সাভারে উৎসবের আনন্দ এনে দিয়েছে বইমেলা
“অনেক দিন ধরে অপেক্ষায় ছিলাম। অবশেষে বইমেলা শুরু হয়েছে। ২০টা বই কিনেছি। আরও কিনব”, ওয়াসিল উদ্দিন গণ পাঠাগার আয়োজিত বইমেলায় একটি স্টলে বই নাড়াচাড়া করতে করতে এভাবেই অনুভূতি জানাচ্ছিলেন পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া সুমাইয়া।
সাভারের হেমায়েতপুরের ঈদগাঁ মাঠে গত ২০ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় এ মেলা। পর্দা নামবে আগামী ১ মার্চ। শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকাটিতে গত তিন বছর ধরে এ মেলা আয়োজন করা হচ্ছে। এরই মধ্যে স্থানীয়দের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে এই মেলা।
সম্পর্কিত খবর
আয়োজকরা জানান, এ বছর স্থানীয় ১৫টিসহ স্বনামধন্য ৩০টি প্রকাশনী মেলায় অংশ নিয়েছে। স্টলগুলোতে রয়েছে কাব্যগ্রন্থ, উপন্যাস, গল্পগ্রন্থ, জীবনী, শিশু সাহিত্য, মুক্তিযুদ্ধ, ভ্রমণ, ইতিহাস, প্রবন্ধ, বিজ্ঞান, রাজনীতি, বঙ্গবন্ধু, অনুবাদ, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন বইয়ের সমাহার। এসব বই কিনতে মেলায় প্রতিদিনই তৈরি হচ্ছে উপচে পড়া ভিড়।
কিডস কারাভান নামে সেঞ্চুরি প্রকাশনীর একটি স্টলে এসেছিলেন স্কুলছাত্র সাদ্দাম, সোহেল, আকাশসহ ৭-৮ জনের একটি দল। তারা দোকানির কাছে জানতে চায়, “সাদাত হোসাইনের বই আছে?” ক্রেতার “না ” উত্তরে কিছুটা মন খারাপ হতে দেখা যায় তাদের। অবশ্য “অন্য ধারা” প্রকাশনীর স্টল থেকে নিজের পছন্দের লেখক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি বই কিনে ভীষণ খুশি অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া মায়মুনা আক্তার।
কয়েকটি স্টল ঘুরে শরৎচন্দ্র সমগ্র বইটি কিনলেন স্থানীয় শিক্ষক আমিনুর রহমান। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, “শরৎচন্দ্র আমার প্রিয় লেখক। আগে বই পড়া ছিল নেশার মতো। এখন তেমন সময় পাই না। তবুও একান্ত সময় কাটানোয় বই আমার বড় সঙ্গী। তার মতে, স্থানীয় পর্যায়ে এমন মেলা সবাইকে বই পড়ায় আরও আগ্রহী করে তুলবে।” মেলায় রয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতাকে নিয়ে বিশেষ কর্ণার। যেখানে শোভা পাচ্ছে তাদের নিয়ে নানা বই। এছাড়া প্রতি বছরের মতো এবারও মুক্তিযোদ্ধা ও গুণী সম্মাননা দিয়েছে মেলার আয়োজক কমিটি।
মেলার পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সাইদুল ইসলাম বলেন, “বইমেলার জন্য ভাষার মাসটি সঠিক সময়। একুশের বইমেলা যেহেতু ভাষার মাসে হয়, এই বইমেলাও সেভাবে আয়োজন করা হয়েছে। প্রযুক্তি ও মাদকের কারণে যুব সমাজ খারাপের দিকে চলে যাচ্ছে। তাদের ফিরিয়ে বইয়ের দিকে আনার জন্যই এই মেলা প্রতিবছর আয়োজন করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে আশপাশের এলাকার যুব সমাজ, শিশুসহ সব বয়সীদের বইয়ের সঙ্গে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছি। এছাড়া লোক ঐতিহ্য তুলে ধরতে সাপ খেলা, লাঠি খেলাসহ নানা আয়োজন করা হচ্ছে। আগামীতেও এ মেলা অব্যাহত রাখা হবে।”
সাভারের তেঁতুলঝোরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেলার ব্যবস্থাপক ফখরুল আলম সমর বলেন, “ভাষার মাস এই এক মাস নয়। প্রত্যেক মাসই ভাষার মাস। আমরা কখনও কখনও মর্যাদা রক্ষা করতে ব্যর্থ হই। আমরা এই আয়োজন করি, হারানো অতীত ও ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরার জন্য, রক্ষা করার জন্য।”