• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল

প্রকাশ:  ২৪ মার্চ ২০১৮, ১২:৫৩
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

শিল্প-কারখানা স্থাপন ও সেগুলোয় উৎপাদন শুরুর পথে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল। এটি উন্নয়নে চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। এরই মধ্যে ৯৯ শতাংশ নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। শুরু হয়েছে প্লট বুকিংয়ের প্রক্রিয়া। এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্লট নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে পাঁচটি বিদেশী প্রতিষ্ঠান। তারা বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে যাচ্ছে। আগামী বছরের মধ্যেই মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল বিনিয়োগকারীদের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত করা ও উৎপাদন শুরুর লক্ষ্য রয়েছে কর্তৃপক্ষের।

শিল্প খাতের দ্রুত বিকাশ, উৎপাদন ও রফতানি বৃদ্ধি ও বহুমুখীকরণ এবং কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে বেজা। এর উন্নয়নের জন্য এরই মধ্যে ডেভেলপার হিসেবে শিকদার গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান পাওয়ারপ্যাক ইকোনমিক জোন লিমিটেডকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ২০১৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি কোম্পানিটিকে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে বেজা। এর তিনদিনের মাথায় ২৮ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সম্পর্কিত খবর

    ২০৫ একর জমিতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে গড়ে উঠছে মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল। আগামী পাঁচ দশক এর উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকবে পাওয়ারপ্যাক ইকোনমিক জোন লিমিটেড। এরই মধ্যে এর ৯৯ শতাংশ নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। প্রায় ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রশাসনিক ভবন, সীমানা প্রাচীর, পানি সরবরাহ ব্যবস্থা, রিজার্ভ ট্যাংক, সংযোগ সড়ক, সেতু, বিদ্যুতের ৩৩/১১ কেভি রিসিভিং সাব-স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। আনসার ক্যাম্প ও অভ্যন্তরীণ সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে। এছাড়া চলছে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য প্লট নির্মাণের কাজ। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সব কার্যক্রম নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

    পাওয়ারপ্যাক ইকোনমিক জোন লিমিটেডের প্রকৌশলী (সিভিল) মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, এ অর্থনৈতিক জোনে একটি অয়েল টার্মিনাল, ১০০ ও ১৬০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার দুটি বিদ্যুৎকন্দ্র, তিনটি ইস্পাত কারখানা এবং কনটেইনার লোড-আনলোডের জন্য একটি আইসিডি টার্মিনাল স্থাপনের রূপরেখা চূড়ান্ত করেছে শিকদার গ্রুপ। এছাড়া পাঁচটি বিদেশী বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান প্লট বুকিংয়ের জন্য এগিয়ে এসেছে। তারা হলো— লাফস গ্যাস, এসএমপিসি, নাগা লিমিটেড, হিন্দুস্তান ইউনিলিভার ও বার্জার পেইন্টস লিমিটেড। প্রাথমিকভাবে এখানে ১৬টি প্লট নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

    সংশ্লিষ্টদের দাবি, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের পরিচালনায় এটি হবে একটি বিশ্বমানের অর্থনৈতিক অঞ্চল। এখানে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের টানতে পারলে মোংলা বন্দরের কর্মচাঞ্চল্যও বাড়বে। দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখা ছাড়াও এটি মোংলাসহ উপকূলীয় এলাকার হতদরিদ্র মানুষের জন্য তৈরি করবে ব্যাপক কর্মসংস্থান।

    শিকদার গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান বিএম কামাল হোসাইন বলেন, নির্মাণকাজ শেষে পুরোপুরি চালু হলে দেশীয় ছাড়াও জাপান, কোরিয়া, ভারত, পানামা, তুরস্ক, ইউক্রেন, ডেনমার্ক, সুইডেন, ইতালি, চীন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিনিয়োগকারীরা এখানে লগ্নি করবেন।

    মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চলের অবস্থানগত সুবিধাও অনেক। মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স নুরু অ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী এইচএম দুলাল জানান, মোংলা বন্দর ও ইপিজেডের অবস্থান এর পাশেই। এটি খুলনা বিভাগীয় শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার, রামপালের ফয়লায় নির্মাণাধীন খানজাহান আলী বিমানবন্দর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার, যশোর বিমানবন্দর থেকে প্রায় ১০৫ কিলোমিটার ও রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ২৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হলে ঢাকার সঙ্গে দূরত্ব আরো কমে যাবে। সেক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা আরো বেশি আগ্রহী হয়ে উঠবেন।

    মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর একেএম ফারুক হাসান বলেন, নির্মাণাধীন পদ্মা সেতু, রামপাল তাপ বিদ্যুৎকন্দ্র, খানজাহান আলী বিমানবন্দর, মোংলা-খুলনা রেললাইনের পাশাপাশি মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হলে মোংলা বন্দরের গুরুত্বও অনেক বেড়ে যাবে। ফলে বন্দরের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হবে। সে চাপ মোকাবেলায় এখন থেকেই বন্দরের আধুনিকায়নসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

    বেজার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাম মণ্ডল বলেন, নৌ, সড়ক ও আকাশপথে যোগাযোগের সুবিধা বিবেচনায় রেখে মোংলা বন্দর এলাকায় বিশ্বমানের অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপিত হতে যাচ্ছে। মোংলা বন্দরের জেটির নিকটবর্তী হওয়ায় এর বেশ গুরুত্ব ও সম্ভাবনা রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধার কারণে এখানে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হবেন।

    সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মোংলা বন্দর ও সুন্দরবনের পরিবেশগত সুরক্ষার সার্বিক দিক বিবেচনায় রেখেই অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প-কারখানা স্থাপনের ছাড়পত্র দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। আর বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

    ওএফ

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close