• মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

মরুর ফল ‘ত্বীন’ চাষে স্বপ্ন বুনছেন তরুণ উদ্যোক্তা

প্রকাশ:  ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৭:৩৩ | আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৮:১৮
ফেনী প্রতিনিধি
মরু অঞ্চলের বিখ্যাত ফল ত্বীন

ফেনীতে চাষাবাদ শুরু হয়েছে মরু অঞ্চলের বিখ্যাত ফল ত্বীন। পবিত্রগ্রন্থ আল কোরআনে বর্ণিত এ ফলটি চাষাবাদ নিয়ে ফেনীর কৃষি বিভাগও ব্যাপক আশাবাদী। কৃষিবিদরা বলছেন এ জেলার বিভিন্ন এলাকার মাটি এবং আবহাওয়ার ফলটির চাষাবাদের জন্য উপযোগী।

ফেনী সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা ফরিদ উদ্দিন মাসুদ এ ফলটির পরীক্ষামূলক চাষাবাদ করে জেলায় ইতোমধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। স্বপ্ন বুনছেন বাণিজ্যিক আবাদের। ওই এলাকার আমিন বাজারের পশ্চিম পাশে ৩৩ শতক জমির মধ্যে তিনি ডুমুর জাতীয় এ ফলটির আবাদ করেছেন।

কৃষি উদ্যোক্তা মাসুদ জানান, মধ্য প্রাচ্যের দেশ কুয়েত এবং ইউরোপের দেশ ইতালি থেকে তিনি চারাগুলো সংগ্রহ করেছেন। মোট ১৫টি প্রজাতির ত্বীন ফল তিনি পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করছেন। ১ বছর আগে ৩৩ শতক জমিতে মোট ১০০ টি চারা দিয়ে তিনি ত্বীন ফলের আবাদ শুরু করেন। প্রতিটি চারা আনতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৮০০ টাকার মত । জমি তৈরি, জৈব সার ও শ্রম মজুরি সব মিলিয়ে এ বাগানে খরচ হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা।

মাসুদ জানান, রোপণের দুই মাস পরেই গাছে ফলন আসতে শুরু করে। ফলটি খেতেও ভালো। পরীক্ষামূলক হলেও অনেকেই এ ফলটি কিনতে আসেন। এ ফলের বাজার ভালো। উৎপাদন হলে ক্রেতার অভাব হবেনা। একদম অর্গানিকভাবে এ ফলটি চাষাবাদ করা যায়। কোন ধরনের রাসায়নিক সার ব্যবহার না করেই জৈব সার দিয়েই তিনি চাষাবাদ করছেন। মাসুদ আরো জানান, তিনি এখানে পরীক্ষামূলকভাবে চাষাবাদ করে সম্ভাবনা দেখছেন। পরে এটিকে আরো সম্প্রসারণ করার জন্য নতুন জমি নিয়েছেন। সেখানেও বানিজ্যকভাবে চাষাবাদ করা হবে।

তিনি জানান, মহাপবিত্র আল কোরআন মাজীদে বর্ণিত এ ফল খেতে যেমন খুব সুস্বাদু তেমনিভাবে এর রয়েছে অনেক পুষ্টিগুন। রয়েছে ওষুধিগুন।

তিনি আরো জানান, ত্বীন গাছটির বীজ থেকে চারা উৎপাদনের হার কম হওয়ায় নির্ভর করতে হচ্ছে কাটিং বা কলম চারায়। যার কারণ হচ্ছে বীজের চারায় ফলন আসে কয়েক বছর পর। অন্যদিকে কলম চারায় ফল আসে মাত্র ৬ মাসে।

প্রথমবারের মতো দেশীয় ফল ডুমুর আকৃতির ত্বীন গাছে ফল আসতে শুরু হওয়ায় দৃষ্টি কেড়েছে স্থানীয়দের। ধর্মপুর গ্রামের কৃষক জাকির হোসেন বলেন, এই ফলের কথা অনেক শুনেছি। কোরান শরীফে পড়েছি কিন্তু কখনো দেখিনি। মাসুদ বাগান করার কারণে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে।

স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল হাসান বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অফিস থেকে ত্বীন চাষের বিষয়ে কৃষি উদ্যোক্তা ফরিদ উদ্দিন মাসুদকে নিয়মিত কৃষি পরামর্শ প্রদান করা হয় এবং বিভিন্ন বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেয়া হয়। পরীক্ষা নিরিক্ষা করে দেখা গেছে এই অঞ্চলে ত্বীন ফল আবাদ করলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে।

কৃষি কর্মকর্তা জানান, কাঁচা-পাঁকা অবস্থায় প্রতি কেজী ত্বীন ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বিক্রি হয়। আর শুকনো ত্বীন ফল কেজি হাজার টাকার উপরেও বিক্রি হয়। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ত্বীন ফলের চাষ করা হলে লাভবান হওয়া যাবে বলে জানান তিনি।

ফেনী সদর উপজেলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমীন আক্তার জানান, ত্বীন ফল মরুভূমি অঞ্চলের ফল হলেও বাংলাদেশের অনেক জেলায় ইতোমধ্যে এটির ভাল চাষাবাদ হচ্ছে। ব্যাপক জনপ্রিয় ও পবিত্র ফল হিসেবে পরিচিত এটি। এর ওষুধি গুণও রয়েছে অনেক। এ ফলের বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষাবাদ করলে অনেক অর্থ উপার্জন করা সম্ভব। একইসঙ্গে যেহেতু এ ফলের বিশ্বব্যাপী ব্যাপক চাহিদা রয়েছে সে কারণে ত্বীন ফল চাষ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করাও সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

পরীক্ষামূলক চাষে সফল হওয়ার পর এখন কৃষক পর্যায়ে বাণিজ্যিক চাষ ছড়িয়ে দিতে কাজ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এ কৃষি কর্মকর্তা।

স্থানীয় কৃষি উদ্যোক্তারা জানান, সরকারি উদ্যোগ ও সহযোগিতা থাকলে এ ফলটির চাষাবাদ ফেনীতে সম্প্রসারিত হবে।

পূর্বপশ্চিমবিডি/জেএস

ফেনী,ত্বীন

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close