• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

৫ বছরের আইনী লড়াইয়ে সন্তুষ্ট বাদী

বঙ্গবন্ধুকে 'অবমাননা', কাজী এরতেজার রিটের পূর্ণাঙ্গ রায়ে সত্য প্রতিষ্ঠিত

প্রকাশ:  ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২১:৪৮
নিজস্ব প্রতিবেদক

তথ্য গোপন করে 'বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস' গ্রন্থে ইতিহাস বিকৃতি বিশেষ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমনানা করার অভিযোগ এনে ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর মহামান্য হাইকোর্টে রিট করেন ভোরের পাতা ও দ্য পিপলস টাইমসের সম্পাদক ও প্রশাসক এবং সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ড. কাজী এরতেজা হাসান। দীর্ঘ ৫ বছরেরও অধিক সময় পর এ বিষয়ে মহমান্য হাইকোর্ট ডিভিশনের বিচারপতি আসফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর বেঞ্চ পূর্ণাঙ্গ রায় ঘোষণা করেছেন।

১৬ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রিট আবেদনের পর থেকে আইনী কার্যক্রম ও সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে এবং বঙ্গবন্ধুকে অবমাননাকারীদের চূড়ান্তভাবে সতর্ক করা হয়েছে। রায়ে বলা হয়েছে, 'বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস' বইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি না ছাপিয়ে ইতিহাস বিকৃতির ঘটনায় জড়িতদের 'সতর্ক' করে বিষয়টি নিষ্পত্তি করে রায় ঘোষণা করেন ২০২১ সালের ১৮ মার্চ। এর আগেও বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস বইটিকে যেভাবে বাজারজাত করা হয়েছিল, সেগুলো সংগ্রহ করে এই মামলার রিটকারী ভোরের পাতা ও দ্য পিপলস টাইমস সম্পাদক, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ড. কাজী এরতেজা হাসানকে সঙ্গে নিয়ে বইগুলো নষ্ট করে আদালতে জানানোর নির্দেশনা দেয়া হয়।

যেসব বইয়ে বঙ্গবন্ধুর ছবি নেই, সেগুলো নষ্ট করে আদালতকে লিখিত আকারে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। পুরো সময়টাতেই রিটের পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, অ্যাডভোকেট সাইফুদ্দিন খোকন, মো. মতিয়ার রহমান এবং শাহাজাহান লিংকন। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল প্রয়াত মাহবুবে আলম এবং আজমালুল হোসেন কিউসি।

এ রায়কে ঐতিহাসিক বিজয় বলে দাবি করেছেন রিট আবেদনকারী ভোরের পাতা ও দ্যা পিপলস টাইমস সম্পাদক ও প্রকাশক, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সদস্য, এফবিসিসিআই পরিচালক ড. কাজী এরতেজা হাসান, সিআইপি।

এর আগে ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ইতিহাস বিকৃতির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস গ্রন্থের পুরাতন সব সংখ্যা বাজার থেকে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ওই গ্রন্থের সম্পাদক শুভঙ্কর সাহাকে আদালতে হাজির হয়ে ইতিহাস গ্রন্থের পুরাতন সংখ্যায় বঙ্গবন্ধুর ছবি না ছাপানোর ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।

এর ধারাবাহিকতায় তিনি হাইকোর্টে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দেন। এরপর রুল শুনানি শেষে মামলাটির রায়ের জন্য দিন নির্ধারণ করেন আদালত। প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি অন্তভুক্ত না করায় ইতিহাস বিকৃত হয়েছে বলে প্রতিবেদন দাখিল করে হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটি।

বইটি নিয়ে সমালোচনার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এক ব্যাখ্যায় বলা হয়, 'বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস' গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি তৈরি ও প্রকাশনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় ২০১৩ সালের জুনে। এ বিষয়ে তখন উপদেষ্টা কমিটি ও সম্পাদনা নামে দুটি কমিটি গঠিত হয়। কমিটি দুটি পাণ্ডুলিপি চূড়ান্তের পর গ্রন্থটি ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত হয়।

গ্রন্থটি প্রকাশের পর এতে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যত্যয় দেখা গেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর গ্রন্থটির বিতরণ বন্ধের নির্দেশ দেন এবং গ্রন্থটি রিভিউয়ের জন্য একজন ডেপুটি গভর্নরের নেতৃত্বে একটি রিভিউ কমিটি গঠন করেন।

এর মধ্যে ড. কাজী এরতেজা হাসানের রিটের পর গত বছরের ২ অক্টোবর রুল জারি করে এ ঘটনা তদন্তে অর্থ সচিবকে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

এ আদেশ অনুসারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব (অর্থ বিভাগ) ড. মো. জাফর উদ্দীনকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।

তদন্ত প্রতিবেদনের মতামত অংশে বলা হয়, 'জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ ব্যাংকের নামকরণ করেন।... গ্রন্থটির দ্বিতীয় অধ্যায়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিবৃত রয়েছে। এ কারণে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা অত্যাবশ্যক ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট বঙ্গবন্ধুর ছবি খুঁজে পাওয়া যায়নি- এ যুক্তিতে বঙ্গবন্ধুর ছবি বইয়ে অন্তর্ভুক্ত না করার বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত। গ্রন্থটিতে বঙ্গবন্ধুর ছবি অন্তর্ভুক্ত না করায় ইতিহাস বিকৃত হয়েছে মর্মে কমিটি মনে করে।'

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, 'গ্রন্থটিতে তদানীন্তন পকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান এবং পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খানের ছবি সংযোজন না করা শ্রেয় ছিল এবং সেটি সবার ভুল মর্মে বইটির সম্পাদক স্বীকার করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস' গ্রন্থে ইতিহাস বিকৃতি বিশেষ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমনানা করার অভিযোগ এনে ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছিলেন ড. কাজী এরতেজা হাসান।

ঐতিহাসিক রায় প্রাপ্তির পর তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে মহামান্য হাইকোর্টের ঐতিহাসিক রায় আমাদের জীবনের জন্য শিক্ষনীয় হয়ে থাকবে ইনশাআল্লাহ। পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর বঙ্গবন্ধুকে অবমূল্যায়ন করার দুঃসাহস কেউ দেখাতে পারবে না বলেই বিশ্বাস করি। বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস বইয়ে বঙ্গবন্ধুকে অবমাননার দায়ে আমার করা রিট আবেদনের চূড়ান্ত রায় দিয়েছেন মহামান্য হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলী। চূড়ান্ত রায়ে এমন হীন কাজের জন্য দায়ীদের সতর্ক করার পাশাপাশি অমার্জনীয় বলেও ঘোষণা দিয়েছেন। আদর্শিক এই লড়াইয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শিক সন্তান হিসাবে আজ গর্ব অনুভব করছি।

এরেতজা হাসান আরো বলেন, আমাদের বিশ্ব মানবতার জননী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর আমাদের আস্থা আছে। যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এদেশকে পাকিস্তানের আদর্শে পরিচালিত করতে চেয়েছিল তাদের বংশধর বা দোসরদেরও বিচারের সম্মুখীন

করতে হবে। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর আত্মা শান্তি পাবে। কেননা এখনো ষড়যন্ত্রকারীরা যখনই সুযোগ পায়, তখনই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছে। বঙ্গবন্ধুর স্বঘোষিত হত্যাকারীদের পাশাপাশি যারা তার আদর্শকে নষ্ট করতে চায়, তাদেরও

বিচার করা এখন সময়ের দাবি।

ড. কাজী এরতেজা হাসান আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের যেমন বিচার এদেশেই হয়েছে, তেমনি তার আদর্শকে যারা হত্যা করতে চায় তাদেরও বিচার এই বাংলার মাটিতেই হয়েছে। কেননা পাকিস্তানপ্রেমীরা হয়তো জীবিত বঙ্গবন্ধুর চেয়ে শহীদ বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বেশি ভয় পায়। তাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে যারা হত্যা করতে চায়, তাদের দৃষ্টান্তমূলক ঐতিহাসিক রায়ের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

আদালত,রিট,কাজী এরতেজার

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close