• শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

ঠাকুরগাঁওয়ে শীতকষ্টে কাঁদছে মানুষ, ফসল বাঁচানোর উপায় জানালো কৃষি অফিস

প্রকাশ:  ১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১৭:১৪
রেদওয়ানুল হক, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

‘বাঘ কাঁপানো মাঘ’ মাসের তৃতীয় দিনে রাতের সার্বিক তাপমাত্রা আরও কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। কেউ বলে, সেইরকম শীত! কেউ বলছে অন্যরকম শীত। আসলেই এবার শীতের মতিগতি ব্যতিক্রম। বিদায়ী ২০২৩ সালে টানা খরা-অনাবৃষ্টি ও উচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙেছে। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই গেল ডিসেম্বরের শেষ দিকে ও চলতি জানুয়ারি মাসের গোড়া থেকেই তাপমাত্রার পারদ মাইনাসের দিকে সর্ব-নিম্নগামী, কোথাও অস্বাভাবিক ঠাণ্ডায় থর থর করে কাঁপছে এবং শীতকষ্টে কাঁদছে মানুষ। থমকে গেছে পশুপাখি, প্রাণ-প্রকৃতি।

চিরচেনা ছয়টি ঋতুর দেশ বাংলাদেশে পৌষ-মাঘ ভর শীতকালে শীত পড়বে, ঝরবে কুয়াশা এটাই স্বাভাবিক। ঘন কুয়াশার কারণে সূর্যের আলো ও তেজ মাটিতে আসা অবধি নিস্তেজ দুর্বল হয়ে পড়ছে। কিন্তু আবহাওয়া অফিস বলছেন, এবারের শীত ব্যতিক্রমধর্মী। শৈত্যপ্রবাহের রাতের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ‘অস্বাভাবিক নীচে’ না নামলেও ঠাণ্ডার তীব্রতা ও অনুভূতি অস্বাভাবিক। এর ফলে শীতকষ্ট অসহনীয় হয়ে উঠেছে। টানা ঠাণ্ডায় ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়া ও বৈরী আবহাওয়ায় বিশেষ করে গরিব, দিনমজুর, অসহায়, গৃহহীন ভাসমান মানুষেরা খড়কুটো জ্বালিয়ে কোনমতে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। তাদের রোজগার কমে গেছে। শীতবস্ত্র বিতরণ কিংবা দরিদ্র জনগোষ্ঠিার প্রতি সাহায্যের হাত বাড়ানোর উদ্যোগ তেমন চোখে পড়ে না। তাছাড়া সর্বত্র ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধির প্রকোপ বেড়েই চলেছে। হাসপাতাল-ক্লিনিকে নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে।

অন্যদিকে, ঠাকুরগাঁওয়ে নয় দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস।দেশের উত্তরাঞ্চলে মৌসুমের চতুর্থ দফার শৈত্যপ্রবাহ বইতে শুরু করেছে। তাপমাত্রা দশ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকলে আলু চাষের জন্য শঙ্কার। এ জেলায় সূর্য দেখা গেলেও ততটা উষ্ণতা ছড়াতে দেখা যায়নি।

তবে গতকাল ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, টানা শীতের কারণে কিছু কিছু এলাকায় বোরো ও আলু ক্ষেতের কিছুটা ক্ষতি হলেও দিনে রোদের কারণে ক্ষতিটা পুষিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে। অপরদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘শৈত প্রবাহের জন্য বিশেষ কৃষি আবহাওয়া পরামর্শে’ বলা হয়েছে, শেষ রাত থেকে সকাল পর্যন্ত হাল্কা কুয়াশা থাকলে আলুর ‘নাবী ধ্বসা’ রোগ হতে পারে। গত সোমবার প্রকাশিত এ পরামর্শে বলা হয়েছে-এজন্য নিয়মিত আলুর ক্ষেতের দেখাশোনা করার পাশাপাশি রোগ দেখা দিলে অনুমোদিত বালাই নাশক দিতে হবে। এছাড়া কচুরিপানা ও খড়ের মত জিনিস দিয়ে আলুর জমিতে ‘মালচিং’ এর ব্যবস্থা করতেও পরামর্শ দিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

মাঠপর্যায়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, তীব্র শীত ও কুয়াশায় বোরের বীজতলা কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হচ্ছে। এতে বীজতলার চারা হলুদ ও কিছুটা কালচে হওয়া শুরু করছে। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার খাদেমুল ইসলাম জানান, ৫ একর আলু কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়েছে আমার। তিনি আরো বলেরদন ১৫ শতক জমিতে বীজতলা তৈরি করছেন। এর মধ্যে ৩ শতক জমির বীজতলা শীতের কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছে। তার আশা রোদ ও আবহাওয়া ভালো হলেই খারাপের দিকে যাওয়া বীজতলা সতেজ হয়ে উঠবে। একই এলাকার কুদ্দুস আলী জানান, ৫ বিঘা জমির জন্য বোরের বীজতলা ফেলেছেন। তবে এখন যে আবহাওয়া তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন। আশপাশের বীজতলা হলদে ও কালো হয়ে যাচ্ছে। অপর দিকে আলুর পাতা ক্ষতির হচ্ছে। ফলে ফন কম হওয়ার সম্ভাবনা দেখছি।

কৃষিবিদ ড.সিরাজুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে ঠাকুরগাঁও জেলায় ২৬হাজার ১৬৮ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এখন পর্যন্ত চাষ হয়েছে ২৭ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে।

ঠাকুরগাঁও,শীতকাল,কৃষি

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close