• শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

২০২৪ সালটা ট্রফি জিতে রাঙাতে চান পাপন

প্রকাশ:  ২০ ডিসেম্বর ২০২৩, ২৩:১৩
ক্রীড়া প্রতিবেদক

দুই মৌসুম হতে চলল দেশের পুরনো এবং ঐতিহ্যবাহী ক্লাব আবাহনী লিমিটেডের জার্সিতে খেলছেন দেশের মেধাবী এবং পরীক্ষিত ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার পাপন সিংহ। নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টার ছেলে পাপন সেই ছোট্টবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন একদিন প্রিয় ক্লাব আবাহনীর জার্সিতে খেলবেন। সেই স্বপ্ন গেল ২০২২-২৩ মৌসুমেই পূরণ হয়েছে। এক মৌসুম পার করে প্রিয় ক্লাবে এখন দ্বিতীয় মৌসুম চলছে (২০২৩-২৪)। ব্যক্তিগত স্বপ্ন পূরণ হয়েছে পাপনের। আকাশী-নীল রোমান্টিক জার্সিটা গায়ে জড়িয়েছেন। কিন্তু দলের বিবর্ণ পারফরম্যান্স পাপনের বর্ণিল ক্যারিয়ারে কিছুটা হলেও আক্ষেপের দেয়াল তৈরি করেছে।

অনেকদিন ধরেই ট্রফিশূন্য আবাহনী লিমিটেড। চলতি মৌসুমটাও ভালো শুরু হয়নি। স্বাধীনতা কাপের সেমিফাইনালে বসুন্ধরা কিংসের বিরুদ্ধে এক হালি গোল হজম করেছে। দলটা সবশেষ ট্রফি ঘরে তুলেছে ২০২১ সালে। স্বাধীনতা কাপ জিতে। একই অবস্থা ফেডারেশন কাপের ক্ষেত্রেও। এই ট্রফিটাও সবশেষ আকাশী-নীলদের ঘরে উঠেছে বছর দুই আগে। প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা কবে জিতেছে আবাহনী- এটা গুণে বের করা কিছুটা সময় সাপেক্ষ। বছর পাঁচেক আগে দেশের ঘরোয়া ফুটবলের সর্বোচ্চ আসর প্রিমিয়ার লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আবাহনী। এরপর বসুন্ধরা কিংসের উত্থানে অনেকটাই কোণঠাসা দলটি। ২০১৭-১৮ মৌসুমে সবশেষ জিতেছে প্রিমিয়ার লিগ। অর্থাৎ আবাহনী ক্লাবের জার্সি গায়ে তোলার পর প্রিয় দলকে ট্রফি জিততে দেখেননি পাপন সিংহ। তবে ২০২৪ সালে অন্য এক আবাহনীকে দর্শক দেখতে পাবেন বলে জানান জাতীয় দল এবং আবাহনীর চৌকষ এ মিডফিল্ডার।

আগামী ২২ ডিসেম্বর মাঠে গড়াচ্ছে ২০২৩-২৪ মৌসুমের প্রিমিয়ার লিগ। উদ্বোধনী দিনে মাঠে নামবে আবাহনী। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি। জয় দিয়ে লিগটা শুরুর প্রত্যয় পাপনের। বলেন, ‘স্বাধীনতা কাপটা আমাদের হাতছাড়া হয়েছে। আমরা ভালো শুরু করেও শেষটা ভালো করতে পারিনি। একটা টুর্নামেন্টে এমনটা হতেই পারে। তবে সামনে প্রিমিয়ার লিগ, ফেডারেশন কাপ রয়েছে। আগামী বছরটা আমরা ট্রফি জিতে রাঙাতে চাই। আমরা সেভাবেই নিজেদের প্রস্তুত করছি। আশাকরি সামনে সমর্থকদের মন আমরা ভরাতে পারব। অনেকদিন আমাদের ক্লাব ট্রফিশূন্য। সেই শূন্যতা ২০২৪ সালে আমরা পূরণ করবই। আশাকরি আকাশী-নীল সমর্থকদের সব সময়ের মতো পাশে পাব।’

লিগের পাশাপাশি ২৬ ডিসেম্বর থেকে মাঠে গড়াতে যাচ্ছে ২০২৩-২৪ মৌসুমের ফেডারেশন কাপ। তবে আবাহনী ফেড কাপ খেলতে মাঠে নামবে নতুন বছর ২০২৪-এ। আপাতত তাই লিগ নিয়েই যত ভাবনা পাপনের। ভাবনার অনেকটা জুড়ে রয়েছে জাতীয় দলও। সবশেষ গেল সেপ্টেম্বরে আফগানিস্তান ম্যাচের পর জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েছেন। লাল-সবুজ জার্সিটা আবারো তাই গায়ে জড়াতে মুখিয়ে আছেন পাপন। সামনে রয়েছে বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব। ক্লাবের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দেশেরও প্রতিনিধিত্ব করতে চান এ মিডফিল্ডার। দীর্ঘদিন খেলতে চান লাল-সবুজের জার্সিতে।

অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে আজকের অবস্থানে এসেছেন পাপন। নেত্রকোনার বারহাট্টা থেকে কখনো ট্রেন, কখনো আবার বাসযোগে ১৫/২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে প্রতিদিন অনুশীলন করতে নেত্রকোনা জেলা স্টেডিয়ামে যেতেন। ওস্তাদ প্রয়াত সজল তালুকদারের কাছে ফুটবলের হাতেখড়ি পাপনের।এরপর বারোহাট্টার সব ফুটবলারদের অভিবাক শাখাওয়াত হোসেইন কাজলের অবদান পাপনের জিবনে কম নয়। তবে ফুটবলার হয়ে ওঠার পেছনে যাদের অবদান সবচেয়ে তারা হলেন বারহাট্টার বিখ্যাত কাজী বাড়ির ওয়াহেদ কাজীর দুই সুযোগ্য পুত্র বারহাট্টা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী সাখাওয়াত হোসেন এবং তার ভাই কাজী সাজ্জাদ হোসেন। পাপনের বুট-জার্সি কিনে দেয়া থেকে মুখে খাবার তুলে দেয়া- সব কিছুর ব্যবস্থা করেছেন কাজী বাড়ির সাখাওয়াত, সাজ্জাদ কাজীরা। শুধু তাই নয় এসএসসি পাশ পাপনের স্কুলের খরচ, স্কুল ড্রেস কিনে দেয়া থেকে খাতা-কলম সব কিছু দিয়ে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন কাজী সাখাওয়াতের পরিবার। জীবনের এ পর্যায়ে এসেও কাজী বাড়ির অবদানের কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন পাপন।

স্কুল ফুটবল দিয়েই মূলত পাপনের ফুটবলার হয়ে ওঠার গল্পের শুরু। বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক বিদ্যালয় গোল্ডকাপে বারহাট্টা সরকারি প্রাথমিক মডেলের এ ছাত্র দু’বার অংশ নেন। এরপর এলাকার বড় ভাই সুজন তালুকদারের পরামর্শে ঢাকার ফুটবলে পা রাখেন। পাওনিয়ার লিগে মিরপুর সিটি ক্লাব দিয়ে শুরু হয় ঢাকার ফুটবল মিশন। জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার বেলাল আহমেদের হাত ধরে ঢাকার ফুটবলের অলিগলি চেনেন। এরপর সেখান থেকে ধাপে ধাপে তৃতীয় বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ, অনূর্ধ্ব-১৮ জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে মোহামডান ক্লাব, বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ খেলে নাম লেখান ঘরোয়া ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদার আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে।

বাবাহারা পাপনের সংসারে এখন মা এবং নবম শ্রেণী পড়ুয়া এক ছোট্ট ভাই রয়েছে। পরিবারের কারোর খেলাধুলার সঙ্গে পূর্বে জড়িত থাকার ইতিহাস না থাকলেও পাপনের বাবা ফুটবলের পাঁড়ভক্ত ছিলেন। বাবা বেঁচে থাকাকালীন ছেলেকে নানানভাবে উৎসাহ-প্রেরণা দিতেন। স্বর্গীয় পিতাকে অনেক মিস করেন পাপন। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমার বাবা অনেক কষ্ট করেছেন। কৃষি কাজ করতেন। তবে আমি ফুটবল খেলি বলে কখনো রাগ করেননি। সব সময় উৎসাহ দিতেন। আজ বাবা বেঁচে নেই। বাবা থাকলে এখন অনেক খুশি হতেন।’

বেলজিয়ামের অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার কেভিন ডি ব্রুইনের ভক্ত পাপনও চান কেভিনের মতো সারা জাগানো ফুটবলার হতে। এছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক মামুনুল ইসলামের মতো ভালোমানের মিডফিল্ডার হওয়ার বাসনাও তার। সেই সঙ্গে পাপনের স্বপ্ন জাতীয় দলে দীর্ঘ সময় খেলা এবং দেশের জন্য অনেক সাফল্য-সম্মান বয়ে নিয়ে আসা। নিজজেলা নেত্রকোনার বারহাট্টাবাসীরও মুখ উজ্জ্বল করতে চান।

পাপন,আবাহনী
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close