• শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

তীব্র তাপদাহেও কক্সবাজারে পর্যটকের উপচেপড়া ভিড়

প্রকাশ:  ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৯:১৩
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

বৈশাখের খরতাপেও পর্যটক উপস্থিতি বেড়েছে কক্সবাজারে। ঈদের পর গরমে পর্যটক আসায় ভাটা পড়বে, এমন ধারণাকে মিথ্যে প্রমাণ করে প্রায় প্রতিদিনই উল্লেখ করার মতো ভ্রমণপিপাসুরা অবস্থান করছেন পর্যটন নগরীতে। কলাতলীর পাঁচ তারকা হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউসগুলোতে কমবেশি বুকিং হচ্ছে। ভরদুপুরেও লোকারণ্য থাকছে বেলাভূমি ও সাগর তীর। গোসল ও নানাভাবে সৈকতে উপভোগ করছেন ভ্রমণপিপাসুরা।

আবাসনসহ পর্যটন সেবার সকল খাত মিলিয়ে দৈনিক কোটি টাকার বাণিজ্য হচ্ছে। এর আগেও ঈদ পরবর্তী তিন দিনে শতকোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের। আর পর্যটক উপস্থিতি মাথায় রেখে নিরাপত্তায় সচেষ্ট রয়েছে ট্যুরিস্ট ও জেলা পুলিশ।

এদিকে, গরমে তারকা হোটেলগুলো তাদের নির্দিষ্ট ভাড়ায় ছাড় দিচ্ছে। গেস্ট হাউস, কটেজ বা নরমাল হোটেলগুলোর অধিকাংশ সহনীয় পর্যায়ে ভাড়া রাখায় গরমেও পর্যটক উপস্থিতি বাড়ছে বলে মনে করছেন আবাসন সেবা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, নিয়মিত রেলের পাশাপাশি দুটি স্পেশাল রেলও ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথে চলাচল থাকায় কক্সবাজারে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটকের উপস্থিতি রয়েছে।

ঢাকার মালিবাগ থেকে আসা পর্যটক দম্পতি আবরার নাঈম বলেন, এর আগে শীত মৌসুমে কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছিলাম। এখন রেলে যাতায়াত করতে পারায় পরিবার নিয়ে গরমেই চলে এসেছি। সারা দেশেই তো গরম। এখানে সাগরের সান্নিধ্যে এসে গরম তাড়ানো যাচ্ছে। সঙ্গে হোটেল ভাড়াও তুলনামূলক কম পাচ্ছি। আমার বন্ধুদেরও এ সময়ে কক্সবাজার আসতে বলেছি।

ট্যুরস অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) সভাপতি তোফায়েল আহমেদ বলেন, পাঁচ শতাধিক হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউস ছাড়াও রেস্তোরাঁ, ওয়াটার ও বিচ বাইক, কিটকট, শামুক-ঝিনুক, শুঁটকি, বার্মিজ পণ্য বিক্রিসহ কয়েক লাখ মানুষ সরাসরি পর্যটন সেবা সংশ্লিষ্ট ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। পর্যটক সমাগম বাড়লে তাদের আয়ের পথও সুগম হয়। ঈদের পর হতে কমবেশি পর্যটক উপস্থিত থাকায় হোটেল-রেস্তোরাঁ, মার্কেটের ব্যবসায়ী ও হকাররা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে।

কক্সবাজার হোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, আগে পর্যটকরা বুকিং দিয়ে কক্সবাজারে আসত। ট্রেন চালু হওয়ার পর হতে কক্সবাজার পৌঁছে রুম দেখে বুকিং দিচ্ছে। গত ১২, ১৩ ও ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ভালোই ব্যবসা হয়েছে। কিন্তু ১৫ এপ্রিল থেকে ব্যবসায় অন্ধকার নামবে বলে ভেবেছিল ব্যবসায়ীরা। কিন্তু উল্লেখ করার মতো পর্যটক গরমেও কক্সবাজার আসছেন।

কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম ডালিম বলেন, পর্যটন সংশ্লিষ্টদের আয়-ব্যয় সমান্তরাল। দুদিনের ব্যবসায় এখানে টিকে থাকা কষ্টকর। রমজানে কোনো ব্যবসা-ই হয়নি। তবে, ঈদের পর দুদিন পর্যটকে ঠাঁসা ছিল কক্সবাজার। এরপর হতে, প্রায় প্রতিদিনই কমবেশি পর্যটক উপস্থিতি রয়েছে। এতে বিনিয়োগ পুরো না উঠলেও নিয়মিত খরচটা পোষানো সম্ভব হবে।

কক্সবাজারের তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, ভ্রমণে সিদ্ধহস্ত পর্যটকরা নিরাপত্তা, সেবা, বুফে ব্রেকফাস্ট, ডিনারসহ অন্য সুযোগের কারণে তারকা হোটেল উঠেন। গরম ও ঈদের পর হতে, বিশেষ ছাড়ে রুম পাচ্ছেন পর্যটকরা। ঈদ ও বাংলা নববর্ষ মিলিয়ে হোটেলে আমরা বৈশাখী মেলা ও জলের গান শিল্পী গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করেছি। এটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার পাবার পর পর্যটকদের আগমন চলমান রয়েছে।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, কক্সবাজারে পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউসে ২৫ হাজারের মতো কক্ষ রয়েছে। ঈদে একদিনে আবাসন থেকে আয় হয়েছে প্রায় ৯-১০ কোটি টাকা। পরিবহন, রেস্তোরাঁ ও অন্য পর্যটন অনুষঙ্গের সেবা মূল্য এসেছে ২০-২৫ কোটি টাকার মতো। এ হিসাবে ঈদ-নববর্ষের ছুটিতে শতকোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে। এরপর হতে গরমেও প্রায় প্রতিদিন কমবেশি পর্যটক উপস্থিতি রয়েছে।

তিনি বলেন, সৈকতকে ঘিরে কক্সবাজারকে সুপরিকল্পিতভাবে সাজানো গেলে বছরজুড়েই পর্যটক সমাগম সমান্তরাল রাখা সম্ভব। এখানকার রাজস্ব আয়ে রাষ্ট্রের অর্থনীতিতে সমৃদ্ধি আসত বলেও মত তার।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আপেল মাহমুদ বলেন, আগের মতো-ঈদ ও নববর্ষ ছুটিতে ব্যাপক পর্যটক সমাগম মাথায় রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি ছিল আমাদের। যা এখনো বিদ্যমান। সৈকতে ওয়ান-স্টপ সার্ভিস চালু করেছি আমরা। বিপদাপন্ন পর্যটকরা একটি বাটন টিপেই সেবা নিশ্চিতের সুযোগ পাচ্ছেন। পর্যটকের নিরাপত্তা ও সেবায় সার্বক্ষণিক টহল রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. ইয়ামিন হোসেন জানান, ঈদ-নববর্ষের মতো না হলেও প্রতিদিনই কমবেশি পর্যটক উপস্থিতি রয়েছে। হোটেলে-মোটেল ও রেস্তোরাঁয় অতিরিক্ত টাকা আদায় কিংবা অন্যান্য ক্ষেত্রে হয়রানি রদ এবং পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিতে মাঠে রয়েছে জেলা প্রশাসন। ঈদের পর হতে এখনো উল্লেখযোগ্য কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

কক্সবাজার,সমুদ্র সৈকত,পর্যটন নগরী,পর্যটক

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close