সাহেবের কাছে শক্তিশালী প্রার্থী নই। জনগন জোট বেঁধেছে, জনগন ভোট দিতে চাচ্ছে, আমি মনে করি সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে জনগণ ভোট দেবে। সুন্দর নির্বাচন যদি হয়, আমি আশাবাদী।

রাজনীতি,লড়াই,নির্বাচন,পিরোজপুর
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close