• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

চোখের সামনেই দুই ভাই-ভাতিজা পুড়ে ছাই

প্রকাশ:  ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৭:০৬ | আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৩:২৬
নিজস্ব প্রতিনিধি

চকবাজারে একসঙ্গে প্লাস্টিক ও কাপড়ের দোকান ছিল এই তিন ভাই মোহাম্মদ আলী (৩২), অপু রায়হান (৩১) ও মোহাম্মদ দিপুর।

বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টার দিকে যখন আগুনের সূত্রপাত তখন দোকানেই ছিলেন তারা। সঙ্গে ছিল মোহাম্মদ আলীর তিন বছরের ছেলে আরাফাতও। তাদের মধ্যে ভাগ্যগুণে বেঁচে গেছেন দিপু। বাকি তিনজন ঘটনাস্থলেই মারা যান।

বেঁচে যাওয়া মোহম্মদ দিপু বলছিলেন, ঘটনার সময় তারা চারজন একসঙ্গে ছিলেন। যখন আগুন লাগে তখন তারা দোকান থেকে বের হচ্ছিলেন। দিপুর ১০-১৫ গজ পেছেন ছিলেন তার দুই ভাই ও ভাতিজা। প্রথমে যখন অল্প আগুন লাগে তখন তারা দেখার জন্য দাঁড়িয়েছিল। এ সময় দিপু একটু সামনে যায়। ঠিক তখনই কেমিক্যালের বিস্ফোরণে পেছনের তিনজন ঘটনাস্থলে মারা যায়।

একসঙ্গে তিন স্বজনকে হারিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গের সামনে বসে কাঁদছেন দিপু ও তার বোন জরিনা বেগম। পাশে অন্য স্বজনরা তাদের সান্ত্বনা দিয়েও তাদের থামাতে পারছিলেন না। নিহত অপুর চার মাসের জোনাইরা নামে এক কন্যাসন্তান রয়েছে। নিহত অপর ভাই মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। তারা রহমতগঞ্জ থাকতেন।

উল্লেখ্য, বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত পৌনে ১১টার দিকে চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের পেছনের ভবনগুলোতে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে রাত ৩টায়। গোটা চকবাজার এলাকাজুড়ে এখন শুধু আহাজারি এবং স্বজন হারানোর আর্তনাদ। বাইরে অপেক্ষারত স্বজনদের কেউই জানেন না তাদের পরিচিতজন বেঁচে আছেন নাকি আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে গেছেন। ভবনের ভেতরে যারা আটকা পড়ে আছেন তাদের উদ্ধারে এখনও চেষ্টা চালাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) মেজর একেএম শাকিল নেওয়াজ জানিয়েছেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৭০টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহগুলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নেয়া হয়েছে।

ভবনের ভেতরে আটকা পড়ে আছে আরও অনেক মানুষ, যাদের বেঁচে থাকার আশা অনেকটা ক্ষীণ। মৃতের এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় লোকজন ও দায়িত্বরত ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

স্থানীয়রা জানান, চুড়িহাট্টা মসজিদের পাশে প্রয়াত ওয়াহিদ চেয়ারম্যানের চার তলা ভবনটিতে প্রথমে আগুন লাগে। তারপর তা পাশের রাজমনি নামে একটি রেস্তোরাঁ এবং সরু রাস্তার উল্টো দিকের তিনটি ভবনে ছড়ায়। এছাড়া সেখানকার দোকানগুলোতে রাসায়নিক ও দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

ঘটনার সময় খানিকটা দূরেই দাঁড়িয়ে ছিলেন হায়দার বক্স লেনের বাসিন্দা বাশার। তিনি জানান, হঠাৎই বিকট একটা বিস্ফোরণের শব্দ তার কানে আসে। সে সময় তিনি একটি প্রাইভেটকারকে ছিটকে উপরের দিকে উঠে যেতে দেখেন।

ওই সময় রাজমনি হোটেলের সামনের রাস্তায় কয়েকটি গ্যাস সিলিন্ডার রাখা ছিল। ট্রান্সফর্মার বিস্ফোরণের পর ওই গ্যাস সিলিন্ডারেও আগুন ধরে যায়। পরে ভবনে ও রাস্তায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এসময় দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করার ফলে আগুনে দগ্ধ হয়ে বেশ কয়েকজন রাস্তাতেই মারা যায়।

আগুনে পুড়ে দগ্ধ অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। পুড়ে মারা যাওয়া লাশগুলোর অবস্থা এমন হয়েছে যে কোনো স্বজনই তাদের আপনজনকে শনাক্ত করতে পারছেন না। তাই একবার তারা ঢাকা মেডিকেলে এবং আরেকবার রাজ্জাক ভবনের সামনে এসে জড়ো হচ্ছেন।

পিবিডি/এআইএস

চকবাজারের অগ্নিকাণ্ড
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close