• শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

রাউজানে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামী আটক

প্রকাশ:  ১০ অক্টোবর ২০২৩, ২০:১৫
নেজাম উদ্দিন রানা, রাউজান প্রতিনিধি

চট্টগ্রামের রাউজানে নিজ শয়নকক্ষ থেকে নুর জাহান আকতার মনির (২৫) লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তার স্বামী এনামকে (৩০) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৭।

এনামের পরকীয়ায় আপত্তি জানানোয় মনিকে প্রাণ হারাতে হয়েছে বলে তার বরাতে জানায় র‌্যাব। আসামি মো. এনাম রাউজান উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের জানিপাথর এলাকার জাবেদ আলীর পুত্র।

মঙ্গলবার (১০) অক্টোবর দুপুরে র‌্যাব-৭ এর উপ-অধিনায়ক মেজর মো. রেজওয়ানুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরে বলেন, এনামের সঙ্গে গত ৪ বছর আগে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার লেলাং ইউনিয়নের হাসান আলীর মেয়ে নুর জাহান আকতার মনির সঙ্গে প্রেমঘটিত সম্পর্কের সূত্র ধরে রাউজান উপজেলার হলদিয়ার জানিপাথর এলাকার এনামের বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্বামী এনামের সাথে একটি মেয়ের পরকিয়ার বিষয়টি জানতে পারে তার স্ত্রী মনি। স্ত্রীর কাছে দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি চাওয়ার পর স্বামীকে দ্বিতীয় বিয়েতে অনুমতি না দেওয়ায় তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ শুরু হয়।

তারই সুত্র ধরে গত ১ অক্টোবর নির্যাতন করে বালিশ চাপা দিয়ে স্ত্রী মনিকে হত্যা করে স্বামী এনাম। তাদের ৩ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।

র‌্যাব-৭ এর উপ-অধিনায়ক মেজর মো. রেজওয়ানুর রহমান বলেন, দুই বছর আগে এনাম ওমান চলে যায়। বিদেশ থাকতেই তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে জানায় দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতির বিষয়টি। কিন্তু কেউ তাতে সারা দেয়নি। এনাম ওমানে চলে যাওয়ার পর স্ত্রীকে কোন রকম ভরণ পোষণ না দেয়ায় এবং পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যার কারণে ভিকটিম তার বাবার বাড়িতে চলে যায়। সেই গত ২ বছর বাবার বাড়িতে ছিলেন । গত ১৭ সেপ্টেম্বর এনাম ওমান থেকে তার বাড়ীতে চলে আসলে পরদিন তার মেয়েকে নিয়ে স্বামীর বাড়ীতে আসে। গৃহবধূ মনি তার স্বামীর বাড়ীতে আসলে তার স্বামী তাকে পুনরায় নির্যাতন করে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর এনাম স্ত্রীকে শারীরিক নির্যাতন করলে সে জখমপ্রাপ্ত হয়ে অসুস্থ অবস্থায় তার বাবার বাড়ীতে চলে যায়। সেখান থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে স্বামীর বাড়ীতে ফিরে আসে।

১ অক্টোবর দুপুর আনুমানিক ২টায় এনামের ছোটভাই মোঃ ইকরাম তার ভাইয়ের ম্বশুরকে ফোন করে জানায় যে, তার মেয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। সে যেন তাড়াতাড়ি তাদের বাড়ীতে আসে। সংবাদ পাওয়ার পর গৃহবধূ মনির পিতা-মাতা কয়েকজন আত্মীয়-স্বজনসহ দ্রুত মেয়ের শ্বশুর বাড়ীতে এসে তার মৃতদেহ বসতঘরের ভিতরের ফ্লোরে শাড়ি দিয়ে ঢেকে রাখা অবস্থায় দেখতে পায়। পরবর্তীতে গৃহবধূ মনির পিতা স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে জানতে পারে, সকাল আনুমানিক সাড়ে ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত তাদের গুদাম ঘরের ভিতরে স্বামী মোঃ এনাম ও তার স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। এ সময় মনির আত্মচিৎকার শুনতে পায়। কিছুক্ষণ পর এনামকে একটি বস্তা কাঁধে নিয়ে উক্ত গুদাম ঘর হতে বের হয়ে যেতে দেখতে পায়। এর কিছুক্ষণ পর শ্বাশুড়ী পুত্রবধু মনির ঘরে গিয়ে তাকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে তিনি আশেপাশের লোকজনকে ডাকাডাকি করলে প্রতিবেশিরা এগিয়ে এসে তার মাথায় পানি ঢালে। পানি ঢাললেও কোন অবস্থাতেই গৃহবধূ মনির জ্ঞান না ফেরায় প্রতিবেশীরা বুঝতে পারে যে, সে মৃত্যুবরণ করেছে।

বিষয়টি থানা পুলিশকে অবহিত করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে নিহত তার লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। মনির লাশের ময়না তদন্তে ও পুলিশ প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে প্রমানিত হয় যে, ভিকটিমকে তার স্বামী এনাম পাশবিক নির্যাতন করে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। তথ্যের ভিত্তিতে ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে চট্টগ্রামের রাউজান থানায় ঘাতক স্বামী এনাম’কে একমাত্র আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

ঘটনার পর এনাম পলাতক ছিল।

রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, আসামি এনামকে র‌্যাব রাউজান থানায় হস্তান্তর করেছে। নিহত গৃহবধুর ওপর নির্যাতন করে শ্বাসরোধ করে হত্যার ঘটনায় আর কেউ জড়িত থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্ত্রী হত্যা

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close