সিজারের পর মা-সন্তানের মৃত্যু, চিকিৎসক বললেন ‘রিপোর্ট করে লাভ নাই’
ঠাকুরগাঁও শহরের একতা নার্সিং হোম ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় নাসিমা বেগম নামে (৩০) এক প্রসূতি ও তার নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে চিকিৎসক জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে। স্বজনদের দাবি, ভুল ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসার কারণেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনার পর সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদে ঝড় বইছে।
স্বজন ও এলাকাবাসী জানান, মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার দেবীপুর ইউনিয়নের খইলসাকুরি গ্রামের সন্তান সম্ভবা নাসিমা বেগমকে ওই ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। এরপর কোনো প্রকার পরীক্ষা-নীরিক্ষা ছাড়াই তার সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়। সিজারের পর শিশু সন্তানটি মারা যায়। ডাক্তার তাৎক্ষণিক রোগীকে রংপুরে রেফার্ড করেন। এরপর ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ একটি অ্যাম্বুলেন্স এনে রোগীকে সেখানে রেখে পালিয়ে যায়।
সম্পর্কিত খবর
জানা গেছে, ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের পরামর্শে অপরাশেন করান চিকিৎসক জাহাঙ্গীর। অপরাশনের সময় তার ভুলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে চিকিৎসক পালিয়ে যান।
এ ঘটনার পর স্থানীয়রা ক্লিনিক ঘেড়াও করে প্রতিবাদ জানালে কৌশলে সবাই পালিয়ে যায়। নিরুপায় হয়ে পরে অপারেশন করাতে আসা দরিদ্র পরিবারে সবাই। সুরাহা ছাড়াই মা ও শিশুর লাশ নিয়ে বাড়িতে যান স্বজনরা।
এমন মৃত্যু মেনে নিতে না পারায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একের পর এক প্রতিবাদের ঝড় বইতে শুরু করে। তবুও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা।
স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা জানান, এমবিবিএস ডাক্তার না হলেও তিনি পিএসডি করেছেন দাবি করে জাহাঙ্গীর দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ক্লিনিকে অপারেশন চালিয়ে আসলেও স্বাস্থ্যবিভাগ তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আর সে কারণে দু’বছরে জেলার সুশ্রী নাসিং হোম, সেভেন ডে ক্লিনিকসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে অপারেশন করাতে গিয়ে বেশ কয়েকজনকে হত্যা করেছে।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অপারেশন ভালো হয়েছে। রোগীর অবস্থা আগে থেকেই খারাপ ছিলো। রিপোর্ট করে কি হবে? এর আগে আমি জেলও খেটেছি। তারপরেও আমি অপারেশন করবোই।
তবে তিনি তার বৈধ কোনো কাগজপত্র দেখাতে রাজি হয়নি।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে শীর্ষ কর্মকর্তা সিভিল সার্জন ডাঃ নুর নেওয়াজ জানান, জাহাঙ্গীরের ভুল অপারেশনে বেশকয়েক জনের মৃত্যু হয়েছে। থানায় তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছিলো, জেলও খেটেছিলো শুনেছি। আমি এ জেলায় নতুন। তার বৈধ কাগজপত্র আছে কি না খতিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের ব্যবস্থাপনা কমিটির সিন্ধান্তে করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা নেয়া হবে।
সদর থানার ওসি তানভিরুল ইসলাম জানান, ঘটনাটি শুনেছি অভিযোগ পেলে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে আইনগত প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
পূর্বপশ্চিমবিডি/অ-ভি