প্রার্থী খুঁজে পাচ্ছে না জাতীয় পার্টি
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের জন্য প্রার্থী খুঁজে পাচ্ছে না উপজেলা পরিষদ প্রবর্তনকারী জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)। এই নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহ নেই তৃণমূল নেতাদের। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য কেন্দ্র থেকে আহ্বান জানালে তাতে সাড়া দেননি তৃণমূল নেতারা। দলটির স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা বলছেন, ভুল রাজনীতির কারণে ভোটের মাঠে লাঙলের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে।
সম্পর্কিত খবর
জাপার মনোনয়নে নির্বাচন করে জয়ী হওয়া দূরে থাক, জামানত রক্ষা করাই কঠিন। তাই নির্বাচন করে টাকা নষ্ট করতে চান না কেউ।
জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ক্ষমতাসীন দল কীভাবে নির্বাচনকে প্রভাবিত করে এবং ফলাফল ছিনিয়ে নেয় তা গত জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে দেশবাসী দেখেছে। তাই অন্য দলের নেতারা নির্বাচন করে টাকা-পয়সা নষ্ট করতে চান না।
তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ উপজেলা পরিষদ প্রবর্তন করেছেন। এই জন্য আমরা এই ভোট বর্জনও করতে পারি না। জাপার প্রার্থী না পাওয়া প্রসঙ্গে বলেন, গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও দল থেকে প্রার্থী হতে চাননি। দলীয় প্রতীক কিংবা স্বতন্ত্রভাবে দল থেকে প্রার্থী হতে পারবেন পার্টির আগ্রহীরা।
জানা যায়, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রশ্ন থাকায় উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহ নেই নেতাদের। নির্বাচন হবে এমন সাড়ে ৪ শতাধিক উপজেলার মধ্যে মাত্র পাঁচটিতে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করতে পেরেছে সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাপা। প্রথম ধাপের ১৫০ উপজেলার মাত্র দুটিতে লাঙলের প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচন হবে ১৬১ উপজেলায়, এর তিনটির জন্য দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করতে পেরেছে জাপা। ৯ শতাধিক ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ার জন্য জাপার মনোনয়নপ্রত্যাশী মাত্র দুজন।
জাপার দফতর সূত্র জানিয়েছে, প্রথম ধাপে নরসিংদীর পলাশ এবং রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে লাঙলের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। দ্বিতীয় ধাপে খাগড়াছড়ি সদর, দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ এবং রংপুর সদর উপজেলার চেয়ারম্যান পদের জন্য দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করতে পেরেছে জাপা। জাপার দফতর সম্পাদক মাহমুদ আলম জানান, প্রথম ধাপের জন্য সাত থেকে আটটি, দ্বিতীয় ধাপের জন্য দুই থেকে তিনটি, তৃতীয় ধাপের জন্য পাঁচ থেকে ছয়টি মোট ১৭ থেকে ১৮টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছেন। নির্বাচনে আগ্রহ না থাকার কারণ হিসেবে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা বলছেন, গত ৭ জানুয়ারির ভোটে আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেওয়া ২৬ আসনের ১১টিতে জয়ী হয়েছে জাপা। ভোট পেয়েছে ৪ শতাংশ, যা দলটির ইতিহাসের সর্বনিম্ন। ছাড়ের ২৬ আসনের ৯টিতে জামানত হারিয়েছেন লাঙলের প্রার্থীরা। তবে আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেওয়া আসনের বাইরেও ২৩৯টিতে জাপার প্রার্থী ছিল। সেগুলোয় চারজন বাদে সবাই জামানত হারান। সংসদ নির্বাচনের পর গত ৯ মার্চ দুই সিটি করপোরেশন, ৯ পৌরসভা এবং ১৩ ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয়। এর মাত্র দুটিতে প্রার্থী দিতে পেরেছিল জাপা। কিন্তু সেখানেও জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। দিনে দিনে তৃণমূলে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ায় নেতা-কর্মীরা ভোটের মাঠে আগ্রহ হারাচ্ছেন। এদিকে জাতীয় সংসদে সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি তৃতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন থেকে ভোটে অংশ নিচ্ছে। জানতে চাইলে ওই অংশের মহাসচিব কাজী মামুনুর রশীদ বলেন, সারা দেশে জাতীয় পার্টিকে নতুন উদ্যমে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করছি, তৃতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আমরা প্রার্থী দেব।
স্থানীয় নেতারা বলছেন, ভুল সিদ্ধান্তের কারণে জাতীয় পার্টি হারিয়ে যাওয়ার পথে। এলাকায় যতই গ্রহণযোগ্যতা থাক আমরা নির্বাচনে গেলে জামানত রক্ষা হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। শীর্ষ নেতাদের সমালোচনা করে বলেন, তারা নিজেদের সংসদের সিট নিয়েই খুশি। একটা সমাবেশ করতে পারেন না। অন্য দল না থাকলেও নির্বাচনে লাঙল দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই লাঙল নিতে আগ্রহী নন নেতারা। দলটির এতটাই অবস্থা করুণ যে, লাঙলের দুর্গ হিসেবে পরিচিত রংপুরেও নেই লাঙলের ডামাডোল। রংপুরের জাতীয় পার্টির এক নেতা বলেন, একটা সময় এরশাদ সাহেব সশরীরে উপস্থিত হতে না পেরেও জয়লাভ করেছেন। সেই দল এখন প্রার্থী দিতে পারে না। এভাবে দলটি বিলীন হয়ে যাচ্ছে, কষ্ট লাগে। এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীক দিচ্ছে না। নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী। চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলনও নির্বাচনে যাচ্ছে না। বড় দল হিসেবে পরিচিত দলগুলোর মধ্যে একমাত্র জাতীয় পার্টি দলীয়ভাবে অংশ নিচ্ছে উপজেলা নির্বাচনে। কিন্তু লাঙলের প্রার্থী হতে কারও আগ্রহ না থাকায় নির্বাচনটি আওয়ামী লীগ নেতাদের নির্বাচনে পরিণত হয়েছে।