• বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

বাঁধের এক পাশ স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামতের পর ভাঙল আরেক পাশ

প্রকাশ:  ১৬ আগস্ট ২০২২, ১৯:১৪
শেখ নাদীর শাহ্, খুলনা

মলিন মুখেই ফিরতে হলো বাড়ি। কয়েক শ' মানুষের স্বেচ্ছাশ্রমেও যায়নি বাঁধা স্বপ্নের বাঁধ। তৃতীয় দিনেও টিকে থাকার লড়াইয়ে ব্যর্থ খুলনার কয়রা উপজেলার প্লাবিত এলাকার মানুষ । শত শত মানুষের স্বেচ্ছাশ্রমেও ফোটেনি বিজয়ের হাঁসি। একদিকে রিং বাঁধ বাঁধতেই ধ্বষে যাচ্ছে অপর পাশ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, স্বেচ্ছাশ্রমের কমতি না হলেও ঘাটতি রয়েছে পর্যাপ্ত বাঁশ-খুটি ও সিনথেটিক-জিও ব্যাগের। নানা সংকটে দফায় দফায় ভাঙ্গনের মুখে চরম বিপাকে রয়েছে উপকূলীয় কয়রার হাজারো জনগন। এনিয়ে জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।

এর আগে, গত ১৭ জুলাই ভোররাতে উপজেলার ১৪/১ নং পোল্ডারের পাউবোর (পানি উন্নয়ন বোর্ড) দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের চুরামুখা খালের গোড়া এলাকার বেড়িবাঁধের প্রায় ২০০ মিটার এলাকা জুড়ে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

পরের দিন ১৮ জুলাই প্রায় দুই হাজার মানুষের স্বেচ্ছাশ্রমে রিংবাঁধ দিয়ে পানি আটকাতে সক্ষম হন।এর পর প্রায় ১ মাস অতিবাহিত হলেও ওই স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোন প্রকার নজর না দেওয়ায় গত ১৪ আগস্ট পুনরায় কপোতাক্ষের অস্বাভাকিক জোয়ারের পানিতে রিংবাঁধটি পুনরায় ভেঙ্গে গিয়ে বিস্তীর্ন অঞ্চল প্লাবিত হয়। ভেসে যায় কয়েক শ' বিষা মৎস্য ঘের। নোনা পানিতে প্লাবিত হয় বসত বাড়িসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

সর্বশেষ আজ মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) সকাল ৭ টা থেকে বেদকাশির চুরামুখায় কপোতাক্ষ নদের ভেঙে যাওয়া রিংবাঁধ নির্মাণে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ শুরু করে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ। তবে গতকাল সোমবারের অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন হলেও নতুন করে ভেঙ্গেছে দক্ষিণ পাশের একাংশ। বলাচলে পানির তীব্র স্রোতে সেখানে তৈরি হয়েছে খাল।

এর আগে, গত রোববার (১৪ আগস্ট) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত স্বেচ্ছায় ভাঙ্গা বাঁধ সংস্কারে কাজ শুরু করে প্রায় আড়াই হাজারের বেশি মানুষ। ওই দিনই ৩০০ মিটার রিংবাঁধ নির্মাণ সম্পন্ন হয়। তবে সামান্যা অংশের কাজ বাকী থাকাতে নদীতে জোয়ার চলে আসায় বাধ্য হয়ে কাজ বন্ধ করে ফিরে আসে এলাকাবাসী। ওই দিন বাঁধ সংস্কারে সর্বসাধারণের সাথে কাজ করেন খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার জিএম মাহবুবুল আলম। কাজ শেষে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বাঁশ ও ব্যাগ স্বল্পতায় কাজে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভিন্ন সরঞ্জামাদি সরবরাহ স্বল্পতায় স্বেচ্ছায় শ্রমিকের ঘাটতি না থাকলেও সরঞ্জাম সংকটে বাঁধ নির্মাণে ব্যার্থ হন তারা।

এ ব্যাপারে সাবেক ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আছাদুজ্জামান বুলবুল বলেন, পর্যাপ্ত সরঞ্জামাদি না থাকায় কাজে সমস্যা হচ্ছে।পানি উন্নয়ন বোর্ড তেমন কোন সহযোগীতা করছেন না জানিয়ে নিজেরাই স্থানীয়ভাবে অর্থের যোগান দিয়ে যেমনটা পরছেন কাজ করছেন বলেও জানান তিনি।

অপর এক ইউপি সদস্য মো. মাসুদ রানা বলেন, আজ পুরাতন ভাঙা সব মেরামত করা হয়েছে। তবে দক্ষিণ পাশ দিয়ে খালের সৃষ্টি হয়ে প্রায় ১৫০ ফুটের মত জায়গা পুনরায় ভেঙে গিয়ে পানিবন্দি রয়েছে ১৫ হাজার মানুষ। ক্রমাগত ক্ষতির পরিমাণ বেড়েই চলেছে। সরঞ্জামাদির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেম্বার মোজাফ্ফার পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধি। তার মাধ্যমে আমরা সরঞ্জামাদি পাচ্ছি। তবে চাহিদার তুলনায় তা অনেক কম বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওখানকার প্রতিনিধি ও ইউপি সদস্য মো. মোজাফ্ফার শিকারী সরঞ্জামাদির বিষয়ে জানান, পর্যাপ্ত ব্যাগ ছিল। জোয়ারের পানি ওঠায় কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। তিনি আরও বলেন, পাউবো সরাসরি ফান্ড দিতে পারে না, ব্যাগ কিনে দিয়েছিল। আর বাকি সব তিনি নিজে খরচ করেছেন। তাকে ডিপিএম দিলে সেই খরচ উঠবে বলে ও জানান তিনি।

কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, একই স্থানে বারবার ভাঙ্গা আসলেই দুঃখজনক। আমরা দেখেছি বিগত ১০ বছরে জরুরী কাজের নামে কয়রার বেড়ীবাঁধ সংষ্কার ও নির্মাণ বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ১শ’ ৪২ কোটি ৫৮ লাখ ৮ হাজার টাকারও বেশি। অথচ সেসব জোড়াতালির বাঁধ সংস্কারের নামে যেটুকু কাজ হয়, সেখানেও রয়েছে আমলা-কর্মকর্তা-জনপ্রতিনিধি-ঠিকাদার মিলিয়ে সরকারি তথা জনগণের অর্থ লুটপাটের অসাধু চক্র। টেন্ডারে কাজ পেয়ে মূল ঠিকাদার নিজের লাভটা রেখে কাজটা বিক্রি করে দেন আরেকজনের কাছে। এভাবে হাতবদল হলে কাজের মান খারাপ হতে বাধ্য বলেও দাবি করেন তিনি।

এ নাগরিক নেতা আরও জানান, শুধু দক্ষিণ বেদকাশি নয়, উপকূলীয় এ উপজেলার দুই লক্ষাধিক মানুষকে প্রতিনিয়ত নদীভাঙনের সঙ্গে লড়াই করে বাঁচতে হয়। একটি টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবিতে এ যাবত কয়রার মানুষ আন্দোলন করে আসছিল। এখন বরাদ্দ হয়েছে, এবার আন্দোলন সচ্ছতার সাথে কাজটি বাস্তবায়নের বিষয়টি বুঝে নেওয়ার বলেও জানান তিনি

পাউবো’র বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মশিউল আবেদীন বলেন, তারা পর্যাপ্ত পরিমাণে বাঁশ, সিনথেটিক ব্যাগ সহ প্রয়োজনীয় সবকিছু দিয়ে প্রথমিক সহযোগীতা করেছেন। পাউবো কর্তৃপক্ষ কোন অন্যায় প্রশ্রয় দেয়না বলেও দাবি করেন তিনি।

পূর্বপশ্চিমবিডি/নদীর/এআই

বাঁধ,খুলনা,নদীভাঙন

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close