তিন স্থানে ফেলা হয় খণ্ডিত অংশ
পারিবারিক বিরোধে হাসানকে হত্যা, দশ টুকরো করে স্ত্রী-সন্তান
চট্টগ্রাম নগরীর ইপিজেড থানাধীন দক্ষিণ হালিশহর আকমল আলী সড়কের পকেট গেট এলাকার জমির ভিলা নামক ভবনে পারিবারিক বিরোধের জেরে মো. হাসানকে (৬১) হত্যার পর লাশ দশ টুকরো করে দুই ছেলে ও স্ত্রী। পরে খণ্ডিত অংশগুলো তিন ব্যাগে ঢুকিয়ে পৃথক তিন স্থানে ফেলে দেন তারা।
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য দিয়েছেন নিহতের স্ত্রী হোসনে আরা ও বড় ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান।
সম্পর্কিত খবর
জানা গেছে, হাসান দীর্ঘ ২৭ বছর পরিবার থেকে আলাদা ছিলেন। তিনি সম্প্রতি ফিরে এসে গ্রামের (বাঁশখালীর) ভিটেবাড়ি বিক্রির চেষ্টা করেন। এতে স্ত্রী-সন্তানরা বাধা দিলে তিনি তাদেরও অস্বীকার করেন। তার ভাইয়ের কাছে এসব সম্পত্তি বিক্রির জন্য কাগজপত্রও তৈরি করেন। এর জেরেই তাকে খুন করা হয়।
এ হত্যাকাণ্ডে শুধু পরিবারের সদস্যরাই জড়িত নাকি বাইরের কেউ আছে তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পিবিআই কর্মকর্তারা বলছেন, হাসানকে হত্যার পর লাশ দশ টুকরো করা হয়। এর মধ্যে হাত-পাসহ আট টুকরো ফেলা হয় পতেঙ্গা থানাধীন ১২ নম্বর ঘাট এলাকায়। পেটসহ শরীরের মাঝখানের অংশ ফেলা হয় ইপিজেড থানাধীন আকমল আলী রোডের খালপাড় এলাকার বিলে। তবে মাথার অংশটি কোথায় ফেলা হয়েছে তা জানার চেষ্টা করছে তদন্ত সংস্থা।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই পরিদর্শক মো. ইলিয়াস খান গণমাধ্যমকে বলেন, মো. হাসানের পরিচয় শনাক্তের পর শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) নিহতের স্ত্রী এবং বড় ছেলে মোস্তাফিজুর রহমানকে আটক করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া যায়। রোববার তাদের আদালতে সোপর্দ করে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য আদালতে আবেদনের পাশাপাশি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়।
‘আদালত শুনানি শেষে তাদের ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় এবং পাঁচদিনেরই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তাদেরকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে হত্যায় জড়িত থাকার কথা তারা স্বীকার করেছেন। জমি সংক্রান্ত তথা পারিবারিক বিরোধের জেরেই তাকে এমন নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় বলে তারা জানিয়েছেন।’
পিবিআই পরিদর্শক বলেন, লাশের ফিঙ্গার প্রিন্ট, সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ এবং গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ক্লু-বিহীন এবং মাথাবিহীন লাশটির পরিচয় শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। তিনি বাঁশখালী উপজেলার কাতারিয়া ইউনিয়নের বড়ইতলী এলাকার সাহেব মিয়ার ছেলে। নিহতের স্ত্রীসহ দুই ছেলে এবং দুই মেয়ে আছে। তবে তিনি খুন হন নগরীর ইপিজেড থানাধীন দক্ষিণ হালিশহর আকমল আলী সড়কের পকেট গেট এলাকার জমির ভিলা নামক ভবনের ছোট ছেলে শফিকুর রহমান ওরফে জাহাঙ্গীরের বাসায়। ঘটনার পর থেকে শফিকুর রহমান এবং তার স্ত্রী পলাতক রয়েছে।
পিবিআইয়ের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. এ কে এম মহিউদ্দিন বলেন, গত ২১ সেপ্টেম্বর রাতে নগরীর পতেঙ্গা থানাধীন ১২ নম্বর ঘাট এলাকায় লাগেজভর্তি লাশের আটটি খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করে থানা পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্ত শুরু করে পিবিআই। উদ্ধার হওয়া খণ্ডিত অংশগুলো কার তা চেনা কিংবা জানার উপায় ছিলো না। কেননা লাশের মাথার অংশটি ছিলো না।
পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম