• মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

ইট ভাটার ধোয়ায় পুড়ল কৃষকের স্বপ্ন

প্রকাশ:  ২৮ এপ্রিল ২০২২, ১৮:১৯
লালমনিরহাট প্রতিনিধি

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় ইট ভাটার বিষাক্ত ধোয়ায় কৃষকের প্রায় ১৫০ একর জমির ধান ও ভুট্টা খেত নষ্ট হয়ে গেছে। চাষাবাদের জন্য বর্গাচাষিরা যে ঋণ নিয়েছেন তা পরিশোধ করতে না পারলে দ্বিগুণ হারে তা পরিশোধ করতে হবে।

ভুক্তভোগী কৃষকরা কৃষি কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করলেও তারা এখন পর্যন্ত তেমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। আর ভাটার মালিক ক্ষতি পূরণ দেওয়া হবে বলে শুধু আশার বানী শুনিয়ে যাচ্ছেন।

হাতীবান্ধা উপজেলার টংভাঙ্গা ইউনিয়নের জোত বাড়াই পাড়া গ্রামে এ এম বি ভাটাটি অবস্থিত। আর এই ভাটার মালিক আব্দুল মজিদ ও আহম্মদ আলী।

জানা যায়, এ এম বি ইট ভাটার আগুনের বিষাক্ত ধোয়ায় ওই এলাকার কৃষকের প্রায় ১৫০ একর ফসলি জমির ধান ও ভূট্টা নষ্ট হয়ে গেছে। এর আগেও কয়েক বার এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। তবে ভাটার মালিককে জানানো হলে, তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বরং কৃষককে ধানের রোগ হয়েছে বলে কীটনাশক প্রয়োগ করার পরামর্শ দিয়েছেন। খবর পেয়ে কৃষি অফিসের লোকজন ও টংভাঙ্গা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেন ও ক্ষতিগ্রস্থ ফসলি খেত পর্যবেক্ষণ করে।

সরেজমিনে ওই এলাকায় দেখা যায়, ফসলি জমি, আবাসিক এলাকা ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশেই অবস্থিত এই ইটের ভাটা। এর ফলে সবধরনের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ওই এলাকার কোমলমতি শিক্ষার্থী ও মানুষদের।

কৃষক মজিবর রহমান বলেন, ইট ভাটার কারণে আমাদের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভাটার মালিক তা মানছেন না। আমরা এর ক্ষতি পূরণ চাই। তা না হলে ঈদ করতে পারব না। আর ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে দ্বিগুন হারে সুদ দিয়ে টাকা পরিশোধ করতে হবে।

আরেক কৃষক আইয়ুব বলেন, আমার প্রায় ৪০ হাজার টাকার ভূট্টার ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। আমি এর ক্ষতি পূরণ চাই।

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ অনুযায়ী কোনো কৃষি জমি, ১ কিলোমিটারের মধ্যে ৫০ ঘরের অধিক আবাসিক এলাকা, ১ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকলে সেখানে ইট ভাটা স্থাপন করা যাবে না। করলে লাইসেন্স বাতিল হবে।

কিন্তু এই ভাটাটি যেখানে অবস্থিত তার চারপাশে ফসলি জমি, ভাটার সাথেই ১০০ মিটারের মধ্যে অবস্থিত একটি আবাসিক এলাকা যেখানে প্রায় ১০০০পরিবার বসবাস করে। আর প্রায় ৫০০ মিটারের মধ্যে একটি সরকারি প্রাথমিক স্কুল ও একটি মাদ্রাসা রয়েছে। তারা সকল আইন ভঙ্গ করে প্রশাসনের নাকের ডগায় ইট ভাটার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

জানা যায়, এই ইট ভাটাটি ২০১০ সালে দিকে কার্যক্রম শুরু করে। সেই সময় স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক শক্তি কাজে লাগিয়ে সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূত ভাবে এই ইট ভাটাটি স্থাপিত হয়। ইট ভাটার লাইসেন্স এর মেয়াদ ৩ বছর হলেও প্রতি বছর প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে রিনিউ করে মেয়াদ বর্ধিত করে।

এ বিষয়ে টংভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম হোসেন বলেন, আমি ওই এলাকা গিয়ে কৃষদের সাথে কথা বলেছি ও কৃষি অফিসে অবগত করেছি।

এ বি এম ভাটার মালিক আব্দুল মজিদ বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ক্ষতি পূরণ দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওমর ফারুক বলেন, ওই এলাকায় গিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজির হোসেন বলেন, বিষয়টি জেনেছি। ওই এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পূর্বপশ্চিমবিডি/টিকেআর/জেএস

লালমনিরহাট

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close