• শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব

হৃদয়কে হত্যার পর শরীর থেকে মাংস পৃথক করা হয়

প্রকাশ:  ০১ অক্টোবর ২০২৩, ১৬:১৯
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

শিক্ষা দেওয়ার জন্য পোল্ট্রি খামারের ম্যানেজার শিবলী সাদিক হৃদয় (১৯)কে খামার থেকে অপহরণ করে চট্টগ্রামের রাউজান-রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কদলপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী রঙিন পাহাড়ে নিয়ে যায় খামারে কর্মরত নৃ-গোষ্ঠীর শ্রমিকরা। সেখানে গলাকেটে হত্যা করা হয়। লাশ যাতে শনাক্ত না হয় এ জন্য ছুরি দিয়ে শরীর থেকে মাংস পৃথক করে ফেলে দেয় তারা।

রোববার (১ অক্টোবর) সকালে চান্দগাঁও ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাব-৭ অধিনায়ক লেফটেনেন্ট কর্নেল মো. মাহবুব আলম।

নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া যুবক উচিংথোয়াই মারমা ও তার অন্যতম সহযোগী ক্যাসাই অং চৌধুরীকে শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) গ্রেপ্তারের পর তারা র‌্যাবকে পুরো ঘটনার বর্ণনা দেয়।

র‌্যাব-৭ অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহবুব আলম বলেন, হৃদয়কে হত্যায় সরাসরি অংশ নেওয়া দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে উচিংথোয়াই মারমাকে শনিবার পতেঙ্গা থানা এলাকা থেকে ও তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ক্যাসাই অং চৌধুরীকে নতুন ব্রিজ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

‘হৃদয় তার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করার জন্য লেখাপড়ার পাশাপাশি রাউজান উপজেলার কদলপুর ইউনিয়নে একটি পোল্ট্রি খামারে ম্যানেজারের কাজ করতো। একই খামারের ৫-৭ জন সহযোগী কর্মচারীর সঙ্গে তার বিভিন্ন সময় বাগবিতণ্ডা হয়। পরে এ বিষয়ে খামার মালিকরা মীমাংসা করে দিলেও তার সহযোগীদের মধ্যে এক ধরনের অনাস্থা থেকে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য ২৮ আগস্ট রাতে উমংচিং মারমার নেতৃত্বে হৃদয়কে অপহরণ করা হয়। ওই রাতেই ভুক্তভোগীকে দিয়ে তার বাবার কাছে কল করে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। একপর্যায়ে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হৃদয়ের অভিভাবকরা রাজি হন। পরে ১ সেপ্টেম্বর তার বাবা ও নানা মুক্তিপণের টাকা নিয়ে বান্দরবানে যান।’

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, সেখানে মুক্তিপণের দুই লাখ টাকা দেওয়ার পর অপহরণকারীরা জানায়, ‘হৃদয় নিজে নিজে বাসায় চলে যাবে’। মুক্তিপণ দেওয়ার পরও ৫-৬ দিনেও হৃদয় আর ফেরত না আসায় তার মা গত ৭ সেপ্টেম্বর রাউজান থানায় ছয়জনকে আসামি করে অপহরণ মামলা করেন। এরপর রাউজান থানা পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দুই জনকে গ্রেপ্তার করে। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। তারা আদালতে উমংচিং মারমার নেতৃত্বে হৃদয়কে অপহরণের পর হত্যা করা হয় বলে জানায়।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃত উচিংথোয়াই মারমা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, হৃদয়কে অপহরণের একদিন পর ২৯ আগস্ট বিকালে রঙিন পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে হত্যা করা হয়। উচিংথোয়াই মারমা নিজেই ছুরি দিয়ে হৃদয়ের গলা কাটে। তার সহযোগী ক্যাসাই অং চৌধুরীসহ আরো চারজন হৃদয়ের হাত-পা এবং মুখ চেপে ধরেন। হত্যায় তিনটি পার্ট ছিলো। এরমধ্যে অপহরণ গ্রুপ, কিলিং গ্রুপ ও লাশ গুম গ্রুপ। অপহরণের সঙ্গে জড়িত ছিলো শুধু যারা খামারে কাজ করতো। এরমধ্যে উমংচিং মারমা এবং অং থুই মারমা হৃদয়কে অপহরণের পরিকল্পনা করে। উচিংথোয়াই মারমা এবং তার অন্যতম সহযোগী ক্যাসাই অং চৌধুরীকে বান্দরবান থেকে চট্টগ্রামে কাজ আছে বলে ডেকে আনে। তাদের দিয়ে হৃদয়কে হত্যা করা হয়। এরপর মাথাসহ শরীর বিচ্ছিন্ন করা হয়।

র‌্যাব-৭ অধিনায়ক বলেন, হৃদয়কে হত্যার পর উচিংথোয়াই মারমার মোবাইল থেকে হৃদয়ের বাবা-মাকে ২৯ আগস্ট কল করে মুক্তিপণের টাকা বান্দরবানে নিয়ে আসতে বলে। ১ সেপ্টেম্বর বান্দরবানে গিয়ে হৃদয়ের পরিবার মুক্তিপণের টাকা দিয়ে আসে। এরমধ্যে উচিংথোয়াই মারমা নিজেই দেড় লাখ টাকা রেখে দেয়। বাকিদের ৫০ হাজার টাকা দেন।

র‌্যাবকে লাশ গুমের বিষয়ে গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়, পাহাড়ে হৃদয়কে হত্যার পর লাশ প্রথমে কলাপাতা দিয়ে ডেকে দেওয়া হয়। পরে লাশটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন শনাক্ত করতে না পারে এ জন্য টুকরো করা হয় এবং শরীরের মাংস আলাদা করা হয়। এ ঘটনার সঙ্গে সব মিলিয়ে ৯-১০ জন অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে র‌্যাব দুই জন এবং রাউজান থানা পুলিশ আরো ছয়জনসহ মোট আট জনকে গ্রেপ্তার করে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান আছে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নে র‌্যাব-৭ অধিনায়ক বলেন, হৃদয়কে হত্যার পর মাংস খেয়ে ফেলেছে এমন একটি খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হয়। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তারা বলেছে, এ ব্যাপারে তারা জানে না। তবে শরীরের মাংস আলাদা করে ফেলে দেওয়া হয়েছিলো এটি সত্য। তবে মাংস খাওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, গত ১১ সেপ্টেম্বর সকালে রাউজান-রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কদলপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী রঙিন পাহাড় থেকে হৃদয়ের খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এদিকে লাশ নিয়ে ফেরার পথে পুলিশের কাছ থেকে ঘটনায় জড়িত আসামি উমংচিং মারমাকে ছিনিয়ে নেয় গ্রামবাসী। পরে উত্তেজিত গ্রামবাসীর পিটুনিতে তার মৃত্যু হয়।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম

সংবাদ সম্মেলন,র‌্যাব,চট্টগ্রাম,মাংস,শরীর,হত্যা,শিবলী সাদিক হৃদয়

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close