• শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

কমলনগরে কৃষককে পেটানোর মামলায় ১ মাসেও অভিযুক্তরা অধরা

প্রকাশ:  ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ০০:৫৭
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

লক্ষ্মীপুরে কমলনগের জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে মো. হাসান প্রকাশ রিপন নামে এক সেনাসদস্যসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে কৃষক দেলোয়ার হোসেনকে পেটানোর অভিযোগে মামলা হয়েছে। তবে মামলার ২৬ দিন পার হলেও বুধবার (৩ মার্চ) দুপুর পর্যন্ত প্রধান অভিযুক্ত হাসান ও দ্বিতীয় অভিযুক্ত জীবন গাজীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

এদিকে মামলার পর থেকেই সেনাসদস্য বিভিন্নভাবে হুমকি ধমকি দিয়ে আসছে বলে অভিযোগ ভূক্তভোগীদের।

অভিযুক্ত সেনা সদস্য হাসান কমলনগরের সাহেবেরহাট ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে চরজগবন্ধু গ্রামের মৃত শাহ আলম মুহুরির ছেলে ও রংপুর ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত রয়েছে। ভূক্তভোগী দেলোয়ার একই এলাকার শামছুল হকের ছেলে। হাসান ও দেলোয়ার আপন চাচা-ভাতিজা। দেলোয়ারকে মারধরের ঘটনায় তার ছেলে আরমান ৪ মার্চ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট কমলনগর আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন। পরে আদালত কমলনগর থানাকে মামলা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়। ৭ মার্চ কমলনগর থানায় মামলা রুজু হয়। এরআগে ২ মার্চ বিকেলে চরলরেঞ্চ বাজারে দেলোয়ার ও তার ভাতিজা হিমেলের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এর কয়েকদিন আগেই মুঠোফোনে হিমেলকে হুমকি দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযাগ রয়েছে।

কমলনগর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাফেজ আহমেদ খান বলেন, সেতারা ও পারুলদের মধ্যে জমি বিরোধ নিয়ে অভিযোগ আসে। এনিয়ে বৈঠক বসার তারিখ দিলেও বিবাদী পক্ষ আসেনি। পরে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সফিকুল ইসলামকে সালিসি বৈঠক করে বিষয়টি সমাধান করার জন্য বলা হয়েছে। এরপর বাদী পক্ষ থেকে আর কিছু জানানো হয়নি।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সফিকুল ইসলাম বলেন, সেতারার স্বামী তাহেরের টাকা কেনা জমিতে পারুলের স্বামী শাহ আলম চাষাবাদ করতো। কিন্তু এখন পারুল প্রকৃত মালিক সেতারা ও তার সন্তানদের জমি দিচ্ছে না। পারুল ও তার লোকজনের মারমুখী আচরণে সালিসি বৈঠক করে বিষয়টি সমাধান করা সম্ভব হয়নি। এরমধ্যে পারুলের ছেলে হাসানসহ কয়েকজন চরলরেন্স বাজারে সেতারার দেবর দেলোয়ার ও ছেলে হিমেলের ওপর হামলা করেছে বলে শুনেছি।

ভূক্তভোগী সেতারার ছেলে হিমেল উদ্দিন বলেন, আমদের ৩ ভাইবোনকে রেখে ২০১২ সালে আমার বাবা মারা যায়। আমরা তখন অনেক ছোট। আমাদের ওয়ারিশি ১৭৫ শতাংশ জমি আমার চাচা শাহ আলমের দখলে ছিল। তিনি চাষাবাদ করতো। ২০১৬ সালে আমার চাচাও মারা যায়। আমি এখন কলেজে পড়ি। খুব কষ্টে আমাদের দিনাতিপাত করতে হয়। এরমধ্যে আমাদের জমিগুলো বুঝিয়ে দিতে বললে শাহ আলমের স্ত্রী পারুল ও ছেলেরা দিচ্ছে না। তারা আমাদের ওপর হামলা করেছে। আমাদের বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যে অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করছে। আমার ওয়ারিশি সাড়ে ৯৮ শতাংশ জমি ফিরে পেতে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ চাচ্ছি।

ভূক্তভোগী দেলোয়ার হোসেন বলেন, সেনাবাহিনীর সদস্য হাসান পোলাপাইন নিয়ে হামলা চালিয়ে আমাকে রক্তাক্ত করেছে। মামলা করলেও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করছে না। উল্টো তারা আমাদেরকে বিভিন্নভাবে মারধরের হুমকি দিচ্ছে।

বক্তব্য জানতে বাড়িতে গিয়ে পারুল বেগমকে পাওয়া যাইনি। তার ব্যবহৃত মোবাইলফোনে একাধিকবার কল করেও বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তার ছেলে সেনাবাহিনীর সদস্য মো. হাসান প্রকাশ রিপন বলেন, সেতারার কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকায় আমরা সাড়ে ৬০ শতাংশ জমি ক্রয় করি। তবে চাচাতো ভাই-বোন নাবালক হওয়ার ওই জমি আমাদের রেজিষ্ট্রি দিতে পারেনি। এরমধ্যে তারা জমি অন্য কারো কাছে বিক্রি করে দেয়। এখন তারা আমাদের কাছে অন্যায়ভাবে জমি দাবি করছে। দেলোয়ার ও হিমেল বাড়িতে এসে অশালিন আচরণ করে। এতে মোবাইলফোনে আমি তাকে ধমক দিয়েছিলাম। এরপর আমি বাড়িতে গেলে তারা আমাকে মারতে আসে। ভয়ে আমি বাড়ি থেকে বের পারছিলাম না। পরে ২ মার্চ বিকেলে বাড়ি থেকে বের হয়ে চরলরেন্স বাজারে গেলে দেলোয়ার ও হিমেলরা আমার ওপর হামলা করে। আমার গলায় আঘাত লেগেছে। আমরা কাউকে মারিনি।

সাহেবের হাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের বলেন, ঘটনাটি আগে আমার জানা ছিল না। স্থানীয়ভাবে খোঁজ খবর নেওয়া হবে। সেনাবাহিনীর সদস্য হাসান কাউকে হুমকি-ধমকি দিয়েছে বলেও এরআগে কখনো অভিযোগ পাইনি।

কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তহিদুল ইসলাম বলেন, মারধরের ঘটনার আদালতের নির্দেশনা মামলা নেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করার জন্য উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর হোসেনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তার সঙ্গে কথা বললেই বিষয়টি জানা যাবে। তবে এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে এসআই জাহাঙ্গীরকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

কমলনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুচিত্র রঞ্জন দাস বলেন, অভিযোগটি পেয়েছি। তবে ঘটনাটি আমার এখতিয়ারভুক্ত না। এরপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

অপরাধ,লক্ষীপুর,কৃষক

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close