ট্রেনে দুর্বৃত্তের ছোঁরা পাথরে চোখের আলো নিভে গেল শিশুর
ট্রেনে দুর্বৃত্তের ছোঁরা পাথরে চোখের আলো নিভে গেল শিশু আজমির সরকারের (৬)। এ ঘটনায় নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে থানায় একটি মামলা হলেও পুলিশ তাদের তদন্তে দুর্বৃত্তদের পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি। ওই অবস্থাতেই আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে রেলওয়ে পুলিশ।
জানা গেছে, গত বছরের ১৫ আগস্ট নীলফামারীর ডোমার উপজেলার গোমনাতী ইউনিয়নের দক্ষিণ আমবাড়ি গ্রামের হ্যাচারি ব্যবসায়ী মারুফ আলম ছোট ছেলে আজমির সরকারকে নিয়ে আন্তঃনগর সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনযোগে ডোমার থেকে সৈয়দপুরের ভাড়া বাসায় ফিরছিলেন। আজমির তার বাবার কোলেই বসেছিলো।
সম্পর্কিত খবর
ট্রেনটি সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনে প্রবেশের সময় হোম সিগন্যালের কাছে পৌঁছালে ওই ট্রেনে পাথর ছুঁড়ে মারে দুর্বৃত্তরা। তাদের ছোঁড়া একটি পাথর এসে আঘাত করে ট্রেনের বগির জানালার পাশে বসা শিশু আজমিরের ডান চোখে। এতে মারাত্মক আঘাত পেয়ে তার চোখ ফেটে রক্ত ঝরতে থাকে।
পরে সৈয়দপুরে নেমে রেলওয়ে পুলিশের সহযোগিতায় দ্রুত সৈয়দপুর হাসপাতালে নেওয়া হয় আজমিরকে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। রংপুর মেডিকেলের চিকিৎসকেরা শিশুটির চোখের অবস্থা দেখে সঙ্গে সঙ্গে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন। তাদের পরামর্শে পরবর্তীতে আজমিরকে রাজধানীর ইস্পাহানি ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালের নিয়ে চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. মো. কামরুল হাসান সোহেলের তত্তাবধায়নে চিকিৎসা করানো হয়। সেখানে দুই দফায় অস্ত্রোপচার করে আজমিরের চোখের ভেতরে থাকা ট্রেনের বগির জালানার গ্লাসের টুকরো অপসারণ করা হয়। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।
মারুফ আলম জানান, ঢাকায় চিকিৎসার পরও আজমিরের আঘাতপ্রাপ্ত ডান চোখের দৃষ্টিশক্তি নিভে গেছে। পরে ভারতের কলকাতায় শংকর নেত্রালয়ে তিন দফায় নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। সর্বশেষ গত ২৩ আগস্ট সেখানকার চিকিৎসকেরা জানান আর কখনই আজমির তার চোখের আলো ফিরে পাবে না।
কান্নাজড়িত কন্ঠে বাবা মারুফ আলম জানান, শুরু থেকে সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে ইতোমধ্যে পাঁচ লাখ টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে। ওই টাকার জোগান দিতে তিনি কৃষি জমি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ ঘটনায় সে সময় সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার ময়নুল হোসেন বাদি হয়ে সৈয়দপুর রেলওয়ে থানায় একটি মামলা করলেও ব্যাপারটা ওই পর্যন্তই শেষ। মামলার পর থানা পুলিশ তার সঙ্গে কোনো রকম যোগাযোগ করেনি। বাংলাদেশ রেলওয়েরও কেউ খোঁজ নেননি তার সন্তানের।
সৈয়দপুর রেলওয়ে থানার ওসি (দায়িত্বপ্রাপ্ত) মো. শফিউল ইসলাম জানান, ইতোমধ্যে মামলাটির চুড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দেওয়া হয়েছে। ট্রেনে পাথর ছুঁড়ে মারা দুর্বৃত্তদের পরিচয় মেলেনি বলে মামলার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তবে চলন্ত ট্রেনে পাথর ছুঁড়ে মারা বন্ধে রেল লাইনের দুই পাশে বসবাসকারীদের ও ট্রেন যাত্রীদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যাপক মাইকিং, লিফলেট বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি করা হয়।
পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম