• মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

সাতক্ষীরায় যুবলীগের কমিটি বিক্রির অভিযোগ কেন্দ্রের দুই নেতার বিরুদ্ধে

প্রকাশ:  ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০১:৫০
নিজস্ব প্রতিবেদক

সাতক্ষীরায় অর্ধ কোটি টাকার বিনিময়ে যুবলীগের কমিটি বিক্রির অভিযোগ উঠেছে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য রফিকুল ইসলাম ও সহ-সম্পাদক বাবলুর রহমানের বিরুদ্ধে।

দীর্ঘ ৯ বছর পর সম্প্রতি বহু কাঙ্ক্ষিত সাতক্ষীরা জেলা যুবলীগ আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন হয়েছে। গত ১ সেপ্টেম্বর ২১ সদস্য বিশিষ্ট ওই আহ্বায়ক কমিটি দিয়েছে কেন্দ্রীয় যুবলীগ। আর কমিটি অনুমোদনের পর থেকেই জেলা জুড়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে। টাকা নিয়ে পদ না দেওয়া ও অর্ধ কোটি টাকা নিয়ে কমিটি দেওয়ার অভিযোগ পদ বঞ্চিতদের। আর এসব অভিযোগ সাতক্ষীরা জেলার অধিবাসী কেন্দ্রীয় দুই যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে।

২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর আব্দুল মান্নানকে আহবায়ক ও জহিরুল ইসলাম কে যুগ্ম আহবায়ক করে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছিল। উক্ত কমিটি প্রদানের পর থেকেই জেলার রাজনীতিতে যুবলীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছিল। তবে বিগত ২০২০ সালের ৩০শে জুলাই একটি ঘটনায় জেলা যুবলীগ এর তৎকালীন আহবায়ক আব্দুল মান্নানকে বহিষ্কার করা হয়। এরপরের ৩টি বছর জেলা যুবলীগ অগোছালো ভাবে চলছিল। এ অবস্থায় সাতক্ষীরা জেলা যুবলীগ এর আহবায়ক কমিটি গঠনের জন্য ২০২১ সালের ২৪ শে ডিসেম্বর জেলা থেকে আগ্রহী প্রার্থীদের কাছে জীবন বৃত্তান্ত আহবান করা হয়। সে সময় ১৬ জন আহবায়ক ও ১৭ জন যুগ্ম আহবায়ক হওয়ার জন্য জীবন বৃত্তান্ত জমা দেয়।

এদিকে, দীর্ঘ ১৯ মাস ধরে চলা জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত ১লা সেপ্টেম্বর কমিটি প্রদান করা হয়। এরপর নতুন কমিটির নেতাদের নিয়ে জেলা জুড়ে এখন টক অব দ্যা টক এরা কারা? কোথা থেকে? কার মাধ্যমে? কোন যোগ্যতায় কমিটির দায়িত্বশীল পদ পেল। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ত্যাগী, কাঙ্ক্ষিত পদ প্রত্যাশীরা বিভিন্ন পোস্টের মাধ্যমে নতুন কমিটি নিয়ে নান প্রশ্ন তুলছে।

নেতা কর্মীদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাতক্ষীরার তালার রফিকুল ইসলাম ও কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক শ্যামনগরের বাবলু নতুন এই বিতর্কিত কমিটি গঠনে সিন্ডিকেট করেন। আনুমানিক ৫০ লক্ষ টাকা দিয়ে উক্ত কমিটির জন্য রফিকুল ও বাবলু নিয়েছে বলে অভিযোগ তাদের।

শ্যামনগর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা যুবলীগের সদস্য এসকে সুজন বলেন, যারা মোটা টাকা দিয়েছে তারাই যুবলীগের কমিটিতে এসেছে। আমাকে কমিটিতে রাখতে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহ সম্পাদক বাবলু ভাই ৫ লক্ষ টাকা দাবি করে। আমি তাকে ২ লক্ষ টাকা দিয়েছি। তবুও আমাকে কমিটিতে রাখা হয়নি। এমন কি আমার টাকাও ফেরত দেননি।

তিনি বলেন, মূলত মোটা অংকের টাকা লেনদেনের কারণেই জামাত-বিএনপির সুবিধা প্রাপ্তরাই এই কমিটির আহবায়ক ও যুগ্ম আহবায়ক মনোনীত হয়েছে।

এদিকে, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কিমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য রফিকুল ও সহ সম্পাদক বাবলুর রহমানের ফেসবুক অউডির বিভিন্ন ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা যায় তারা জামাত-বিএনপির নেতাকর্মীদের ঘনিষ্ঠ।

তাদের বিভিন্ন ফেসবুক পোষ্টে দেখা গেছে, ফেসবুকে যুদ্ধ অপরাধ সাজাপ্রাপ্ত আসামি সাইদীর পক্ষে, বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতি করে এমন জামাত-বিএনপির নেতা কর্মী ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাদের সখ্যতা রয়েছে।

তালার যুবলীগের এক নেতা বলেন, একাধিক নাশকতা মামলার আসামী, ইসলামকাটি ইউপি সদস্য আব্দুর রউফ হত্যাকারী, সাতক্ষীরায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলার প্রধান আসামী হাবিবুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ সহযোগী শেখ মহিউদ্দীনকে নিয়ে আমাদের কেন্দ্রীয় নেতা রফিকুল ভাই সভা সমাবেশ করছে। তারা বলছে তালায় বিএনপি জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতা করেন রফিকুল । আমাদের মত ত্যাগী নেতা কর্মীদের কোন প্রকার মূল্যায়ন করেন না।

তিনি বলেন, সম্প্রতি জেলা যুবলীগের কমিটি হওয়ার পর নাশকতা ও হত্যা মামলার আসামিদের নিয়ে প্রকাশ্যে মিটিং ও এমনকি গলায় ফুলের মালা দিয়ে জড়িয়ে ধরে ছবি তুলে উল্লাস করতে দেখা গেছে। প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি বহরে হামলা মামলার প্রধান আসামী হাবিবুল ইসলাম হাবিবের বডি গার্ডকে তিনি যুবলীগ নেতা বানিয়েছেন।

এদিকে, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক বাবলুর বিরুদ্ধে তার জন্মস্থান ইশ্বরীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক লিখিত একটি প্রত্যয়ন পত্র সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে বাবলু ও তার পরিবার জামাত-বিএনপি র রাজনীতির সাথে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত।

অপরদিকে শ্যামনগর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক মিজানুর রহমান বলেন, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক বাবলুর বহমান আমার কাছ থেকে কমিটিতে রাখার কথা বলে ৩ লক্ষ টাকা নিয়েছে। তবে আমাকে কমিটিতে না রেখে যাদের কাছ থেকে বেশি টাকা পেয়েছে তাদের কে কমিটিতে রেখেছে।

জেলা যুবলীগ এর সাবেক ও বর্তমান কমিটির একাধিক নেতা-কর্মীরা বলেন, জেলা যুবলীগ এর আহবায়ক কমিটির আহবায়ক মিজান সহ যুগ্ম আহবায়কবৃন্দের সকলের বাড়ি সাতক্ষীরা জেলা শহরের বাহিরে। কারো বাড়ি জেলা শহর থেকে ৫০, কারো বা ২০ কিলোমিটার দূরে বসবাস। তারা কিভাবে আগামী দিনে জেলা শহরে এসে শহরের পরিবেশে খাপ খাইয়ে বিএনপি - জামায়াতের আন্দোলন সংগ্রাম মোকাবিলা করবে। মিজান ও সুজনের রাজনীতি ২০০৯ সালের দল ক্ষমতায় আসার পরে থেকে শুরু। স্রোতের বিপরীতে রাজনীতি করে নাই। তারা পারিবারিক ভাবে জামাত সংশ্লিষ্ট। বিগত ২০১৫ সালে সুজনকে রাষ্ট্র ঘোষিত নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরীতের সাথে মিটিং করতে দেখা গেছে। মূলত কয়েকদিন আগে সরকারী চাকরি ছেড়ে দিয়ে সে জামাতের অনুপ্রবেশকারি হিসেবে তাদের মদদে রাজনীতি করতে এসেছে।

তারা বলেন, মূলত যারা রফিকুল ও বাবলুকে টাকা দিয়েছে, তারাই কমিটিতে পদ পেয়েছে। ৫০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে এই কমিটি দেয়া হয়েছে। আবার অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েও তাদের কমিটিতে রাখেনি। এমনকি আহবায়ক কমিটিতে প্রবাসী একাধিক মানুষকে সদস্য করা হয়েছে। এছাড়া দলের দুঃসময়ে ত্যাগী কর্মীদের বাদ দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলার রাজনীতি সচেতন মানুষসহ সাধারণ মানুষ হতাশা ব্যক্ত করেছেন। সকলের দাবি পুনঃ বিবেচনা করে কমিটি গঠন করতে।

এসব বিষয়ে জানতে যুবলীগের কেন্দ্র কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য রফিকুল ইসলাম ও সহ-সম্পাদক বাবলু রহমানকে একাধিক বার কল করলেও তারা রিসিভ করেননি।

অপরদিকে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশকে একাধিক কল দিলেও তিনি রিসিভ করেনি।

সাতক্ষীরা,যুবলীগ

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close