ঘুষের প্রতিবাদ, কৃষককে ব্যাংকে আটকে রেখে মারধর
ব্যাংক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ ও হয়রানির অভিযোগ করায় গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে তদন্তের কথা বলে দেনায়েত সরদার (৬২) নামে এক কৃষককে ব্যাংকে ডেকে নিয়ে আটকে রেখে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, মারধরের ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত। সেটি তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিলো।
সোমবার (১৮) সেপ্টেম্বর উপজেলার রামদিয়া কৃষি ব্যাংক শাখায় এ ঘটনা ঘটে। এসময় ঘটনাস্থলে থাকা ভুক্তভোগীর ছেলে তাকবীর সরদার (২৭) ও জামাতা মোতাকাব্বির মুন্সীকেও (২৫) মারধর করা হয়।
সম্পর্কিত খবর
জানা গেছে, মারধরের পর ভুক্তভোগীদের কাছে জোরপূর্বক সাদা কাগজে সই নিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
মারধরের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ফেসবুক ব্যবহারকারীরা মারধরে যুক্ত ব্যক্তি ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিচারের মুখোমুখি করার দাবি তুলেছেন।
কৃষক দেনায়েত সরদার জানান, এক মাস আগে গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্পের জন্য তিন লাখ টাকা ঋণ নিতে তিনি রামদিয়া কৃষি ব্যাংকে যান। এরপর কাগজপত্র জমা দেন। গত ২০ আগস্ট ব্যাংকের তদন্ত কর্মকর্তা রাফিজুল ইসলাম তার বাড়িতে যান। রাফিজুল মিষ্টি খাওয়ার কথা বলে ঘুষ দাবি করেন। ঘুষ দিতে নারাজ থাকায় ‘‘দায়-দেনার’’ কারণ দেখিয়ে দেনায়েত সরদারের ঋণ বাতিল করা হয়।
এ বিষয়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর দেনায়েত সরদার বাংলাদেশ ব্যাংকের অভিযোগ সেলে ই-মেইলের মাধ্যমে অভিযোগ করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার ব্যাংকটির রামদিয়া শাখায় তদন্তে আসে গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক শাখা ব্যবস্থাপক আব্দুল আজিজের নেতৃত্বে একটি দল। অভিযোগকারীকে ব্যাংকে ডেকে নেওয়া হয়।
দেনায়েত বলেন, ব্যাংকের রামদিয়া শাখার ব্যবস্থাপক ইলিয়াস হোসেন আগেই কিছু মানুষকে প্রস্তুত করে রেখেছিলেন। তদন্ত চলাকালে বহিরাগত ওই লোকগুলো ব্যাংকে প্রবেশ করে তারা আমাদের সঙ্গে (দেনায়েত, তার ছেলে ও জামাতা) বাক-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে তারা ব্যাংকের সব দরজা বন্ধ করেন এবং ব্যাংকের সিসি ক্যামেরা বন্ধ করে তদন্ত কর্মকর্তার সামনেই কিলঘুষি, লাথি ও মেজেতে ফেলে পায়ে পিষতে থাকেন। পরে পুলিশে খবর দেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
কাশিয়ানী থানার রামদিয়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে একজন গ্রাহক বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবর ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ করেন। বিষয়টি তদন্ত করতে গোপালগঞ্জ থেকে কৃষি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আসেন। তারা অভিযোগকারীর বক্তব্য শুনছিলেন। এ সময় অভিযোগকারীর জামাতা উত্তেজিত হলে ব্যাংকের গ্রাহকরা প্রতিবাদ করেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কোনো অভিযোগ না থাকায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক মো. ইলিয়াস হোসেন ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ঋণ চেয়ে না পেয়ে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন ওই কৃষক।
ব্যাংকের দরোজা বন্ধ করে মারধরের বিষয়ে বলেন, তদন্ত দলের সঙ্গে ওই কৃষকের লোকেরা অশোভন আচরণ করলে গ্রাহকরা প্রতিবাদ করেন। পরিস্থিতি খারাপ দেখে ব্যাংকের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হলে তারা এসে আমাদের উদ্ধার করে।
তদন্ত কর্মকর্তা ও কৃষি ব্যাংকের গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক শাখা ব্যবস্থাপক আব্দুল আজিজ মারধরের বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, তদন্তের বিষয়টি ছিলো তুচ্ছ একটি ঘটনা। অভিযোগকারীর বক্তব্য শুনছিলাম। হঠাৎ ব্যাংকের ভেতর এতো লোকজন ঢুকে পড়বে সেটি বুঝতে পারিনি। মারধরের ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত।
পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম